সকাল সাতটা। ঢাকার গুলশান টু ব্লকে বাসা থেকে বের হচ্ছেন আরিফুল হক। অফিসের চাপ, মিটিং, ডেডলাইন – মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। পেটে ক্ষুধার জ্বালা। সামনেই দাঁড়িয়ে প্রিয় ফুচকা ওয়ালা। মন বলছে, “এক প্লেট খেয়ে নাও, সময়ও বাঁচবে!” কিন্তু গতকাল রাতে পেটের অসুখে ভোগার স্মৃতি এখনও টাটকা। এই দ্বিধা, এই লড়াই – বাংলাদেশের কোটি কোটি শহুরে মানুষের নিত্যসঙ্গী। ব্যস্ত জীবনে বাইরের খাবার হয়ে উঠেছে সহজ সমাধান, কিন্তু সেই সহজ পথই ধীরে ধীরে আমাদের স্বাস্থ্যের ভিত কুরে খাচ্ছে। ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্থূলতা – এসব শব্দ এখন শুধু পরিসংখ্যান নয়, প্রতিবেশী, সহকর্মী, আত্মীয়ের মুখে শোনা বাস্তব গল্প। বাইরের খাবার কম খাওয়ার উপায় শুধু একটি পদ্ধতি নয়, এটি আপনার জীবনযাত্রায় একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা, একটি সুস্থ ভবিষ্যতের দিকে দৃঢ় পদক্ষেপ। এই নিবন্ধ শুধু টিপস নয়, আপনার জন্য একটি রোডম্যাপ – জেনে নিন কীভাবে বাইরের খাবারের প্রতি আসক্তি কাটিয়ে উঠবেন, ঘরে তৈরি খাবারের আনন্দ ফিরে পাবেন এবং দীর্ঘ, প্রাণবন্ত জীবন উপভোগ করবেন।
বাইরের খাবার কম খাওয়ার উপায়: কেন এই যুদ্ধটা জরুরি? (H2)
বাংলাদেশে ফাস্ট ফুডের বাজার প্রতি বছর ১৫%-এরও বেশি হারে বাড়ছে (সূত্র: বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি)। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনার মতো মহানগরীর রাস্তার ধারে, মার্কেটের ভেতরে, অফিস কম্পাউন্ডের সামনে – জায়গায় জায়গায় গজিয়ে উঠেছে ফুচকা স্টল থেকে শুরু করে বার্গার শপ, ফ্রাইড চিকেন সেন্টার। এই সহজলভ্যতা, স্বাদের প্রলোভন এবং সময়ের স্বল্পতায় বাইরের খাবার আমাদের ডায়েটের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। কিন্তু এর পেছনের মাশুলটা কতটা ভয়াবহ?
- স্বাস্থ্য ঝুঁকির ডোমিনো ইফেক্ট: বেশিরভাগ বাইরের খাবারেই থাকে অতিরিক্ত তেল, লবণ, চিনি এবং প্রিজারভেটিভ। নিয়মিত সেবনে এগুলো উচ্চ রক্তচাপ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, লিভারের সমস্যা, এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। বাংলাদেশ নন-কমিউনিকেবল ডিজিজেস (NCD) কন্ট্রোল প্রোগ্রামের তথ্য অনুযায়ী, দেশে NCD-জনিত মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে, যার পেছনে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি।
- খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নচিহ্ন: রাস্তার খাবারে ভেজাল, অস্বাস্থ্যকর পানি, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করা কাঁচামাল – প্রতিদিনের ঘটনা। খাদ্যে ভেজাল ও ভেজাল খাদ্যের বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন থাকলেও এর বাস্তব প্রয়োগ অনেক ক্ষেত্রেই সীমিত। অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি সবসময়ই থেকে যায়।
