বসনিয়ার যুদ্ধ ছিল নব্বইয়ের দশকে সংঘটিত একটি বড় ট্র্যাজেডি। এ যুদ্ধে নিহতদের বেশিরভাগই ছিলেন বসনিয়ান মুসলিম। সার্বরা অভিযান চালালে এ যুদ্ধ শুরু হয়। ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর কখনও এত বড় গণহত্যা ও জাতিগত শুদ্ধি অভিযানের ঘটনা ঘটেনি।
বসনিয়ার যুদ্ধ শুরু হয় ১৯৯২ সালের ৭ এপ্রিল ও শেষ হয় ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বরে। বসনিয়ানরা ষাট ও সত্তরের দশকের দিকে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু করেছিল। এ সময় তাদের মধ্যে পুনর্জাগরণও ঘটছিল। মার্শাল টিটোর জোটনিরপেক্ষ নীতির সুবাদে বসনীয়রা পুরো বিশ্বের সাথে যোগাযোগের সুযোগ পায়।
১৯৭৭ সালে সারায়েভো বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ চালু হয়। ১৯৮০ সালে মারা যান টিটো। কিন্তু সার্বরা বসনিয়ার ও কোসোভোর মুসলমানদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী মনোভাব সহ্য করতে পারেনি। জুগোস্লাভিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির পতন ঘটে ১৯৯০ সালের জানুয়ারি মাসে।
এ সময় দেশটিতে রাজনৈতিক বিভেদ জোরদার হয়। ১৯৯১ সালের ২৫ জুন ক্রোয়েশিয়া ও স্লোভেনিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করে। জুগোস্লাভিয়ার জনগণ ও ক্রোয়াটরা সার্বদের কর্তৃত্বকে পছন্দ করতেন না। তাই তাদের সংসদ সদস্যরা স্বাধীনতার দাবি জানাচ্ছিলেন। কিন্তু এই দাবির বৈধতা অর্জনের পথে বাধা দিতে থাকে অনেক ক্ষমতাধর রাষ্ট্র। তারা গণভোটের শর্ত জুড়ে দেয়। বসনীয় সার্বরা গণভোট বর্জন করে। বরং তারা বসনিয়ায় সার্বদের নেতৃত্বে একটি রাষ্ট্র গঠনের দাবি জানায়। কিন্তু বসনিয়ার সরকার পূর্ব-সমঝোতার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক নীতি অনুযায়ী গণভোট দেয়।
বিদেশী পর্যবেক্ষকদের নজরদারিতে অনুষ্ঠিত এই গণভোটে দেশটির ৬৪ শতাংশ নাগরিক একটি অবিভক্ত ও স্বাধীন বসনিয়া গড়ার পক্ষে রায় দেন। কিন্তু একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশের পরদিনই; তথা ১৯৯২ সালের ৭ এপ্রিল বসনিয়া হার্জেগোভিনা সার্বদের আগ্রাসনের শিকার হয়। ১৯৯২ সালের ৩০ মে জাতিসংঘ বসনিয়ার সংঘাতে হস্তক্ষেপের দায়ে সার্বিয়া ও মন্টিনেগ্রোর ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। মে মাসের শেষের দিকেই বসনিয়ার যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা বাড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে বসনিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আলিয়া ইজ্জতবেগোভিচ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কঠোর সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, সাবেক জুগোস্লাভিয়ার ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার কারণে সার্বরাই লাভবান হচ্ছে। কারণ এর ফলে বসনিয়া আত্মরক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না। জাতিসংঘ বসনিয়ার প্রেসিডেন্টের এই প্রতিবাদকে মোটেই গুরুত্ব দেয়নি। ফরাসী, রুশ, বৃটিশ ও স্প্যানিশ সরকারও এক বিবৃতিতে সাবেক জুগোস্লাভিয়ায় অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা বজায় রাখার ওপর জোর দিয়ে বলে যে, আন্তর্জাতিক বাহিনী এ ঘটনায় হস্তক্ষেপ করবে না।
তবে তারা বসনিয়ার ৬টি অঞ্চলকে (সারায়েভো, বিহাচ, তুজলা, গোরাজদে, জেপা ও সেব্রেনিৎসা) নিরাপদ জোন ঘোষণার প্রস্তাব দেওয়া হয় যাতে সেখানকার জনগণ সার্ব হামলা থেকে রক্ষা পান। ১৯৯৩ সালের ২২ জানুয়ারি ওয়েন-স্টোলটেনবার্গ প্রস্তাব বাস্তবায়ন শুরু হয়। বিবদমান তিন পক্ষই এই শান্তি প্রস্তাব মেনে নেয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।