বগুড়ার লাল মরিচ, ঝালের
জুমবাংলা ডেস্ক : বগুড়ার লাল মরিচ দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশ বিভূঁইয়ে পাড়ি দিয়েছে। বগুড়ার মরিচের ঝালের কদর এখন বিশ্ব জুড়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেন অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের পরিচিতি এনে দিয়েছে বগুড়ার লাল মরিচ। বিদেশীরা ঝাল বেশি খায় না। তবে বাঙালিদের কাছ থেকে ঝাল খাওয়া শিখেছে। এদিকে লাল মরিচের গুঁড়া ‘কনজুমার গুডসে’ সুনাম কুড়িয়েছে।
গত দশ বছরে বগুড়ার যমুনা তীরে ও চরগ্রামে মরিচের আবাদ কয়েকগুণ বেড়েছে। লাল মরিচের ঝালের তীব্রতার ঝাঁজের কারণে আবাদ ও পরিচর্যায় পুরুষ কৃষক ও শ্রমিকের চেয়ে নারী কৃষক ও শ্রমিক বেশি। বগুড়ার নারী লাল মরিচের আবাদকে এগিয়ে নিয়েছে। নদী শুকিয়ে চর জেগে উঠলে কৃষক বাদামের আবাদ করত। এখন বাদামের পাশাপাশি মরিচের আবাদ করছে। বগুড়ার ঝাল মরিচের কথা দেশের প্রতিটি এলাকার মানুষ জানে। অনেক সময় মরিচের ঝাল ব্যক্তি আচরণ পায়। বগুড়ার জেলার পণ্য পরিচিতিতে যে ব্র্যান্ডিংগুলো আছে তার মধ্যে লাল মরিচ অন্যতম অবস্থানে। চাষি জহির আলী বললেন, মরিচে লাভ বেশি। কৃষিপঞ্জি অনুযায়ী খারিফ-১, ২, ৩ মৌসুমে মরিচের আবাদ হয়।
মাটির গুণাগুণে বগুড়ার মরিচের খ্যাতি প্রাচীন কালের। অন্য এলাকার সাতটা মরিচে যত ঝাল তারচেয়ে অনেক বেশি ঝাল বগুড়ার একটি মরিচে। বগুড়ায় মরিচের স্থানীয় নাম ‘পত্ত্যে’। অতীতে জনসংখ্যা কম থাকায় মরিচের আবাদ বেশি হতো না। অল্প আবাদের উৎপাদনে পরিবারের ভর বছরের জোগান হয়ে বিক্রিও করা যেত। বগুড়ায় মরিচের আবাদ সবচেয়ে বেশি হয় জেলার পূর্বাংশের যমুনা ও বাঙালী নদী বেষ্টিত সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, ধুনট, গাবতলী ও শিবগঞ্জ উপজেলা এলাকায়। সাধারণ মরিচের একর প্রতি ফলন ১০ থেকে ১২ মেট্রিক টন। বর্তমানে মরিচের হাইব্রিড জাত এসেছে। এর সঙ্গে অধিক ঝালের এক ধরনের মরিচ উৎপাদিত হচ্ছে। স্থানীয়রা অধিক ঝলের এই মরিচের নামকরণ করেছে ‘কারেন্ট মরিচ’। এই জাত কোত্থেকে এসেছে তা কেউ বলতে পারে না। মরিচের বীজ ব্যবসায়ীরা জানান, কারেন্ট মরিচ নামেই তারা বিক্রি করছেন। গৃহিণীরা জানান, ভর্তাভাজি ও তরকারিতে ঝালের জন্য কারেন্ট মরিচ ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হয়। সামান্য তারতম্য হলে তরকারি ভর্তা খাওয়া যায় না।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, নিত্য বছর যমুনায় চর জেগে ওঠায় বগুড়ায় মরিচের আবাদ বাড়ছে। গত মৌসুমে সারিয়াকান্দিতে মরিচের আবাদ হয়েছিল ১০ হাজার ৩৩৫ হেক্টরে। চলতি মৌসুমে আবাদের টার্গেট আরও বেশি করা হয়। এলাকার কৃষক খরিফের শেষ মৌসুমে মরিচ আবাদ বাড়িয়ে দিয়েছে। আশা করা ২ লাখ মট্রিক টনেরও বেশি মরিচ উৎপাদিত হবে শুধু যমুনা তীরের সারিয়াকান্দির চর এলাকায়। এ ছাড়াও শিবগঞ্জ উপজেলায় মরিচের আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ৫শ’ হেক্টরে। বগুড়ার গাবতলীর কলাকোপা এলাকার ধনাঢ্য এক ব্যক্তি মরিচের আবাদ করে বিপুল অর্থের মালিক হয়েছিলেন। পঞ্চাশের দশকের মধ্যভাগে তিনি হেলিকপ্টার কিনতে গিয়েছিলেন। লাল মরিচের সুনামে ইংরেজি নামে (রেড চিলিজ) বগুড়া ও কয়েকটি জেলায় বিলাসবহুল আবাসিক হোটেল ও রেস্তোরাঁর নামকরণ হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।