- অর্থনৈতিক চাপ: প্রতিদিন অফিসে বা কলেজে এক বেলা বাইরে খাওয়া মানে মাসের শেষে উল্লেখযোগ্য অর্থ খরচ। এই টাকা দিয়ে পরিবারের জন্য পুষ্টিকর খাবার কেনা বা সঞ্চয় করা সম্ভব হতো।
- পারিবারিক বন্ধনের ক্ষয়: বাইরের খাবারের ওপর নির্ভরশীলতা ঘরে রান্না কমিয়ে দেয়। একসাথে বসে খাওয়ার সুযোগ কমে যায়, যা পারিবারিক বন্ধনকে দুর্বল করে।
বাইরের খাবার কম খাওয়ার উপায় খোঁজার অর্থ শুধু অসুখ এড়ানো নয়; এটি আপনার সার্বিক জীবনযাত্রার মান উন্নত করা, অর্থ সাশ্রয় করা এবং পরিবারের সাথে সুন্দর সময় কাটানোর সুযোগ ফিরে পাওয়া। এই সচেতন সিদ্ধান্তই হতে পারে আপনার পরিবারের সুস্বাস্থ্যের ভিত্তিপ্রস্তর।
ঘরে তৈরি খাবারের জাদু: বাইরের খাবার কম খাওয়ার উপায়ের প্রথম সোপান (H2)
বাইরের খাবারের প্রলোভন কমাতে বাইরের খাবার কম খাওয়ার উপায় এর সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র হল ঘরে রান্নার প্রতি ভালোবাসা ও দক্ষতা বাড়ানো। মনে রাখবেন, ঘরে তৈরি খাবার মানেই বিরতিহীন, ক্লান্তিকর রান্না নয়!
- পরিকল্পিত রান্না (Meal Planning & Prepping):
- সাপ্তাহিক মেনু: রোববার বিকেলেই আগামী সপ্তাহের লাঞ্চ/ডিনারের মেনু ঠিক করুন। এতে বাজার করা সহজ হবে, কাঁচামাল নষ্ট হবে কম।
- বাল্ক কুকিং: সপ্তাহান্তে একটু সময় বের করে বড় পরিমাণে ডাল, তরকারির ঝোল, সিদ্ধ ডিম, এমনকি মাংস/মাছের কিছু আইটেম প্রস্তুত রাখুন। ফ্রিজে সংরক্ষণ করে সপ্তাহের ব্যস্ত দিনগুলোতে খুব অল্প সময়ে পুষ্টিকর খাবার তৈরি করা সম্ভব।
- কাটিং প্রিপ: শাকসবজি ধুয়ে, কেটে এয়ারটাইট কন্টেইনারে ফ্রিজে রাখুন। রান্নার সময় অনেকটাই কমে যাবে।
- বাস্তব উদাহরণ: সিলেটের সায়মা আক্তার, একজন ব্যাংকার, শনিবার সকালে ২ ঘন্টা ব্যয় করেন পরের সপ্তাহের জন্য ডাল, আলু ভর্তা, এবং এক ধরণের তরকারি রান্না করে রাখতে। ফলে তার সপ্তাহের ব্যস্ত দিনগুলোতে বাইরের খাবারের ওপর নির্ভরতা প্রায় শূন্যের কোটায়।
- স্মার্ট ও দ্রুত রেসিপির খোঁজ:
- ইন্টারনেটে বাংলা ব্লগ, ইউটিউব চ্যানেলে (যেমন: “Banglar Rannaghar”, “Pitha Pora”) অসংখ্য সহজ, স্বাস্থ্যকর ও দ্রুত রেসিপি পাওয়া যায়। “১০ মিনিটের রেসিপি”, “এক প্যান রেসিপি” গুলো ব্যস্ত দিনের জন্য আদর্শ।
- টিফিনে স্বাস্থ্যকর বিকল্প: ভাত-তরকারির বদলে রুটি-সবজি, স্যান্ডউইচ (গোটা শস্যের ব্রেডে), সালাদ, ফল, বাদাম, দই – এগুলো প্যাক করে নেওয়া যায় সহজেই।
- অফিসে/বাইরে খাওয়ার জন্য ঘর থেকে নিয়ে যাওয়া (Packing Lunch):
- ভালো মানের, লিকপ্রুফ টিফিন ক্যারিয়ার বা বাক্স কিনুন। দেখতে আকর্ষণীয় হলে খাওয়ার ইচ্ছাও বাড়বে।
