জুমবাংলা ডেস্ক : যেন হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা। ৭০০ বছর পর জার্মানির হ্যামিলিন শহর থেকে অজ পাড়াগাঁ যশোরের কেশবপুরে ফিরেছেন রূপকথার সেই বংশীবাদক! অন্যরূপে, ভিন্ন সাজে!
নাম তাঁর মাহাতাব মোড়ল। সবাই চেনে মৌমাছি মাহাতাব নামে। বাঁশিতে তাঁর ফুঁ পড়তেই ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছি এসে জড়ো হয় তাঁর শরীরে। সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। মৌমাছির প্রতি ভালোবাসা থেকেই এ অভ্যাস গড়ে তুলেছেন তিনি। এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর উৎসুক মানুষ এখন ভিড় করছে মাহাতাবের বাড়িতে।
মাহাতাবের বাড়ি যশোরের কেশবপুর উপজেলার হাসানপুর ইউনিয়নের মোমিনপুর গ্রামে।
জানা গেছে, ১২ বছর বয়স থেকেই মৌচাক থেকে মধু আহরণ করতে শুরু করেন মাহাতাব। ওই সময় বালতিতে শব্দ করে চাক থেকে মৌমাছি দূরে সরিয়ে দেওয়ার কৌশল রপ্ত করেন তিনি। এর পর টিনের থালায় শব্দ শুনে মৌমাছি চাক ছেড়ে তাঁর কাছে আসতে শুরু করে। কাছে আসার এমন দৃশ্য থেকে মধু সংগ্রহকারী এ পতঙ্গের প্রতি তাঁর ভালোবাসা জন্মায়।
ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে মধু আহরণের পর এর উচ্ছিষ্ট কাপড়ে লাগিয়ে বাড়ির চারপাশে ঝুলিয়ে রাখেন মাহাতাব। ওই কাপড়ে মৌমাছি বসে খাবার গ্রহণ করে তাঁর বাড়ির এলাকায় উড়ে বেড়ায়। একপর্যায়ে তিনি টিনের থালা বাদ দিয়ে বাঁশিতে সুর তুলে মৌমাছিকে কাছে আনতে থাকেন। কৌশলগত ওই সুর শুনে এখন হাজারও মৌমাছি তার শরীরে জড়ো হয়।
মাহাতাব মোড়ল জানান, ২০ বছর ধরে তিনি মধু সংগ্রহ করছেন। তাঁর বাবার নাম মৃত কালাচাঁদ মোড়ল। বাবার বাড়ি ছিল সুন্দরবন-সংলগ্ন কয়রা উপজেলায়। বাবার বৈবাহিক সূত্রে কেশবপুরের মোমিনপুর গ্রামে নানার বাড়িতে তাঁদের বসবাস। এখানকারই স্থায়ী বাসিন্দা মাহাতাব। সুন্দরবনসহ সাতক্ষীরা, খুলনা ও যশোর অঞ্চলে তিনি মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন। মধুর চাক ভাঙতে ভাঙতে মৌমাছির প্রতি তাঁর ভালোবাসা তৈরি হয়।
প্রথমে বালতি, টিনের থালার মাধ্যমে একটি-দুটি মৌমাছি শরীরে বসতে থাকে তাঁর। আর এখন বাঁশির সুরে হাজারও মৌমাছি এসে বসে। মৌমাছি বসতে বসতে শরীর তাঁর মৌচাকের আকার ধারণ করেছে।
মৌমাছি শরীরে কামড় দেয় কি-না জানতে চাইলে মাহাতাব বলেন, ‘এর জন্য শরীরকে আগে থেকেই প্রস্তুত করতে হয়। তাদের আঘাত না করলে একটি মৌমাছিও শরীরে হুল বসায় না’। কতদিন বাঁশির এ কৌশল রপ্ত করেছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই মৌসুমেই বাঁশির সুর রপ্ত করেছি’।
গত সোমবার (৭ জুন) মাহাতাবের বাড়িতে বাঁশির সুর শুরু করলেই হাজারও মৌমাছি শরীরে জড় হয়। এ দৃশ্য দেখার জন্য শত শত উৎসুক মানুষ বাড়িতে ভিড় করেন।
পার্শ্ববর্তী সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নের কাস্তা গ্রামের আক্তার হোসেন এমন উৎসুক মানুষেরই একজন। তিনি বলেন, ‘বাঁশির সুর শুনে ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছি মাহাতাবের শরীরে বসে চাকের আকার ধারণ করে। বাঁশি বাজানো বন্ধ করার পর মৌমাছি উড়ে পার্শ্ববর্তী বাগানে চলে যায়। অবাক করার মতো ঘটনা এটি, যা এই প্রথম দেখলাম।’
মাহাতাব গর্ব করে জানান, এটি কেবল মৌমাছির প্রতি ভালোবাসা থেকেই করা সম্ভব হয়েছে। এতে কোনো তন্ত্র-মন্ত্র নেই। বাড়িতে বাঁশি বাজিয়ে পাঁচ মিনিটেই তিনি শরীরে হাজারও মৌমাছি জড়ো করতে পারেন। কাজটি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও অভ্যাস হয়ে যাওয়ায় কোনো ভয় লাগে না। মধু আহরণ করেই তাঁর সংসার চলে। সংসারে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
এ ব্যাপারে হাসানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক জুলমত আলী বলেন, ‘দীর্ঘদিন মাহাতাব মোড়ল মধু ভেঙে বেড়ায়। বাঁশির সুরে মৌমাছি শরীরের আনার কৌশল আয়ত্ব করায় এলাকায় তাঁর পরিচিতি পেয়েছে মৌমাছি মাহাতাব নামে। বিভিন্ন স্থান থেকে তাঁর বাড়িতে মানুষ ওই দৃশ্য দেখতে আসে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।