সোহেল রানা শুভ: এক রহস্যময় পরিবার ডিজে নেহার পরিবার। পুরো পরিবারটিই রহস্যে ঘেরা। তার মা ফারহানা মজুমদার কখনো মা কখনো খালা। ভাড়াটিয়াদের পুরণ করা তথ্যে বলা হয় নেহার বাবা চাকুরী করেন। অথচ সেখানে দেয়া নম্বরে কল করলে তিনি জানান, তিনি একজন আইনজীবী । তিনি নেহার বাবা কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে অপর প্রান্ত থেকে এই বিষয় কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
পরিচয় দেয়া মায়ের জন্ম সাল নিয়েও রহস্য: ভাড়াটিয়া ফর্মে মা পরিচয় দেয়া মহিলার নাম ফারহানা মজুমদার। তথ্য ফরমের সাথে দেয়া পরিচয়পত্রে মায়ের জন্ম ১৯৮৯ সালে। অথচ পুলিশের দাবি নেহার বয়স ২৫ বছর। সেক্ষেত্রে মা মেয়ের বয়সের পার্থক্য ৬ বছর। যা অসম্ভব।
এদিকে, মদ পানের পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মাধুরী ও তার বন্ধু আরাফাতের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর এখন একে একে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে নেহার অন্ধকার জগতের সব চাঞ্চল্যকর তথ্য। নেহার বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে যাওয়া হয় ছায়ানীড় ১৫০ পশ্চিম মনিপুর, মিরপুর-২ ঠিকানার বাড়িতে। সেই বাড়ির দারোয়ান আবদুল বাকী বলেন, নেহা ও তার খালা থাকতো এই বাসায়। অন্যদিকে ১০১ বি আহাম্মেদ নগর মিরপুর-২ এর বাড়ির দারোয়ান মান্নান জানান, নেহা ও তার মা বোন থাকতো এই বাসায়। তিনি আরো বলেন, আমার প্রথম দিন থেকে সন্দেহ হয়, নেহা বাজে কাপড় পরে চলাফেরা করতো ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় নেহা ও তার পরিবার সম্পর্কে ফ্লাট মালিক কমিটিকে অভিযোগ দিলেও কোন কাজ হয়নি। তাদের চলাফেরা আগের মতো থেকে যায়। একারনে আগের বাড়িওয়ালা তাদেরকে বেরও করে দিয়েছে ।
এলাকাবাসী সাথে কথা বলে জানা যায়, নেহা ও তার মা নিজেদেরকে অনেক বড়লোক দাবি করত এবং চলাফেরা ছিলো ভিন্ন রকম। নেহা ও তার পরিবারকে চিনেন এক রিক্সা চালক। সেই রিক্সা চালক সুমন বলেন, আমি শুধু নেহা ম্যাডামের মাকে নিয়ে বাজারে আসা যাওয়া করতাম। আর বাসায় গিয়ে ফুল গাছে পানি দিতাম। আমি তাদের পরিবার সম্পর্কে এর বেশি কিছু জানিনা । মুদি দোকানদার আলম জানান, তারা এই এলাকায় নতুন কিন্তু তাদের চলাফেরা সবকিছু ছিল একটু ভিন্ন রকমের।
জানা যায় নতুন বাসায় সব ফার্নিচার নতুন ও ডেকোরেশন করা হয়।
উল্লেখ্য, ২৮ জানুয়ারি উত্তরার ব্যাম্বু স্যুট রেস্টুরেন্টে ইউল্যাব শিক্ষার্থীদের মদপান করাতে নেহা ও তার খুব কাছের বন্ধু আরাফাত পার্টির আয়োজন করেন। মদপানের পর অসুস্থ হয়ে আরাফাতও মারা গেছেন। সেদিন নেহার ফোনেই তার খালাতো ভাই শাফায়াত জামিল ওরফে বিশাল এয়ারপোর্ট এলাকা থেকে মদ কিনে নিয়ে যায় ওই রেস্টুরেন্টে।
খদ্দেরদের তালিকা সংরক্ষণ করতেন বিশাল। এছাড়াও অবৈধ দরদামে সে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে দায়িত্ব পালন করতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মাধুরীর মৃত্যুর পর তার বাবার মামলায় অজ্ঞাত আসামি হিসাবে নিজেই আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন বিশাল। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। এছাড়া ওই ছাত্রীর ছেলে বন্ধু আরিফ এবং তাদের বাসায় আশ্রয়দাতা তাফসিরও কারাগারে আটক রয়েছেন।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন অর রশিদ বলেছেন, নেহাকে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা অনেক তথ্য পেয়েছি। এসব যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি নেহা আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, গত ২৮ জানুয়ারি আমার বন্ধু আরাফাতের নিমন্ত্রণে উত্তরার ব্যাম্বুসুট রেস্টুরেন্টে যাই। সেখানে গিয়ে আরও কয়েকজনকে দেখতে পাই। আমি আরাফাত ছাড়া অন্য কাউকে চিনতে পারিনি। সেখানে আমি মদপান করি। ৩ পেগ পান করার পর আমার মুখ দিয়ে রক্ত বের হয় এবং বমিও হয়। আমি তখন সেখান থেকে বাসায় চলে যাই। বাসায় যাওয়ার পরও আমার কয়েক দফা বমি হয়। এমন পরিস্থিতিতে আমি হাসপাতালে চিকিৎসা নেই।
ওই ছাত্রী মারা যাওয়ার ঘটনায় করা ধর্ষণ ও হত্যা মামলার সব আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সব ফরেনসিক রিপোর্ট পেলে পুলিশ মামলার চার্জশিট জমা দেবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।