ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম: আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহনে বন্ধুপ্রতিম দেশ ভুটানকে বাংলাদেশের সড়ক, সমুদ্রবন্দর এবং স্থলবন্দর ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
এর আগে প্রতিবেশি দেশ ভারত ও নেপালকে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দর ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ। ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তির মাধ্যমে সেই পণ্য পরিবহন ইতোমধ্যে শুরুও হয়েছে। এখন ভুটানকে ট্রানজিট দেয়া হলো।
গত ১৩ মার্চ সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সংক্রান্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি চুক্তি অনুমোদন দেওয়া হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ভুটান একটি ল্যান্ড লক কান্ট্রি বা ভূমি পরিবেষ্টিত দেশ। আমদানি-রপ্তানিতে তাদের নিজস্ব কোনো নদী বা সমুদ্র বন্দর নেই। সেইক্ষেত্রে তারা ভারতের কাছ থেকেও একই ধরনের সুবিধা নিয়ে থাকে। এখন বাংলাদেশের বন্দর ও সড়ক ব্যবহার করে আমদানি রপ্তানি কাজ চালানোর একটি সুযোগ তারা পাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চুক্তির আওতায় ভুটান আমদানি-রপ্তানির প্রয়োজনে বাংলাদেশের ভূখণ্ডসহ বন্দর ব্যবহার করতে পারবে। এই চুক্তি অনুযায়ী রাজস্ব নির্ধারণের জন্য এখন বিষয়টি এনবিআরের কাছে রয়েছে। এর জন্য তারা কী পরিমাণে বা হারে রাজস্ব দেবে সেটা এনবিআর ঠিক করবে। সবকিছু শেষে চূড়ান্ত একটি চুক্তি হবে।
ভূমিবেষ্টিত বলে ভুটানের কোন সমুদ্রবন্দর নেই। পণ্য পরিবহনের জন্য স্থলবন্দর এবং আকাশপথই ভরসা দেশটির। এখন সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনের জন্য ভুটানকে বাংলাদেশের তিন সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম, মোংলা এবং পায়রা ব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে সরকার। দুই দেশের অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তির (পিটিএ) ফলে ভুটান থেকে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বোল্ডার পাথর এবং সতেজ ফলমূলসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করা যাবে। ভুটানি ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, প্লাস্টিক সামগ্রী, ওষুধসহ বেশ কিছু পণ্য নিতে পারবেন।
চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করার ক্ষেত্রে প্রস্ততি কতটুকু রয়েছে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক জুমবাংলাকে বলেন, সরকারিভাবে এই চুক্তি সম্পন্ন হলেও এখন দুদেশের দাপ্তরিক অনেক প্রসিডিউর বাকি রয়েছে। এই চুক্তি বাস্তবায়নের আগে বিশেষ করে এনবিআর ও কাস্টমসের অফিসিয়ালি প্রস্তুতির দরকার আছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভুটান বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, মোংলা, পায়রাবন্দর ও সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারে। এছাড়া আন্তঃদেশীয় পরিবহন ব্যবস্থার সুবিধার্থে তারা চাইলে, বাংলাদেশের যেকোনো স্থানে গুদামও তৈরি করতে পারে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্টের ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরগুলো দিয়ে মালামাল পরিবহন করতে চায় ভূমি বেষ্টিত দেশ ভুটান।
তবে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে আমাদের নদীপথগুলো ব্যবহার করে ভারতের ধুবড়ি বন্দরে মালামাল নিয়ে যেতে চায় ভূটান। ধুবড়ি থেকে ভুটান অনেক কাছে, ফলে তারা বাংলাদেশের নদীপথগুলো ব্যবহার করে সেখানে পণ্য পরিবহন করতে চায়।
নৌপথে রৌমারী-চিলমারী হয়ে পণ্য আনা-নেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি রেলপথেও ভুটানকে পণ্য আমদানি-রপ্তানির সুযোগ করে দিতে বাংলাদেশ প্রাথমিকভাবে রাজি হয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রোহনপুর-সিংগাবাদ রেলরুটটি চালু করা হবে।
উল্লেখ্য, ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের এই চুক্তি হওয়ায় বাংলাদেশের প্রায় ১০০টি পণ্য ভুটানে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে আর ভূটানের ৩৪টি পণ্য বাংলাদেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো বাড়বে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-২০১৯ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য হয়েছে ৫৭.৯০ মিলিয়ন ডলারের। ভুটান থেকে বাংলাদেশে সবজি ও ফলমূল, খনিজ দ্রব্য, নির্মাণ সামগ্রী, বোল্ডার পাথর, চুনাপাথর, কয়লা, পাল্প, রাসায়নিক আমদানি করা হয়।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ থেকে ভুটানে তৈরি পোশাক, আসবাব, খাদ্য সামগ্রী, ওষুধ, প্লাস্টিক, বৈদ্যুতিক পণ্য রপ্তানি হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।