- রাতের খাবারের কিছু অংশ পরের দিনের লাঞ্চ হিসেবে রাখুন।
- অভ্যন্তরীণ লিংক: ঘরে তৈরি টিফিনের জন্য দারুণ কিছু আইডিয়া পাবেন আমাদের অন্য নিবন্ধে – স্বাস্থ্যকর টিফিন আইডিয়া: অফিসে সুস্থ থাকার সহজ উপায়।
- রান্নাকে আনন্দময় করুন:
- পরিবারের সদস্যদের সাথে রান্নায় অংশ নিন। সঙ্গীত শুনতে শুনতে রান্না করুন।
- নতুন নতুন রেসিপি ট্রাই করুন – এতে একঘেয়েমি দূর হবে।
প্রলোভনকে জয় করার কৌশল: বাইরের খাবার কম খাওয়ার উপায়ের মনস্তাত্ত্বিক দিক (H2)
বাইরের খাবার কম খাওয়ার উপায় শুধু রান্নার দক্ষতা নয়, এটি মানসিক শক্তি এবং কৌশলেরও খেলা।
- সচেতন সিদ্ধান্ত গ্রহণ (Mindful Eating):
- বাইরের খাবার কেনার আগে নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন: “আমার কি সত্যিই ক্ষুধা লেগেছে, নাকি এটি শুধুই অভ্যাস বা আবেগজনিত খাওয়া?”
- খাওয়ার সময় মনোযোগ দিন খাবারের স্বাদ, গন্ধ, টেক্সচারে। ধীরে ধীরে চিবিয়ে খান। এতে কম খাবারে তৃপ্তি আসবে এবং অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি আকর্ষণ কমবে।
- ট্রিগার চিহ্নিতকরণ ও এড়ানো:
- আপনি কোন পরিস্থিতিতে বাইরের খাবার খেতে বেশি প্রলুব্ধ হন? (যেমন: অফিসে স্ট্রেস, বন্ধুদের সাথে আড্ডা, টিভি দেখার সময়, রাতের বেলা)?
- এই ট্রিগারগুলো এড়ানোর বা মোকাবেলা করার পরিকল্পনা করুন। যেমন: স্ট্রেসে ঘরে তৈরি স্যালাড বা ফল খান, বন্ধুদের সাথে কফি শপে গেলে শুধু চা/কফি পান করুন, রাতে স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স প্রস্তুত রাখুন।
- স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স প্রস্তুত রাখা:
- ক্ষুধা লাগলে বা খাওয়ার ইচ্ছা জাগলে হাতের কাছে যেন স্বাস্থ্যকর বিকল্প থাকে সেটা নিশ্চিত করুন। যেমন: ফল (আপেল, কলা, পেয়ারা), বাদাম (কাঠবাদাম, আখরোট – পরিমিত), দই, ছোলা ভাজা, মুড়ি, ঘরে তৈরি বিস্কুট বা কেক।
- এই স্ন্যাক্সগুলো দ্রুত প্রস্তুত করা যায় এমন কিছু টিপস জানতে ভিজিট করুন স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস: ক্ষুধার যুদ্ধে আপনার অস্ত্র।
- ধীরে ধীরে পরিবর্তন আনুন (Gradual Change):
- হঠাৎ করে বাইরের খাবার একদম বন্ধ করে দেওয়া কঠিন এবং ব্যাকফায়ার করতে পারে। লক্ষ্য নির্ধারণ করুন যেমন: “আগে প্রতিদিন বাইরে খেতাম, এখন সপ্তাহে তিন দিন খাব”, তারপর ধীরে ধীরে কমিয়ে আনুন।
- নিজেকে ছোট ছোট সাফল্যের জন্য পুরস্কৃত করুন (খাবারের বাইরে অন্য কিছু দিয়ে, যেমন: বই কেনা, গান শোনা, সিনেমা দেখা)।
বাইরের খাবার খেতেই হবে? তাহলে বুদ্ধিমানের মতো বাছুন! (H2)
সম্পূর্ণ এড়ানো সম্ভব না হলে, বাইরের খাবার নির্বাচনে সতর্কতা অবলম্বন করাই বাইরের খাবার কম খাওয়ার উপায় এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
- রেস্টুরেন্ট/স্টল নির্বাচনে সতর্কতা:
