আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বাংলাদেশে তিস্তার ‘রিভার ব্যাঙ্ক প্রোটেকশন’ বাঁধের ফলে বিপাকে ভারত। ইন্দো-বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে তিস্তা নদীর ওপর এই বাঁধ তৈরি করার অভিযোগ উঠলো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। তার জেরে পশ্চিমবঙ্গে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ওই বাঁধের ফলে তিস্তার জলে তলিয়ে যেতে পারে সীমান্তবর্তী ভূখণ্ডের একাংশ। ডুবে যেতে পারে বিএসএফের একটি চৌকিও। সবদিক খতিয়ে দেখে তিস্তার ওপর বাংলাদেশ সরকার যে বাঁধ তৈরি করছে, তা নিয়ে আপত্তি তুলেছে পশ্চিমবঙ্গের সেচ দফতর। সরেজমিন পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্টও পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিক পর্যায়ে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে সেচ দফতর।
বিএসএফের জলপাইগুড়ি সেক্টরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের দিকে তিস্তা নদী ব্যাঙ্ক প্রোটেকশন তৈরির কাজ হচ্ছিল। ২০২২ সাল থেকে ধীরে ধীরে বাঁধটি এগিয়ে আসতে থাকে। বাঁধটি সোজা না করে বাঁকা তৈরি করা হচ্ছিল। সীমান্ত এলাকায় আসার পরে, সেই কাজ আটকে দেওয়া হয়েছে। তিস্তা নদীর পানি যাতে বাংলাদেশের গ্রাম ভাসিয়ে না দেয়, সেই কারণে বাঁধটি তৈরি করা হচ্ছিল। এর ফলে ভারতের দিকে ব্যাঙ্ক প্রোটেকশন বা নদীর চর নষ্ট হচ্ছে।
সেচ দফতরের সঙ্গে যৌথ পরিদর্শনের পর জলপাইগুড়ি বিএসএফ সেক্টরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভারতের দিকে তিস্তার চরের নাব্যতা কমে গেলে কুচলিবাড়ি এলাকায় পানি প্রবেশ করছে। বাংলাদেশের দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা গ্রামের পশ্চিম দিক দিয়ে তিস্তা নদী বয়ে গেছে। প্রতিবছর বর্ষায় তিস্তার পানি এই এলাকায় প্রবেশ করে। গ্রাম দু’টিকে বাঁচাতে বাঁধ দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের তরফে। কিন্তু বাংলাদেশের তরফে ভারতের দিকে বাঁকিয়ে বাঁধ তৈরির কাজ শুরু হতেই বাধা দেয় বিএসএফ।
সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে, বাঁধ সোজাসুজি দিলে কোনও সমস্যা হত না। কিন্তু বাঁধটি বাঁকা হওয়াতে বিপাকে পড়তে চলেছে ভারত। বাংলাদেশের এই বাঁধ নির্মাণের ফলে তিস্তার পানি ভারতীয় ভূখণ্ডের গ্রামগুলোতে ঢুকে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই বাঁধের ফলে ভারতীয় এলাকার কুচলিবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩০-৩৫ হাজার মানুষ ও বিএসএফের হেমন্ত বিপিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ইতোমধ্যে বিএসএফের পক্ষ থেকে সেচ দফতরের উত্তর-পূর্ব চিফ ইঞ্জিনিয়ারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। বাঁধ নির্মাণ যাতে না করা হয়, তা বাংলাদেশ প্রশাসনকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে বাংলাদেশের বাঁধ নিয়েও আপত্তি তুলেছে পশ্চিমবঙ্গের সেচ দফতর। ওই এলাকা পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্টও পাঠানো হয়েছে।
সীমান্তের ওপারে তৈরি হওয়া বাঁধকে প্রশস্ত করে ভারতে তিস্তার সঙ্গে সংযুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশের তরফে। সেই প্রস্তাব নাকচ করেছে সেচ দফতর। ভারতীয় কর্মকর্তাদের মতে, এর ফলে সীমান্তের ওপারে বাঁধে ধাক্কা খেয়ে তিস্তার গতিপথ বাধাপ্রাপ্ত হবে। ফলে বাঁধ ভেঙে বড় সমস্যা তৈরি হতে পারে।
সেচ দফতরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার (উত্তর-পূর্ব) কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক বলেছেন, সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশ প্রোটেকশন বাঁধ দিয়ে সমস্যা তৈরি করেছে। বাঁধটা আগেই দেওয়া হয়েছে। এই বাঁধটির ফলে বিএসএফের একটি বিওপি পানির তোড়ে ভেসে যেতে পারে। শুধু তাই নয়, কুচলিবাড়ি এলাকায় তিস্তার পানি ঢুকে বন্যা হতে পারে। বিএসএফ আমাদের নজরে আনার পরেই আমরা পরিদর্শন করেছি জায়গাটি। বিষয়টি আন্তর্জাতিক ও জটিল ইস্যু। বিএসএফ আমাদের নজরে নিয়ে এসেছে।
তিনি আরও জানান, আমরা পর্যালোচনা করে, আমাদের আপত্তির কথা প্রতিবেদনে সরকারকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। ভারত সরকারের প্রোটোকল অনুযায়ী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি দেখবে। বিএসএফের সঙ্গে আমাদের বৈঠকের কথাও জানিয়েছি। বিএসএফের সীমান্ত চৌকির নাম হেমন্ত। সীমান্তের ওপারে বাঁধ তৈরির ফলে এটি ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছে।
সিকিম ও পাহাড় থেকে নেমে আসা তিস্তা নদীতে বর্ষার সময় পানির চাপ থাকে। সমতলে তিস্তা নদী ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের মেখলিগঞ্জের পরে আংশিক বাধা পাচ্ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবে পানি প্রবাহিত হতে পারছে না। সেচ দফতরের অভিযোগ, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ওপারে বাঁধ তৈরি হওয়ায় এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।