কক্সবাজারের দক্ষিণে কুতুবদিয়া দ্বীপের পেকুয়াতে সাবমেরিন ঘাঁটি করার কাজ চীনকে দিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এ সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বিগ্ন ভারত। কিন্তু কেন? বাংলাদেশ যখন সাবমেরিন কেনে করে তখন অনেকটা প্রকাশ্যে এর বিরোধিতা করে ভারত। দেশ জানান দেয়, তারা এই সিদ্ধান্তে রুষ্ট।
ভারতের অধিকাংশ চ্যানেলেই বাংলাদেশের সাবমেরিন নিয়ে প্রচার শুরু করে টক শোতে। যেখানে আলোচনার বিষয় ছিলো, বাংলাদেশ কেন চীন থেকে সাবমেরিন কিনছে? একটি টকশো’র ভিডিওতে দেখা যায়, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত বীণা সিক্রি ও দুই জন সামরিক বিশ্লেষক বাংলাদেশের সাবমেরিন কেনা ভারতের জন্য কতটা হুমকি তা নিয়ে কথা বলেছেন।
সমস্যা হল, সাবমেরিন কেনার ব্যাপারটি যে হতে যাচ্ছে সেটি ভারত বুঝতে পারেনি অথবা আটকাতে পারেনি। অনেকটা হুট করেই চীন থেকে সাবমেরিন চলে আসে বাংলাদেশে। সাবমেরিন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভারতের চরম হতাশার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট করেই বলেন আমরা আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কোন দেশ থেকে কী অস্ত্র কিনব সেটা আমাদের নিজস্ব ব্যাপার, অন্য কোন দেশের কথা শুনতে বাংলাদেশ বাধ্য নয়।
এখন প্রশ্ন হল এত অস্ত্র থাকতে কেন সাবমেরিন নিয়ে ভারতের উৎকণ্ঠা? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানদের ইউবোটগুলি মিত্র শক্তির বুকে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল। কারণ গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক জাহাজগুলির নিরাপত্তা নিয়ে মিত্র শক্তিকে সব সময় দুশ্চিন্তা করা লাগত। অনেক ক্ষেত্রে যুদ্ধজাহাজ দিয়ে এসকোর্ট করেও রক্ষা পাওয়া যেত না। সাবমেরিনকে স্ট্রাটেজিক ওয়েপন বলা হয়ে থাকে এর ভূমিকার জন্য। এমন মনে করার কোন কারণ নেই যে, সাবমেরিন দিয়ে শুধু শত্রু জাহাজ ধ্বংস করা হয়। যুদ্ধের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল সাপ্লাই চেইন ধ্বংস করা। যত শক্তিশালী দেশ হোক না কেন যদি সাপ্লাই চেইন বা সরবরাহ ব্যবস্থা ধ্বংস হয় তাহলে সে দেশ মাথা নত করতে বাধ্য।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও আমরা বলতে, পারি সাবমেরিন দিয়ে আমরা গভীর সমুদ্রে মিয়ানমারের সমুদ্রগামী বাণিজ্যিক জাহাজের ওপর অবরোধ আরোপ করতে সক্ষম। গভীর সমুদ্রে মিয়ানমারের মত দেশের নৌ-জাহাজ খুব বেশি সুবিধা করতে পারবে না সেটা তাদের জাহাজের সি স্টেট কম থাকার কারণে। মিয়ানমার নৌবাহিনীতে যত জাহাজ আছে অধিকাংশ জাহাজ গভীর সমুদ্রে সর্বাবস্থায় মিশন পরিচালনা করতে সক্ষম নয়। কিন্তু বাংলাদেশের বানানো তুলনামূলক কম ওজনের জাহাজের ডিজাইন এমনভাবে করা সেটি সি স্টেট ৪ এর অধিক পরিবেশে অনায়াসে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। সেক্ষেত্রে শত্রু দেশের নৌপথ বন্ধ করার সব থেকে বড় অস্ত্র হল সাবমেরিন।
যুদ্ধের অনেক বড় একটি অংশ ভীতি। শত্রুকে ভীত করে দিয়ে মনোবল ধ্বংস করে দিতে পারেন যা আপনার যুদ্ধ জয়কে ত্বরান্বিত করবে। এক স্কোয়াড্রন মাল্টিরোল বিমান যতটুকু ভয় সঞ্চার করতে পারে শত্রুর মনে একটা সাবমেরিন তার থেকে অনেক বেশি ত্রাস সৃষ্টি করতে সক্ষম। যারা সামরিক এনালিস্ট (বাংলাদেশ বা ভারতের) তারা ঠিক বুঝতে পেরেছেন এই স্ট্রাটেজিক ওয়েপন থাকার হুমকি কতটুকু। এর আরেকটি দিক হল, শত্রু যদি নৌ অবরোধ দেয় সেটা ভাঙ্গতেও সব থেকে বড় ভূমিকা এই সাবমেরিনের যেটা আপনাকে দিতে পারবে না।
এজন্যই বঙ্গোপসাগরে চীনের যুদ্ধজাহাজ প্রবেশ করলেই সন্ত্রস্ত হয়ে উঠে ভারত। এখন সেই ভীতির সাথে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের সাবমেরিন ঘাঁটি। চীনের মত দেশ যখন এই ধরনের ঘাঁটির কাজ পায় তখন প্রশ্ন থেকেই যায় বঙ্গোপসাগরে কি ভারত তার প্রভাব হারিয়ে ফেলবে?
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।