বাংলাদেশে উদীয়মান প্রযুক্তি: কী অপেক্ষা করছে?

উদীয়মান প্রযুক্তি

বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রযুক্তিক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সাফল্য নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ। স্যাটেলাইট যুগে বাংলাদেশের প্রবেশ জাতি হিসেবে আমাদের জন্য গর্বের। স্যাটেলাইট মূলত রিমোট সেনসিং প্রযুক্তির মাধ্যমে কাজ করে। এই প্রযুক্তির সবচেয়ে বহুল ব্যবহার যোগাযোগ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়। এ দেশে রিমোট সেনসিং তথা স্যাটেলাইট প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মধ্যে দিয়ে।

উদীয়মান প্রযুক্তি

বর্তমান বিশ্বে রিমোট সেনসিং একটি অতি-আধুনিক প্রযুক্তি হিসেবে বিভিন্ন দেশে ব্যাপকভাবে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে; স্থায়ী উন্নয়ন, গবেষণা, প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ ও প্রতিবেশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে খুব সহজেই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় টেকসই উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় দ্রুত সেবা প্রেরণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করার ক্ষেত্রে রিমোট সেনসিং প্রযুক্তি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও রিমোট সেনসিং প্রযুক্তি প্রসারের অসংখ্য ক্ষেত্রে বিদ্যমান।

উদীয়মান অর্থনীতির দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করে চলেছে। এই অগ্রগতি ধরে রাখার পূর্বশর্ত প্রযুক্তিজ্ঞান সমৃদ্ধ দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি, টেকসই অবকাঠামো উন্নয়ন অতীব প্রয়োজন। উন্নত দেশ মানেই শিল্প সমৃদ্ধ দেশ, দেশের শিল্পকারখানা স্থাপন, শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠান, স্থানীয়করণ করার ক্ষেত্রে ভৌগোলিক অবস্থানগত সুবিধা, যাচাই তথা স্থানিক ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্টের ক্ষেত্রে রিমোট সেনসিং প্রযুক্তির ব্যবহার দেশের টেকসই উন্নয়নকে নিশ্চিত করবে।

থ্রিডি, এআই এবং অন্যান্য ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনসহ উদীয়মান প্রযুক্তিতে বাংলাদেশের আগ্রহ আছে। আইসিটি হচ্ছে নলেজ বেইজড ইন্ডাস্ট্রি। স্টার্টআপ, এগ্রিটেক, সাইবার সিকিউরিটি, হেলথ ডেলিভারি সিস্টেম, আইটি ইনোভেশন সেন্টারসহ ডিজিটাইজেশনে বাংলাদেশের সম্ভাবনা আছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ পরিবর্তন আসছে সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি তরুণদের নানা উদ্যোগ আর প্রচেষ্টায়। তাঁদের হাত ধরেই দেশে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ছে।

প্রযুক্তিগত দক্ষতার দিক থেকে অপারেটিং সিস্টেম, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো ক্ষেত্রে ভালো করছে বাংলাদেশ। ৯০ শতাংশ উন্নয়নশীল অর্থনীতি এখন ক্রিটিক্যাল স্কিল বা জটিল দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে পেছনে পড়ে যাচ্ছে বা ঝুঁকিতে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত দক্ষতার ক্ষেত্রে ভালো করছে বাংলাদেশ।

এআই উৎপাদনশীলতা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও আয় বাড়াতে পারে। অনেক লোকের কর্মসংস্থান হতে পারে। তবে এটা বৈষম্যও বাড়াতে পারে, কাজও হারাতে পারেন অনেকে। বাংলাদেশে এখন পাঁচ শতাধিক প্রতিষ্ঠান আছে, যারা এআই এবং মেশিন লার্নিং নিয়ে কাজ করে। তবে প্রতিষ্ঠানের বাইরে ব্যক্তিগতভাবে কাজ করেন— এরকম মানুষের সংখ্যা কমপক্ষে ১০ লাখ।

আমরা আসলে এখনো এআই প্রযুক্তির জন্য প্রস্তুত নই। আমরা এখনো ডিজিটাল বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের প্রযুক্তির তৃতীয় যুগে যেতে হলে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত তরুণ লাগবে। সেই ব্যবস্থা আমাদের এখানে নেই, প্রতিষ্ঠান নেই। আবার যারা তৈরি হচ্ছে, তাদের আমরা ধরে রাখতে পারছি না, তারা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। তাদের ধরে রাখার ব্যবস্থা যেমন করতে হবে, তেমনি এআই আমাদের বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষায় যুক্ত করতে হবে।

দেশীয় প্রযুক্তির উন্নয়ন ও ব্যবহারের পদক্ষেপ:

১) গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধি: বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলিকে গবেষণা ও উন্নয়নে আরও বেশি অর্থ বরাদ্দ করা।

২) দক্ষ জনসম্পদের সৃষ্টি: প্রকৌশল, কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির অন্যান্য শাখায় দক্ষ জনসম্পদ তৈরি করা।

৩) প্রযুক্তিগত অবকাঠামো উন্নত করা: হাই-স্পিড ইন্টারনেট, ডেটা সেন্টার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নত করা।

৪) ব্যক্তিগত খাতের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি: দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবসায়ীদের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা।

৫) সচেতনতা বৃদ্ধি: জনগণের মধ্যে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

উদীয়মান প্রযুক্তির সুবিধাগুলি গ্রহণ করার জন্য এবং এর চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করার জন্য আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে। আমাদের নীতিমালা তৈরি করতে হবে যা গোপনীয়তা রক্ষা করে, নৈতিক নীতিমালা প্রচার করে এবং সকলের জন্য সুযোগ নিশ্চিত করে। উদীয়মান প্রযুক্তি আমাদের জীবনে বিপ্লব ঘটানোর সম্ভাবনা রাখে। সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের এই প্রযুক্তিগুলি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা, সম্ভাব্য ঝুঁকি ও সুবিধাগুলি বিবেচনা করা এবং দায়িত্বের সাথে ব্যবহার নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।