বিনোদন ডেস্ক : ‘প্লেব্যাক সম্রাট’ খ্যাত এন্ড্রু কিশোর দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। সঙ্গীত জীবনে তিনি চলচ্চিত্রের প্রায় ১৫ হাজার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্রসহ অসংখ্য পুরস্কার। এন্ড্রু কিশোর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থেকেও উতলা ছিলেন ফেরার জন্যে। তিনি চিকিৎসককে ডেকে বলেছিলেন, ‘আমাকে দেশে পাঠিয়ে দাও। দেশের মাটিতে গিয়ে আপনজনদের কাছে মরতে চাই আমি।’ ফিরেও এসেছিলেন শেকড়ে।
এন্ড্রু কিশোর দেশকে ভালোবাসতেন। ভালোবাসতেন এই বাংলার রূপ-প্রকৃতি। বাংলার আলো-বাতাসে বেড়ে ওঠা এন্ড্রু কিশোর শেকড় ছেড়ে যেতে চাননি কোথাও। দেশ প্রেমিক এন্ড্রু কিশোরের জীবনে এসেছিলো লোভনীয় অফার। চাইলেই তিনি মুম্বাইয়ের সংগীত জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারতেন। হয়তো বলিউডের জনপ্রিয় গায়ক হিসেবেই প্রতিষ্ঠা পেতেন রাজশাহীতে জন্মেছিলেন নেয়া এ গুণী শিল্পী। যেমনটা ঘটেছে সত্যজিৎ রায়, ঋত্মিক ঘটক, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, সুচিত্রা সেন, সাবিত্রী চ্যাটার্জিদের বেলায়।
বলিউডের মিউজিক জগতে বহুল পরিচিত নাম আরডি বর্মণ। তিনি নিজে এন্ড্রু কিশোরকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন মুম্বাইয়ে স্থায়ী হওয়ার। বলেছিলেন, নিয়মিত থাকলে ক্যারিয়ার গড়ে দেবেন এন্ড্রু কিশোরের। তার কণ্ঠে মুগ্ধ হয়েছিলেন শচীন দেব বর্মণের ছেলে রাহুল দেব বর্মণ। এন্ড্রু কিশোর আরডি বর্মণের সেই প্রস্তাব বিনয়ের সাথে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
বেশ কয়েক বছর আগে একটি সাক্ষাৎকারে এন্ড্রু কিশোর নিজেই জানিয়েছিলেন, ‘ভাবতে ভালো লাগে আমিই একমাত্র বাংলাদেশি যে আরডি বর্মণের সুরে হিন্দি গান গেয়েছি। বাংলায়ও গেয়েছি। যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘শত্রু’ যেটি বাংলায় নাম ছিলো ‘বিরোধ’, সেখানে মোট তিনটি গান আমি গেয়েছিলাম। দুটি হিন্দিতে এবং বাংলা ছবির জন্য একটি বাংলায়। ‘ইসকি টুপি উসকি সার’ নামের গানটা হিন্দিতে গেয়েছিলেন কিশোর কুমার, যার বাংলা ভার্সনটা আমি গেয়েছিলাম। বিখ্যাত গীতিকার মাজরু সুলতানপুরির লেখা ‘সুরেজ চান্দা’, ‘মে তেরি বিসমিল হু’ এই হিন্দি গান দুটি গাওয়ার পাশাপাশি বাংলা ‘মুখে বলো তুমি হ্যাঁ, ‘এর টুপি ওর মাথায়’ এবং ‘আজো বয়ে চলে পদ্মা মেঘনা’ গানগুলো আরডি বর্মণের সুরে গেয়েছিলাম। এটা সেই ১৯৮৫ সালের কথা। ছবিতে অভিনয় করেছিলেন রাজেশ খান্না ও শাবানা।’
তিনি জানান, ‘গান করতে গিয়ে আরডি বর্মণ দার স্নেহ পেয়েছিলাম আমি। মুম্বাইয়ের বান্দ্রার বাসায় তাকে প্রথম দেখি। তিনি আমাকে কখনোই নাম ধরে ডাকেননি। আদর করে ‘ঢাকাইয়া’ বলতেন। সেই সময় আরডি বর্মণের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে গেলাম। এত কাছের হয়ে গেলাম যে, আশা ভোঁসলের সঙ্গে তার কীভাবে প্রেম হলো, সেসব গল্পও করতেন আমার সঙ্গে। তারপর দেশে চলে এলাম। পরে ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার প্রায় এক-দেড় মাস পর আবার মুম্বাই গেলাম এবং স্টুডিওতে ভয়েস দেওয়া শুরু করলাম। কাজ শেষে যখন ফেরার আগে আরডি বর্মণের কাছে বিদায় নিতে গেলাম তিনি বললেন, ‘ঢাকাইয়া তুই ভালো থাকিস’।’
‘আলাপের একপর্যায়ে পঞ্চমদা বললেন, ‘তুই হয়তো ভাবছিস, পঞ্চমদার সঙ্গে অনেক ভালো সম্পর্ক, গানের জন্য তোকে ডাকবো। কিন্তু আসলে এটা সম্ভব নয়। কারণ আমরা ইন্ডিয়ান। আমাদের ন্যাশনাল ফিলিংস বেশি। তাই সম্ভব না তোকে বাংলাদেশ থেকে ডেকে এখানে এনে গান গাওয়ানো। তুই যদি এখানে থাকতে চাস তবে থেকে যা। এখানে তোদের সম্প্রদায়ের ভালো মেয়ে খুঁজে বের করে দেব। স্যাটেল হয়ে যা। তুই চিন্তা করিস না।’ আমি এক সেকেন্ডের মধ্যেই উত্তর দিয়েছিলাম, ‘দাদা, আমি যেখানে আছি খুব ভালো আছি এবং মনে করি, ওই জগৎটাই আমার। এই জগৎটা আমার জন্য নয়।’
উল্লেখ্য, গত ৬ জুলাই সন্ধ্যায় না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন এন্ড্রু কিশোর। তার প্রস্থান শোকের সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছে সংগীতের অনুরাগীদের।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



