নিজস্ব প্রতিবেদক : পৌনে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশকে তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় করতে অনুমোদন দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
সোমবার স্থানীয় সময় যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাহী বোর্ড সভায় এটি অনুমোদন করা হয়।
এর মাধ্যমে তৃতীয় কিস্তিতে বাংলাদেশ পাবে ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার, যা কিস্তিতে পূর্ব নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, ‘আইএমএফ এর বোর্ড সভায় ঋণের তৃতীয় কিস্তি অনুমোদন করেছে। আশা করছি, আগামী দুই দিনের মধ্যে এ পরিমাণ অর্থ ছাড় করলে বুঝে পাবে বাংলাদেশ।’
এর আগে গত ৮ মে তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় করার বিষয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ের বৈঠকে ঐকমত্যে পৌঁছেছিল ঢাকায় সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দল।
ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থের ব্যবহার এবং শর্ত পূরণে অগ্রগতি দেখতে রিভিউ মিশন গত ২৪ এপ্রিল থেকে ৮ মে পর্যন্ত সরকারি বিভিন্ন দপ্তর এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে।
রিভিউ মিশনের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও সফর শেষে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলে, “আমরা আনন্দিত যে দ্বিতীয় কিস্তির অধীনে বাস্তবায়নকৃত নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্তের রিভিউ সম্পন্ন করেছি। কর্মকর্তা পর্যায়ে আমরা ঋণের পরবর্তী কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একমত হয়েছি, যা আগামী সপ্তাহে নির্বাহী পর্ষদের সভায় অনুমোদন সাপেক্ষে ছাড় করা হবে।”
এখন তৃতীয় কিস্তিতে মোট ইসিএফ (এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি) ও ইইএফ (এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি) এর অধীনে ৯৩ কোটি ২০ লাখ ডলার (আইএমএফ মুদ্রা এসডিআর ৭০ কোটি ৪৭ লাখ) এবং আরএসএফ (রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি) এর অধীনে ২২ কোটি ডলার (এসডিআর ১৬ কোটি ৬৮ লাখ) পাবে বাংলাদেশ। তিন খাত মিলিয়ে মোট এক দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার ছাড় করা হবে তৃতীয় কিস্তিতে।
তবে চুক্তির শুরুতে যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তাতে এবার বাংলাদেশের পাওয়ার কথা ছিল ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
সে জায়গায় ইসিএফ ও ইইএফ এর বরাদ্দ দ্বিগুণ করে ৯৩ কোটি ২০ লাখ ডলার করেছে আইএমএফ। এভাবে মোট মঞ্জুরকৃত ঋণের মধ্যে তৃতীয় কিস্তিতে ছাড়ের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
ঋণ চুক্তিতে যাওয়ার পরে প্রয়োজন অনুযায়ী, পরবর্তী কিস্তির অর্থ আগাম ছাড়ের আগাম অনুমোদন দিতে পারে আইএমএফ। অর্থের খরচ স্বাপেক্ষে তা ব্যবহার করতে পারে সংশ্লিষ্ঠ দেশ।
তৃতীয় কিস্তি ছাড় পেতে জুন শেষে নীট রিজার্ভ ১৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার রাখতে শর্ত দিয়েছে আইএমএফ। যা আগের শর্তে ছিল ২০ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার।
অন্যান্য শর্তে অগ্রগতি হওয়ায় বাংলাদেশের আবেদনে নীট রিজার্ভ সংরক্ষণে এ ছাড় দেয় আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।
নতুন শর্ত অনুযায়ী, আগামী সেপ্টম্বর শেষে নীট রিজার্ভ ১৪ দশমিক ৮৮ ও ডিসেম্বর শেষে তা ১৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৯ জুন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতি ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রস হিসাবে ২৪ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফ স্বীকৃত বিপিএম৬ পদ্ধতির গ্রস হিসাবে তা ছিল ১৯ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের নীট হিসাব প্রকাশ করে না। শুধু আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থাকে জানিয়ে দেয়।
বিদেশি মুদ্রার সরবরাহ সঙ্কটের মধ্যে বাংলাদেশ আইএমএফের কাছে ঋণ চায়। কয়েক দফা আলোচনা শেষে গত বছরের ৩১ জানুয়ারি ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে ওয়াশিংটনভিত্তিক আর্থিক সংস্থাটি।
ঋণ চুক্তি অনুমোদনের পর গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার হাতে পায় বাংলাদেশ। আর গত ১২ ডিসেম্বর দ্বিতীয় কিস্তিতে বাংলাদেশ পায় ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার।
ঋণের শর্ত হিসেবে বেশ কিছু আর্থিক ও নীতি সংস্কারে মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এসবের মধ্যে রয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারমুখী করা, ব্যাংক ঋণে সুদ হারের ৯ শতাংশের সীমা তুলে দেওয়া, ব্যাংক ঋণের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের তথ্য প্রকাশ, রিজার্ভের নীট হিসাব আইএমএফ স্বীকৃত পদ্ধতি বিপিএম৬ অনুযায়ী প্রকাশ, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা, পুঁজিবাজারের উন্নয়নের মত বিষয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।