অস্ট্রেলিয়ান প্ল্যানেটারি সায়েন্টিস্ট (গ্রহবিজ্ঞানী) স্টিফেন কেইনের মতে, বহিঃসৌরগ্রহের ইতিহাসকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। ‘এইচডি ২০৯৪৫৮বি আবিষ্কার’-এর আগে এবং পরে। গ্রহটির নামের প্রথম অংশে থাকা এইচডি-এর উৎস জ্যোতির্বিদ হেনরি ড্রেপারের তৈরি নক্ষত্রের তালিকার নাম। নামের শেষ অংশে থাকা ‘২০৯৪৫৮’ সংখ্যাটি নির্দেশ করে মহাকাশে এর কো-অর্ডিনেট বা স্থানাঙ্ক।
অর্থাৎ গ্রহটি যে নক্ষত্রকে ঘিরে ঘোরে, তার নাম এইচডি ২০৯৪৫৮। আর নামের শেষের বি (b) ইংরেজিতে ছোট হাতের অক্ষরে লেখা হয়। বোঝায়, এটি একটি গ্রহ। বড় হাতের অক্ষরে লেখা হলে এইচডি ২০৯৪৫৮ নক্ষত্রের সঙ্গী কোনো নক্ষত্রকে বোঝানো হতো। যেমন আলফা সেন্টাউরি এ (A) ও বি (B)। অবশ্য আলফা সেন্টাউরি বি-এর অন্য একটি নামও আছে, টোলিমান। যাই হোক, প্রসঙ্গে ফিরি।
এই গ্রহটির অবস্থান পেগাসাস নক্ষত্রপুঞ্জে। পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১৫০ আলোকবর্ষ। এক্সোপ্ল্যানেটটির আকার অনেকটা আমাদের বৃহস্পতির সমান। অথচ এর অবস্থান মূল নক্ষত্রের বেশ কাছে। মূল নক্ষত্রকে ঘুরে আসতে এর প্রয়োজন পড়ে মাত্র সাড়ে তিন দিন।
রেডিয়াল ভেলোসিটি টেকনিক ব্যবহার করে আগেই এইচডি ২০৯৪৫৮বি-এর অস্তিত্ব শনাক্ত করে ফেলেছিলেন বিজ্ঞানীরা। অচিরেই তাঁরা বুঝতে পারলেন, গ্রহটির বিশাল আকারের জন্য মূল নক্ষত্রের বুক চিরে এর ট্রানজিট বা অতিক্রমণ দেখতে পাওয়ার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। সেই লক্ষ্যে তাঁরা কাজ শুরু করেন। দুটি আলাদা দল গঠন করা হয়। দুই দলই তীক্ষ্ণ নজর রাখতে শুরু করে গ্রহটির ওপরে।
যে সব নক্ষত্রের অবস্থান আমাদের সূর্যের চেয়ে অনেক দূরে, সেগুলোতে শুক্রের মতো সরাসরি টেলিস্কোপ দিয়ে ট্রানজিট পর্যবেক্ষণ করা যায় না। তবে ঘুর পথে ট্রানজিট শনাক্ত করা সম্ভব। কোনো গ্রহ যখন মূল নক্ষত্রের সামনে দিয়ে যায়, তখন এর উপস্থিতির জন্য সেই নক্ষত্র থেকে আসা আলো কিছুটা বাধা পায়। ফলে পৃথিবী থেকে নক্ষত্রটিকে খুব সামান্য হলেও অনুজ্জল দেখায়।
বৃহস্পতির মতো বিশাল আকারের গ্রহগুলো খুব বেশি হলে মূল নক্ষত্রের মাত্র ১ থেকে ২ শতাংশ আলো আটকাতে পারে। অন্যদিকে পৃথিবীর আকারের গ্রহের বেলায় এর মান এক শতাংশের একশ ভাগের মাত্র এক ভাগের মতো। তবে খুব সূক্ষ্মভাবে নক্ষত্রের উজ্জ্বলতার মান পরিমাপ করতে পারলে ঠিকই ধরা যায় ট্রানজিট। পাশাপাশি হদিস পাওয়া যায় সেখানে লুকিয়ে থাকা এক্সোপ্ল্যানেট বা বহিঃসৌরগ্রহদের।
দুই দল বিজ্ঞানীই উঠে পড়ে লাগলেন এইচডি ২০৯৪৫৮বি এক্সোপ্ল্যানেটের মূল নক্ষত্রের উজ্জ্বলতা পরিমাপে। সাফল্য লাভের সম্ভাবনা ক্ষীণ জেনেও দুটি দলই নিরলসভাবে কাজ করে যেতে থাকে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ভাগ্য কাউকেই নিরাশ করেনি। দুই দলই মূল নক্ষত্রের উজ্জ্বলতা কমে যাওয়ার বিষয়টি শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। উজ্জ্বলতা কমার এই ঘটনার স্থায়িত্ব ছিল মাত্র কয়েক ঘণ্টা। ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল-এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়। নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয় বহিঃসৌরগ্রহের ট্রানজিট বা অতিক্রমণ। প্রতিষ্ঠিত হয় এক্সোপ্ল্যানেট শনাক্তের ট্রানজিট পদ্ধতি।
এক্সোপ্ল্যানেট শনাক্তে রেডিয়াল ভেলোসিটি টেকনিকের খুব ভালো বিকল্প এই ট্রানজিট পদ্ধতি। প্রথম পদ্ধতিতে এক্সোপ্ল্যানেটের সত্যিকার ভরের মান জানা সম্ভব হতো না। কেবল জানা যেত এর ভরের সর্বনিম্ন মান। ট্রানজিট মেথডে এই ঝামেলা নেই। তার ওপর এই পদ্ধতিতে গ্রহের সত্যিকার ব্যাসার্ধও জানা যায়। এগুলোর বাইরেও এক্সোপ্ল্যানেটের কক্ষপথ সম্পর্কেও জানা যায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। যেমন পরপর দুবার মূল নক্ষত্রের উজ্জ্বলতা কমে যাওয়ার মধ্যবর্তী সময় নির্দেশ করে গ্রহটির পর্যায়কাল। অর্থাৎ, মূল নক্ষত্রকে একবার ঘুরে আসতে যে সময় লাগে, তা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।