জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশে নাগরিকদের ওপর গুরুতর দমন-পীড়নের বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক পর্যালোচনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সংস্থাটির ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউ (ইউপিআর) বা সর্বজনীন পুনর্বীক্ষণ পদ্ধতির ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে বাংলাদেশের ইউপিআরের খসড়া গৃহীত হয়। সেখানে বাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ, স্বচ্ছ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ মানবাধিকারবিষয়ক ৩০১টি সুপারিশ করেছে বিশ্বের ১১০টি দেশ। গতকাল বৃহস্পতিবার হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে আসে। সংস্থাটি বলছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর চলমান দমন-পীড়নের মধ্যে এই পর্যালোচনা করা হয়েছে
ইউপিআর হলো ১৯৩টি জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রের মানবাধিকার রেকর্ডের পর্যালোচনা। জাতিসংঘের প্রতিটি সদস্যরাষ্ট্রকে প্রতি সাড়ে চার বছরে তাদের মানবাধিকার রেকর্ডগুলো ইউএন হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের ইউপিআর অনুসারে পর্যালোচনা করতে হয়। এবারের পর্যালোচনায় বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়, দেশটির কর্র্তৃপক্ষের নির্বিচার গ্রেপ্তার, জোরপূর্বক গুম, নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং ব্যাপক দমন-পীড়নসহ গুরুতর অপব্যবহার নথিভুক্ত করেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। স্বাধীনভাবে অভিযোগের তদন্ত ও দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার বদলে বাংলাদেশ সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িতদের পুরস্কৃত করে।
পর্যালোচনা চলাকালে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল সাম্প্রতিক নির্বাচনী সহিংসতার সময় অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের প্রমাণ খারিজ করে দেয়। তারা জানান, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রতিক্রিয়া ছিল ন্যূনতম, যুক্তিসংগত ও সংযত।
রিভিউ চলাকালে একাধিক সদস্যরাষ্ট্র বলেছে, জোরপূর্বক গুম থেকে সবার সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশ সরকারের উচিত আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুমোদন করা। জবাবে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল বলেছে, কনভেনশনের পক্ষ হওয়ার আগে সরকারকে ‘উদ্ভূত বাধ্যবাধকতাগুলো পালন করার জন্য জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে’ কাজ করতে হবে।
এইচআরডব্লিউ বলছে, গত কয়েক সপ্তাহে ১০ হাজার বিরোধীদলীয় কর্মীসহ রাজনৈতিক বিরোধীদের নির্বিচারে গণগ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে সরকার দাবি করেছে, ‘কোনো রাজনৈতিক বিবেচনা ছাড়াই’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নির্বিচারে কোনো আটকের ঘটনা ঘটেনি।
এশিয়া বিষয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সিনিয়র গবেষক জুলিয়া ব্লেকনার বলেন, চলমান রাজনৈতিক গণগ্রেপ্তার, জোরপূর্বক গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও সমালোচকদের নির্যাতন বাংলাদেশ সরকারের ‘সবার জন্য মানবাধিকার রক্ষার’ প্রতিশ্রুতিকে অর্থহীন করে তুলেছে।
এদিকে গত ১৪ নভেম্বর জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেন, ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সহিংসতা তীব্রতা বেড়েছে। বিরোধী দলের সিনিয়র নেতাদের গ্রেপ্তার, হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মীকে নির্বিচারে আটক, অত্যধিক বলপ্রয়োগের ঘটনায় তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। প্রতিবাদ ব্যাহত করার লক্ষ্যে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া এবং প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে পরিবারের সদস্যদের হয়রানি, ভীতিপ্রদর্শন ও বেআইনিভাবে আটকের অভিযোগও আনা হয়।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে, বাংলাদেশ সরকারকে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের অফিস থেকে দেওয়া সহায়তার প্রস্তাব গ্রহণ করা উচিত। বলপূর্বক গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ উদঘাটনে তারা ভুক্তভোগী, পরিবার ও সুশীলসমাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে।
সর্বশেষ ইউপিআর পর্যালোচনায় বাংলাদেশ সরকার দাবি করে, তারা গুম-সংক্রান্ত ওয়ার্কিং গ্রুপের সভার অনুরোধের অনুকূলভাবে সাড়া দিয়েছে। কিন্তু পাঁচ বছর পর সরকার এখনো জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপকে বাংলাদেশ সফরে আমন্ত্রণ জানাতে অস্বীকার করেছে বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশের ইউপিআরের খসড়া প্রতিবেদন তৈরির দায়িত্ব ছিল কিউবা, পাকিস্তান ও রোমানিয়া। ওই ট্রয়কার পক্ষে বাংলাদেশের ইউপিআরের খসড়া প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন রোমানিয়ার প্রতিনিধি। এই প্রতিবেদন নিয়ে কোনো রাষ্ট্র আপত্তি না করায় তা গৃহীত হয়। বাংলাদেশের ইউপিআরে ১১০টি দেশ আলোচনায় অংশ নিয়ে মতামত দিয়েছে। এ ছাড়া ১২টি দেশ আগাম প্রশ্ন পাঠিয়ে পর্যালোচনায় সহযোগিতা করেছে। সূত্র: দেশ রুপান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।