জুমবাংলা ডেস্ক : বদলে যাচ্ছে দেশের চার বিমানবন্দর। ঢাকার হযরত শাহজালাল, চট্টগ্রাম শাহ আমানত, সিলেট ওসমানি বিমানবন্দর এবং কক্সবাজার বিমানবন্দরের উন্নয়ন ও নিরাপত্তায় বর্তমানে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকার কাজ চলছে। আগামী বছরের শেষ নাগাদ প্রকল্পগুলোর কাজের সমাপ্তি ঘটবে। এতে যুক্ত করা হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। দেশের বিমানবন্দর সেবায় আসছে আধুনিক প্রযুক্তি। প্রাথমিকভাবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চালু হচ্ছে ডিজিটাল এয়ারপোর্ট সার্ভিস। বিমান উড্ডয়নের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ভবন নির্মাণে উচ্চতা নির্ধারণ করে থাকে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। ডিজিটাল সেবা চালু হলে এটি অ্যাপসের মাধ্যমে নির্ধারণ হবে। ডিজিটাল এয়ারপোর্ট সার্ভিস এবং ভবনের উচ্চতা নির্ধারণে পৃথক অ্যাপস ইতোমধ্যে প্রস্তুত করেছে বেবিচক।
এভিয়েশন খাতের মেগা প্রকল্প হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হবে ২০২৩ সালের অক্টোবরে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের এই টার্মিনালটি উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান। এই প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে প্রকল্পের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ। এখন চলছে অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা আর টার্মিনাল পরিচালনা কর্তৃপক্ষ নিয়োগের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া। এটি শুরু হলে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত শাহজালালের যাত্রী আর কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের চাহিদা পূরণ হবে। ২৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি শুরু হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, ২০২৩ সালের মধ্যে সব প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। এতে পালটে যাবে দেশের বিমানবন্দরগুলোর অবকাঠামোগত চেহারা। প্রতিটি বিমানবন্দর হবে আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন।
বিমানবন্দর দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলেছে, প্রতিটি কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রতিটি কেনাকাটায় দুর্নীতি ও অনিয়মকে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হয়েছে। ইকুইপমেন্ট ও নিরাপত্তা সামগ্রীর মান ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড করা হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প (প্রথম পর্যায়) বাস্তবায়ন হলে শাহজালালের যাত্রী হ্যান্ডেলিং ক্যাপাসিটি ১০ মিলিয়ন থেকে ২২ মিলিয়নে দাঁড়াবে। কার্গো হ্যান্ডেলিং ২ লাখ ২০ হাজার টন থেকে ৭ লাখ টনে উন্নীত হবে। এ ছাড়া টার্মিনাল ইকুইপমেন্ট ও সিকিউরিটি ইকুইপমেন্টসহ নতুন প্যাসেঞ্জার বিল্ডিং (থার্ড টার্মিনাল-২৭২০০০ বর্গমিটার) নতুন কার্গো কমপ্লেক্স ৬৩ হাজার বর্গমিটার, র্যাপিড এক্সিট টেক্সিওয়ে ১৯ হাজার ৫০০ বর্গমিটার, অ্যাপ্রোন ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটার ও কানেক্টিং টেক্সিওয়ে ৬৬ হাজার ৫০০ বর্গমিটার, টানেলসহ বহুতল কারপার্কি ৬২ হাজার বর্গমিটার, যন্ত্রপাতিসহ ফায়ার ফাইটিং স্টেশন ৪ হাজার বর্গমিটার, এন্ট্রি ও এক্সিট র্যাম্পসহ রোড নেটওয়ার্ক, ওয়াটার সাপ্লাই সিস্টেম, স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট, ইনটেক পাওয়ার প্লান্ট, কার্গো ইকুইপমেন্ট ক্রয়, এয়ারফিল্ড গ্রাউন্ড লাইটিং সুবিধা তৈরি হবে। ৬০৫ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ হবে। চট্টগ্রাম শাহ আমানতের ৫৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির ৩০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে ফুল লোডেড বোয়িং ৭৭৭ বিমান রানওয়েতে উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে পারবে। প্রকল্পের আওতায় রানওয়ের শক্তি (পিসিএন) ৬৬ থেকে ৯১-তে উন্নীত হবে। এ ছাড়া ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে বিমানবন্দরের বিস্তারিত ড্রয়িং সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, ড্রয়িং-ডিজাইন, ব্যয় প্রাক্কলন ও মাস্টারপ্ল্যান প্রস্তুতের কাজ চলছে। সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরের প্রকল্পের আওতায় ৪৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে রানওয়ে ও টেক্সিওয়ের শক্তি ৪১ পিসিএন থেকে ৯০ পিসিএনে উন্নীত করা হচ্ছে। কাজের ৯৯ শতাংশ শেষ হয়ে গেছে। এটি বাস্তবায়ন হলে এই বিমানবন্দরে পুরো দমে বোয়িং-৭৭৭ উড়োজাহাজ অবতরণ করতে পারবে। ইতোমধ্যে এই রুটে লন্ডন-সিলেট ফ্লাইট চালু হয়ে গেছে। কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প (প্রথম পর্যায়-তৃতীয় সংশোধনী) : ২০১৫ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পে বিমানবন্দরের রানওয়ে ৬ হাজার ৭৭৫ ফুট দৈর্ঘ্যকে ৯ হাজার ফুটে উন্নীত, সোল্ডারসহ ১৫০ ফুট প্রস্থকে ২০০ ফুটে উন্নীতকরাসহ রানওয়ে লাইটিং ব্যবস্থার উন্নতি করা হচ্ছে।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবন প্রকল্প : ২৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটির ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এর আওতায় ১০ হাজার ৯১৩ বর্গমিটার টার্মিনাল ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। ঝিনুক আকৃতির এই ভবনটি খুবই দৃষ্টিনন্দন। এতে আন্তর্জাতিক মানের সব সুযোগ-সুবিধা থাকছে। কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্প : ৩ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি ২০১৯ সালে শুরু হয়। ২০২১ সালের আগস্ট মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর আওতায় রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৯ হাজার ফুট থেকে ১০ হাজার ৫০০ ফুটে উন্নীত করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এই বিমানবন্দরে পূর্ণ লোডে সুপরিসর বিমান চলাচল করতে পারবে। এতে স্থানীয় যাত্রীর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ট্যুরিস্ট মুভমেন্ট বাড়বে। এতে বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়বে। এ ছাড়া ১৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে কানেকটিং টেক্সিওয়ে ও প্যারালাল টেক্সিওয়ে নির্মাণ বর্তমানে চলমান রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।