জুমবাংলা ডেস্ক : বগুড়া সিটি কর্পোরেশন গঠনের উদ্যোগ নতুন কিছু নয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে ২০২৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রাথমিক প্রস্তাবনা পাঠানোর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। এরপর ১০ এপ্রিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিটি কর্পোরেশন-২ শাখা গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অনুমতি দেয়।
Table of Contents
জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজার স্বাক্ষরিত গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বগুড়া পৌরসভার ২১টি ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত এলাকাগুলো নিয়ে নতুন সিটি কর্পোরেশন গঠিত হবে। স্থানীয় জনগণকে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে আপত্তি বা মতামত প্রদান করতে বলা হয়েছে। এই মতামত যাচাই-বাছাই করে ৪৫ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
বর্তমানে বগুড়া পৌরসভা প্রায় ৭০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বিস্তৃত এবং এখানে বসবাস করছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ। বাংলাদেশের অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনের তুলনায় আয়তন ও জনসংখ্যায় বগুড়া ইতোমধ্যেই অনেক বড়।
গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তার ধারাবাহিকতায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে আপত্তি নিষ্পত্তির কাজ চলবে। এরপর প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির অনুমোদন পেলে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে গেজেট আকারে বগুড়া সিটি কর্পোরেশন গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
(বিস্তারিত জানতে: বিশ্ববাজারের প্রভাব)
বগুড়া পৌরসভার ইতিহাস ও উন্নয়ন
বগুড়া পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৭৬ সালে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম প্রাচীন পৌরসভা হিসেবে বিবেচিত। ১৯৮১ সালে এটি ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভার মর্যাদা পায়। সময়ের সাথে সাথে পৌরসভার আয়তন ও জনসংখ্যা উভয়ই বেড়ে চলে।
২০০৪ সালে এর আয়তন বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৬৯.৫৬ বর্গকিলোমিটার। বর্তমানে ২১টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত বগুড়া পৌরসভায় রয়েছে প্রায় ১৩৪০ কিলোমিটার সড়ক নেটওয়ার্ক, যার মধ্যে পাকা রাস্তা প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার এবং কাঁচা রাস্তা ২৮৬.৬৮ কিলোমিটার।
এছাড়াও, বগুড়ার অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়েছে। শহরটির শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা ও কৃষিখাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। তাছাড়া বগুড়া এখন দেশের অন্যতম শিল্প শহর হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।
বগুড়া সিটি কর্পোরেশন হলে উন্নয়ন বরাদ্দ এবং কর্মপরিকল্পনায় অনেক পরিবর্তন আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তখন উন্নয়ন কর্মসূচির আওতা বৃদ্ধি পাবে, এবং পৌরবাসীর জীবনযাত্রার মান আরও উন্নত হবে।
(আরও জানুন: স্বর্ণের বাজার পরিবর্তন)
কেন বগুড়া সিটি কর্পোরেশন হওয়া জরুরি?
১. জনসংখ্যা ও আয়তন বৃদ্ধি: বর্তমানে বগুড়ার জনসংখ্যা প্রায় ১০ লাখ, যা সিটি কর্পোরেশন গঠনের মানদণ্ডের অনেক উপরে।
২. অর্থনৈতিক গুরুত্ব: বগুড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক ও শিল্প শহর। দেশের খাদ্যভাণ্ডার হিসেবেও এর খ্যাতি রয়েছে।
৩. সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনা: সিটি কর্পোরেশন হলে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন আরও সুসংহত হবে। পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং নগর পরিবহন ব্যবস্থায় আধুনিকায়ন সম্ভব হবে।
৪. প্রশাসনিক সুবিধা বৃদ্ধি: পৌরসভার চেয়ে সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসনিক কাঠামো আরও শক্তিশালী। এতে নাগরিক সেবা আরও দ্রুত এবং মানসম্পন্ন হবে।
৫. রাজনৈতিক স্বীকৃতি ও মর্যাদা: দীর্ঘদিন ধরে দাবি থাকলেও রাজনৈতিক কারণেই বগুড়া সিটি কর্পোরেশন হয়নি বলে অভিযোগ ছিল। বর্তমানে সেই প্রতিকূলতা কেটে গিয়ে বগুড়াবাসী তাদের প্রাপ্য মর্যাদা পেতে যাচ্ছে।
৬. অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি: নতুন সিটি কর্পোরেশন হলে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করার সম্ভাবনাও বাড়বে।
বগুড়া সিটি কর্পোরেশন গঠনের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ
সীমানা নির্ধারণের সমস্যা: কোন কোন এলাকা নতুন সিটি কর্পোরেশনের আওতায় আসবে, তা নিয়ে কিছুটা বিতর্ক থাকতে পারে।
নাগরিক সেবার মান বজায় রাখা: দ্রুত সম্প্রসারণের ফলে নাগরিক সেবার মান বজায় রাখার জন্য সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ প্রয়োজন।
অতিরিক্ত অর্থায়ন প্রয়োজন: নতুন সিটি কর্পোরেশন গঠনের পর পরিকাঠামো উন্নয়ন ও জনসেবা পরিচালনার জন্য বড় অংকের বাজেট প্রয়োজন হবে।
(উল্লেখ্য: বিস্তারিত তথ্যের জন্য Wikipedia)
আরও পড়ুন: বাউবি বিএ-বিএসএসের পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাসের হার ৭১.৩৩
FAQs (সচরাচর জিজ্ঞাস্য)
১. বগুড়া কবে সিটি কর্পোরেশন হবে?
গণবিজ্ঞপ্তি জারির পর ৪৫ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাঠানো হবে। প্রশাসনিক অনুমোদনের পর প্রজ্ঞাপন জারি করে বগুড়া সিটি কর্পোরেশন গঠন করা হবে।
২. বগুড়া সিটি কর্পোরেশনের আয়তন কত?
বর্তমানে বগুড়া পৌরসভার আয়তন প্রায় ৭০ বর্গকিলোমিটার, যা সিটি কর্পোরেশন গঠনের জন্য যথেষ্ট।
৩. বগুড়া পৌরসভা কবে প্রতিষ্ঠিত হয়?
বগুড়া পৌরসভা ১৮৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, যা বাংলাদেশের প্রাচীন পৌরসভাগুলোর একটি।
৪. বগুড়া সিটি কর্পোরেশন গঠনের ফলে কি সুবিধা হবে?
নগর ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন, নাগরিক সেবা উন্নতকরণ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে।
৫. কারা আপত্তি জানাতে পারবেন?
বগুড়ার স্থানীয় বাসিন্দারা আগামী ৩০ দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসকের কাছে মতামত বা আপত্তি জানাতে পারবেন।
৬. বগুড়া সিটি কর্পোরেশন দেশে কততম হবে?
বগুড়া সিটি কর্পোরেশন গঠিত হলে এটি হবে দেশের ১৩তম সিটি কর্পোরেশন।
বগুড়া সিটি কর্পোরেশন গঠন নিঃসন্দেহে বগুড়াবাসীর জন্য একটি গর্বের বিষয়। অবকাঠামো, অর্থনীতি ও নাগরিক সেবা খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এই সিদ্ধান্ত। বগুড়া সিটি কর্পোরেশন হয়ে ওঠার মাধ্যমে পুরো উত্তরাঞ্চলের উন্নয়নের নতুন অধ্যায় শুরু হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।