জুমবাংলা ডেস্ক: খুলনার মরিয়ম বেগম লেবানন থেকে দেশে ফিরে এসেছিলেন গত মার্চ মাসের মাঝামাঝিতে। করোনাভাইরাসের লকডাউন শেষে বিমান চলাচল শুরু হওয়ার পর, গত কয়েকমাস ধরে তিনি আবার বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এখনও কোন উপায় খুঁজে পাননি। খবর বিবিসি বাংলার।
তিনি বলেন, বিদেশ যাতি পারছি না, কোন কাজকর্ম করতে পারছি না। সমস্যায় তো আছি ভাই। নতুন করে চালু হওয়ার পর থেকেই চেষ্টায় আছি, কিন্তু কিছু হয় নাই। আমারে বলেছে, ১৫ তারিখের মধ্যে কিছু জানাবে। নয়-দশ মাস ধরি বসি আছি, জমানো টাকা ভাঙ্গি খাতি হইতাছে।
তিনি বলছেন, গত চারমাস ধরেই তিনি বিদেশে যাওয়ার জন্য যোগাযোগ করছেন। কিন্তু কবে যেতে পারবেন, বুঝতে পারছেন না।
অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করে, এমন একটি সংস্থা রামরু মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) একটি প্রতিবেদনে বলেছে, করোনাভাইরাস সংকট শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশের যে অভিবাসী শ্রমিকদের বিদেশে যাওয়ার হার ৭০ ভাগ কমে গেছে।
বিশেষ করে যারা এই সময়ে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন, তারা আর ফেরত যেতে পারেননি। এই অভিবাসী ও তাদের পরিবারের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে।
সংস্থাটি বলছে, এর প্রভাব পড়তে পারে সামনের বছরের রেমিটেন্সের ওপরেও।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, পহেলা এপ্রিল থেকে ৩০শে নভেম্বর পর্যন্ত দেশে ফেরত এসেছেন ৩ লাখ ২৬ হাজার ৭৫৮ জন কর্মী। এদের মধ্যে ৩৯ হাজার ২৭৪ জন নারী।
বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর সাত লাখের বেশি মানুষ বিদেশে কাজের জন্য গেলেও এই বছর গেছে, দুই লাখের কম শ্রমিক। মার্চ মাস থেকেই আটকে গেছে বাংলাদেশ থেকে পাঁচ লাখ ভাগ্যান্বেষী মানুষের বিদেশ যাত্রা।
বেসরকারি সংস্থা রামরুর চেয়ারপার্সন অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিকী বলছেন, যদিও বিপুল সংখ্যক শ্রমিক তাদের সঞ্চিত অর্থ নিয়ে দেশে ফিরে আসায় রেমিটেন্স বেড়েছে। কিন্তু এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে সামনের বছর।
তিনি বলেন, বিদেশে বাংলাদেশে শ্রমবাজার বন্ধ হবে না। কারণ যেসব খাতে আমাদের দেশের অদক্ষ শ্রমিকরা যায়, গৃহকর্মী, নির্মাণ, পরিচ্ছন্নতা, ইত্যাদি খাতে শ্রমিকদের চাহিদা সবসময়েই থাকবে।
আশঙ্কা প্রকাশ করে অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিকী, কিন্তু এই বছর অনেক বেশি শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছে। তারা জমানো টাকা নিয়ে এসেছেন, অনেকে আবার বিপদের আশঙ্কায় বেশি করে টাকা পাঠিয়েছেন, ফলে রেমিট্যান্স বেড়েছে। কিন্তু অনেক শ্রমিক দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হওয়ায় আর মার্চের পর থেকে নতুন শ্রমিক যেতে না পারায় সামনের বছর রেমিট্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিতে পারে।
অক্টোবরের পর থেকে যারা শুধুমাত্র ছুটিতে এসেছিলেন, তারাই আবার কাজে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু দেশে ফেরত আসাদের অনেকেই চাকরি হারিয়ে, কেউ কেউ অবৈধ শ্রমিক থেকে দেশে আসতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু কবে তারা আবার বিদেশে কাজের জন্য যেতে পারবেন, সেই সম্ভাবনা এখনও দেখা যাচ্ছে না।
মরিয়ম বেগমের মতো এই অভিবাসীদের বেশিরভাগের এখন সঞ্চয়ের ওপর হাত পড়েছে। আবার বিদেশে যাওয়ার আশায় দেশেও তারা কিছু শুরু করতে পারছেন না। সব মিলিয়ে বিদেশি আয়ের ওপর নির্ভরশীল পরিবারগুলোও পড়েছে সংকটে।
ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বলছেন, এই ফেরত আসা শ্রমিকদের পুনর্বাসনের বিষয়ে এখনি গুরুত্ব দেয়া দরকার।
তিনি বলেন, কোভিডের মধ্যে যারা ফেরত এসেছেন, তারা যে আবার যাবেন, সেটা শুরু হয়নি। তেমন সম্ভাবনাও এখনও দেখা যাচ্ছে না। ফলে আমাদের সামনে একটা বড় চ্যালেঞ্জ বৈদেশিক কর্মসংস্থান স্বাভাবিক করা আর কাজ হারিয়ে ফেরত আশা শ্রমিকদের দেশের ভেতর পুনর্বাসন করতে পারা।
তিনি বলছেন, এক্ষেত্রে ঋণ দিয়ে, প্রকল্প নিয়ে বা প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের দেশের ভেতরে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। সেজন্য শুধু সরকারের একার নয়, বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশের সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অভিবাসী শ্রমিকদের এই সংকটের বিষয়ে তারা সচেতন।
বিভিন্ন দেশের শ্রমবাজারে যেমন তারা যোগাযোগ রাখছেন, তেমনি দেশে ফেরত আসা শ্রমিকদের কল্যাণেও পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।