জুমবাংলা ডেস্ক: বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশের স্ট্যাটাস থেকে উত্তোরণের পর বাংলাদেশের সাথে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার সম্পর্কে বহুমাত্রিকতা যোগ হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন আর বৈদেশিক সাহায্য নির্ভর নয়। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক ও কারিগরী সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে।’
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে ইউএনডিপি এর এসিসটেন্ট সেক্রেটারি জেনারেল মিস কানি ভিগনারাজাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণের সাথে বৈঠককালে তিনি আজ এ কথা বলেন।
কানি ভিগনারাজা স্পিকারের সাথে একমত পোষণ করে বলেন, ইউএনডিপিও তাই জাতিসংঘের নীতির আলোকে বাংলাদেশে সেক্টর ভিত্তিক কারিগরী সহযোগিতা জোরদার করতে কাজ করে যাচ্ছে। নতুন পরিস্থিতিতে কার্বন ট্র্যাডিং, সকল প্রকার দূষণ প্রতিরোধ কিংবা সবুজ (পরিবেশ বান্ধব) উৎপাদন প্রক্রিয়া জোরদার করার ক্ষেত্রে দক্ষতা বিনিময়ের মতো ইস্যূগুলোতে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ একসাথে কাজ করতে পারে।
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণ ও দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ দক্ষতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। সংসদ সদস্যগণও এসব কর্মকান্ডে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। সমকালীন বিশ্বব্যবস্থায় নতুন নতুন প্রযুক্তি আর জ্ঞান বিনিময়ের মতো বিষয়গুলোকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ইউএনডিপি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সাথে কাজ করতে পারে।
তিনি বলেন, সংসদ সদস্যগণ যার যার নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নের লক্ষ্যে তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে সমকালীন প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন এলাকার উন্নয়ন চাহিদাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে হবে। আর এই লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকার হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত সংসদ সদস্যগণের নিকট সহজলভ্য করতে হবে। এই লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, বিশেষ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সহযোগিতা নিয়ে ‘মাই কনস্টিটিউএনসি’ এ্যাপ প্রবর্তন করেছে। উক্ত এ্যাপ প্রবর্তনে ইউএনডিপি কারিগরি সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। এই জন্য স্পিকার ইউএনডিপি’র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সভায় উপস্থিত ইউএনডিপির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ফ্রান্সিন পিকাপ স্পিকারকে অবহিত করেন যে, উক্ত এ্যাপ বাস্তবায়নের বিষয়ে ইউএনডিপি কারিগরী সহযোগিতা জোরালোকরণে কাজ করে যাচ্ছে। স্পীকার উক্ত এ্যাপ বাস্তবায়নের পেছনে চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে বলেন, এই এ্যাপে নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক হালনাগাদ পরিসংখ্যানগুলোর প্রতিফলন থাকতে হবে। যাতে করে সংসদ সদস্যগণ উক্ত এ্যাপের মাধ্যমে স্ব স্ব নির্বাচনী এলাকার সেক্টর ভিত্তিক তথ্য-উপাত্তগুলো পেতে পারেন।
নিজ নির্বাচনী এলাকার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে স্পিকার বলেন, জনশুমারী সংক্রান্ত তথ্যের পাশাপাশি রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ কিংবা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের সম্পর্কিত পরিসংখ্যানও এই এ্যাপে থাকতে হবে। এতে করে সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্য বুঝতে পারবেন, কোন এলাকার কোন রাস্তা বা ব্রীজের উন্নয়ন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করতে হবে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবকাঠামোর তুলনায় ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কিংবা ছাত্র-ছাত্রীর ঝরে পরার হার- এসব হালনাগাদ তথ্য তার কাছে থাকলে তিনি সেসব পরিস্থিতি উন্নয়নে কাজ করতে পারবেন। এতে টিকা প্রদান, স্বাস্থ্য, মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত থাকাও জরুরী। সমকালীন পরিস্থিতিতে পরিকল্পনা হতে হবে তথ্য-উপাত্ত ভিত্তিক এবং সুনির্দিষ্ট চাহিদা ভিত্তিক, কোনভাবেই অনুমান নির্ভর নয় বলে মতামত ব্যক্ত করেন তিনি।
কানি ভিগনারাজা স্পিকারের সাথে একমত পোষণ করে বলেন, এই এ্যাপ বাস্তবায়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। জাতীয় সংসদের চাহিদার প্রেক্ষিতে এটিকে আরো ইউজার-ফ্রেন্ডলি করার লক্ষ্যে কার্যক্রম নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, কার্বন নিঃসরণের মতো ইস্যূগুলো এখন খুব ভাইটাল হচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এ নিয়ে কাজ করছে। বিভিন্ন ফোরামে জলবায়ু অর্থায়ন সংক্রান্ত আলোচনা চলছে। বাংলাদেশকে এইসব বিষয়ে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে হবে। পার্লামেন্টে এসব বিষয়ে আলোচনাকে উৎসাহিত করতে হবে।
স্পিকার বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ এসব বিষয়ে সংসদ সদস্যদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে।
তিনি বলেন, প্রতি বছর বাজেট অধিবেশন চলাকালীন সংসদ সদস্যগণকে সেক্টর ভিত্তিক তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করার লক্ষ্যে বাজেট এনালাইসিস ও মনিটরিং ইউনিট কাজ করে যাচ্ছে। এই বছর এই ইউনিট আটটি বিষয়ের উপর ডিব্রিফিং করেছে। এই কাজে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কারিগরী সহযোগিতা প্রদান করছে। ইউএনডিপি এই আদলে দক্ষতা উন্নয়নমূলক কোন কার্যক্রম গ্রহণ করলে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ স্বাগত জানাবে।
উক্ত বৈঠকে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের যুগ্মসচিব এম.এ কামাল বিল্লাহ এবং বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের কাউন্সিলর মোসা: শাহানারা মনিকা উপস্থিত ছিলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।