জুমবাংলা ডেস্ক : প্রথমে বিদেশগামী যাত্রীদের ফ্লাইটের আগে তাদের ফোন নম্বরসহ এয়ারলাইন্সের নাম ও সময়ের তথ্য সংগ্রহ করে একটি ‘প্রতারক’ চক্র। পরে কর্তৃপক্ষের পরিচয়ে স্বজনদের মোবাইল নম্বর নেয়। নম্বর পেয়ে যাত্রীর পরিচয়ে ‘টিকেট হারিয়ে গেছে’ বলে স্বজনদের কাছে ভাঙা ভাঙা গলায় পরবর্তী ফ্লাইটের জন্য টাকা চেয়ে বসে চক্রটি।
এমন অভিনব প্রতারণার শিকার হয়ে সম্প্রতি একটি পরিবার অভিযোগ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। তাদের দেওয়া তথ্যে বিদেশগামী যাত্রীর স্বজনদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার রাতে শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকা থেকে মো. জাবেদ নামে ৪৭ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জিয়াউল হক জানান। জাবেদের বাড়ি গাজীপুর সদরের তরতপাড়ায়।
জিয়াউল হক বলেন, “জাবেদ ভিন্নধর্মী একজন প্রতারক। কর্মসংস্থানের উদ্দেশে বিদেশ যাওয়া যাত্রীরা তার মূল টার্গেট। বিমানবন্দর এলাকায় ঘোরাঘুরি করে এসব যাত্রীদের ফোন নম্বর এবং বিমানের নাম ও সময় কৌশলে নিয়ে নেয়।
“এরপর টার্গেট যাত্রীর গতিবিধি খেয়াল রাখে। যাত্রী বিমানে ওঠার সময় প্রতারক জাবেদ তাকে ফোন করে বলে সে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্স থেকে বলছে এবং কোনো সমস্যা আছে কিনা জানতে চায়। কোনো সমস্যা নেই জানালে প্রতারক ব্যক্তি যাত্রীর কাছ থেকে তার পরিবারের কারও ফোন নাম্বার কৌশলে চেয়ে নেন। তাকে বলেন যে বিমানে ওঠার পর নেটওয়ার্ক থাকে না, ফলে কথা বলার সুযোগ নেই। ‘আপনি ভালোভাবে যাচ্ছেন এটা আপনার পরিবারকে জানিয়ে দেব’ বলে ফোন নাম্বার নেয়।”
অনেক যাত্রীই সরল বিশ্বাসে ফোন নম্বর দিয়ে দেয় জানিয়ে এপিবিএন কর্মকর্তা বলেন, “যাত্রী নির্ধারিত বিমানে উঠেছে এবং বিমানটি ছেড়েছে নিশ্চিত হওয়ার পর যাত্রীর কাছ থেকে পাওয়া স্বজনের নম্বরে ফোন করে জাবেদ বলেন, ‘যাত্রীর টিকেট হারিয়ে গেছে, বিদেশ যেতে পারছে না। এখন দ্রুত টাকা পাঠালে পরের বিমানে টিকিট কেটে যেতে পারবে।
“এ সময় প্রতারক কৌশল নিয়ে বলে, ‘এই নেন আপনার স্বজনের সঙ্গে কথা বলেন’; পরে ওই প্রতারকই যাত্রীর কণ্ঠ নকল করে কান্নাজড়িত অস্পষ্ট স্বরে টিকেট হারিয়ে যাওয়ার গল্প বলে টাকা পাঠানোর জন্য অনুরোধ করে।”
এরপর ওই যাত্রীর স্বজন নির্ধারিত অংকের টাকা প্রতারকের দেওয়া নম্বরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাঠায়। যাত্রীরা বিদেশ পৌঁছে যখন স্বজনদের ফোন করে জানায় যে সে নিরাপদে পৌঁছেছে, কোনো সমস্যা হয়নি, তখন বিষয়টি স্পষ্ট হয়। তখন প্রতারকের নম্বরে ফোন করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
জিয়াউল বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে এ কাজ করে আসা জাবেদের বিমানবন্দর এলাকায় ছয় থেকে সাতজনের একটি গ্যাং রয়েছে। এটা জাবেদ গ্যাং বলে পরিচিত।
সম্প্রতি এ ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন শফিকুল ইসলাম নামে এক যাত্রীর পরিবার। তিনি সিঙ্গাপুরের যাচ্ছিলেন। প্রতারকের হাতে তার স্বজন প্রায় ৬৮ হাজার টাকা তুলে দেন।
ওই পরিবারের অভিযোগ পাওয়ার পরই টানা অনুসন্ধানে নেমে জাবেদকে চিহ্নিত এবং গ্রেপ্তার করে এপিবিএন।
এর আগেও একই ধরনের প্রতারণার অভিযোগে জাবেদকে চারবার গ্রেপ্তার করা হয়েছিল জানিয়ে জিয়াউল হক বলেন, “বিভিন্ন মেয়াদে তার সাজাও হয়েছে। সাজাভোগ বা জামিন পেয়ে আবার একইভাবে সে এবং তার চক্রের সদস্যরা এ ধরনের প্রতারণার সঙ্গে জড়ায়।”
চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি। সূত্র : বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।