জুমবাংলা ডেস্ক : চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ৬ দিন পর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তবে পানি নেমে গেলেও দেখা যাচ্ছে ক্ষতচিহ্ন। দেখলে মনে হবে যেন যুদ্ধবিদ্ধস্ত জনপদ। আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো অবস্থান করছেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ।
টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ফেনী নদীর পানির উচ্চতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বুধবার থেকে এখানকার ১১টি ইউনিয়নের প্রায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি ছিল। যা ছিল স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা। এই অঞ্চলে বিগত ৭০ বছরেও এমন পানি দেখেনি মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমবার সকাল থেকে ফেনী নদী তীরবর্তী উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের জয়পুর পূর্বজোয়ার, অলিনগর, পশ্চিম জোয়ার, বৈরয়া, কাটাগাং, ছত্তরুয়া, হিঙ্গুলী ইউনিয়নের মধ্যম আজমনগর, আজম নগর, পশ্চিম হিঙ্গুলী, জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের পরাগলপুর, গোবিন্দপুর, তাজপুর, ইমামপুর, ধুম ইউনিয়নের উত্তর মোবারকঘোনা, উত্তর ধুম, নাহেরপুর, মৌলভীবাজার, গোলকেরহাট, মিনা বাজার, আনন্দ বাজার, শুক্রবারইয়ারহাট এলাকায় পানি কমেছে। তবে ওচমানপুর ইউনিয়নের মরগাং, পাতকোট, সাহেবপুর, আজমপুর এলাকায় এখনো কোমর সমান পানি রয়েছে। এছাড়া ইছাখালী, কাটাছড়া, মিঠানালায় এখনো কোমর পরিমাণের চেয়ে বেশি পানি দেখা গেছে।
পানি নেমে যাওয়ায় মিরসরাইয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘরবাড়ি ও রাস্তা-ঘাটের বেহাল দশা ফুটে উঠছে। একচালা টিনের ঘর, মাটির ঘর, সেমিপাকা ঘর, কালভার্ট, গ্রামীণ সড়ক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি জমে থাকায় গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে বিভিন্ন গ্রামে।
ভাঙন দেখা দিয়েছে মিরসরাইয়ের গুরুত্বপূর্ণ সিডিএসপির বাঁধে। বঙ্গোপসাগরের ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে ১৯৯৪ সালে মিরসরাই উপকূলীয় এলাকায় নির্মাণ করা হয় চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রজেক্টের (সিডিএসপি) বাঁধ। ১১.৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই বাঁধ সংস্কার না হওয়ায় অনেকদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে। গুরুত্বপূর্ণ এই বাঁধে মুহুরী প্রজেক্ট স্লুইচ গেটের দক্ষিণ পাশে এবার ফাটল দেখা দিয়েছে।
মিরসরাই মুহুরী প্রজেক্ট মৎস্যচাষি সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বলেন, মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায় অবৈধভাবে মৎস্য প্রকল্প করায় পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর ফলে সিডিএসপির বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বাঁধ সংস্কারে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা না নিলে ঘটতে পারে বড় ধরনের বিপর্যয়।
তবে সিডিএসপি বাঁধে ফাটল পানির স্রোতের জন্য নয় বলে দাবি করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন। তিনি বলেন, ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যে কেউ অসাধু উদ্দেশ্যে সিডিএসপি বাঁধ কেটে দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামতের কাজ পানি উন্নয়ন বোর্ড শুরু করেছে, আগামী ২ মাস সময় লাগবে পুরোপুরি মেরামতে।
ধুম ইউনিয়নের বাসিন্দা সরোয়ার হোসেন রুবেল বলেন, আমাদের গ্রামে এখনো সাড়ে ৩ ফুট পানি রয়েছে। পানিবন্দি মানুষগুলো বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।
হিঙ্গুলী ইউনিয়নের আজমনগর এলাকার ওমর ফারুক বলেন, আমাদের ঘরে এখন পানি নেই, উঠানে সামান্য পানি রয়েছে। তবে বসতঘরের যে পরিস্থিতি আগামী এক সপ্তাহেও ওঠা যাবে না।
ইছাখালী ইউনিয়নের টেকেরহাট এলাকার বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান, ধীরে ধীরে পানি কমছে। তবে পুরোপুরি পানি কমতে আরও সময় লাগবে। মানুষকে আরও কয়েকদিন আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে হবে। বাড়ি ঘরের অনেক ক্ষতি হয়েছে।
করেরহাট ইউনিয়নের বাসিন্দা ইমরুল আলম জানান, আমাদের ইউনিয়নে প্রায় ৫ ফুট পানি উঠে যায়। সোমবার থেকে বিভিন্ন গ্রামে পানি নামতে শুরু করে। এখন গ্রামের সড়ক ও কাঁচা ঘরগুলোর ক্ষতির ভয়াবহতা দৃশ্যমান হচ্ছে।
এদিকে সোমবারও উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো খাবার, রান্না করা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওরস্যালাইন ও ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে। তবে ভেতরের অনেক আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত ত্রাণ পাওয়া যাচ্ছে না বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন।
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা প্রশাসক মাহফুজা জেরিন বলেন, ফেনী নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। সোমবার সকাল থেকে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। অনেক ইউনিয়নে পানি নেমে গেছে। উপজেলার ওচমানপুর, ইছাখালী, কাটাছরা ইউনিয়নের আংশিক এলাকায় এখনো পানি রয়েছে। আশা করছি বৃষ্টি না হলে আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে পানি নেমে যাবে। উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো প্রায় ১০ হাজার মানুষ আশ্রয়ে আছেন। পানি কমাতে অনেকে আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে গেছেন। সূত্র : জাগোনিউজ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।