- পরিচ্ছন্নতা: রান্নাঘর এবং পরিবেশনের জায়গা কতটা পরিষ্কার, কর্মীরা হাইজিন মেনে চলছেন কিনা (হাতের গ্লাভস, ক্যাপ ইত্যাদি) খেয়াল করুন।
- ভিড়: সাধারণত যে রেস্তোরাঁ বা স্টলে স্থানীয় লোকজনের ভিড় বেশি, সেখানে খাবার তাজা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
- খাদ্য নিরাপত্তা রেটিং: কিছু শহরে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ রেস্টুরেন্টের রেটিং দিয়ে থাকেন (যদি থাকে)।
- কী খাবেন, কী খাবেন না:
- এড়িয়ে চলুন: অতিরিক্ত তেলে ভাজা আইটেম (ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিকেন ফ্রাই, সমুচা, পিয়াজু, পুরি), প্রক্রিয়াজাত মাংস (সসেজ, বেকন), ক্রিমি বা মেয়োনিজ-ভিত্তিক সস, কোমল পানীয়, অতিরিক্ত মিষ্টি ডেজার্ট।
- বেছে নিন: গ্রিলড, বেকড বা স্টিমড খাবার (গ্রিলড চিকেন/ফিশ, স্টিমড মমো), সালাদ (ড্রেসিং আলাদা চেয়ে নিন), ডাল/স্যুপ, রোটি/পরোটা (ঘি/বাটার কম), টকদই (দই-চিঁড়া), তাজা ফলের রস (চিনি ছাড়া)।
- পানীয়: বোতলজাত পানি, লেবু পানি, ডাবের পানি, সাদা চা/কফি (চিনি কম)।
- পোর্শন কন্ট্রোল:
- ছোট সাইজ অর্ডার করুন।
- শেয়ার করে খান।
- প্লেটের অর্ধেক শাকসবজি দিয়ে পূরণ করার চেষ্টা করুন।
পরিবার ও সমাজ: বাইরের খাবার কম খাওয়ার উপায়ে আপনার সহযোদ্ধা (H2)
একা এই লড়াই কঠিন। পরিবার এবং বন্ধুবৃত্তের সমর্থন বাইরের খাবার কম খাওয়ার উপায় কে অনেক সহজ করে তোলে।
- পরিবারের সাথে আলোচনা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা:
- বাইরের খাবারের ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে খোলামেলা আলোচনা করুন।
- একসাথে ঘরে রান্নার পরিকল্পনা করুন এবং দায়িত্ব ভাগ করে নিন। সপ্তাহে একদিন “ঘরে রান্না”র দিন বা “বাইরের খাবার মুক্ত” দিন পালন করুন।
- বাচ্চাদের ছোটবেলা থেকেই ঘরে তৈরি খাবারের গুরুত্ব ও স্বাদ চিনিয়ে দিন। তাদের রান্নায় উৎসাহিত করুন।
- সামাজিক চাপ মোকাবেলা:
- বন্ধু-বান্ধব বা সহকর্মীদের সাথে আড্ডা বা পার্টিতে গেলে আগে থেকেই কিছু খেয়ে নিন, যাতে অস্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্সে হাত কম যায়।
- আত্মবিশ্বাসের সাথে বলুন যে আপনি স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন এবং বাইরের খাবার কম খাচ্ছেন। প্রায়ই দেখা যায় অন্যরাও আপনার উদাহরণ অনুসরণ করে।
- রেস্টুরেন্টে মিটিং হলে মেনু থেকে স্বাস্থ্যকর অপশন বেছে নিন বা আগে থেকে রেস্টুরেন্টে ফোন করে আপনার ডায়েটারি রিকোয়ারমেন্ট জানিয়ে দিন।
দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যের চাবিকাঠি: ধারাবাহিকতা ও নমনীয়তা (H2)
বাইরের খাবার কম খাওয়ার উপায় শুধু ডায়েট নয়, এটি একটি জীবনধারা পরিবর্তন। দীর্ঘমেয়াদে টিকিয়ে রাখতে:
- বাস্তবসম্মত লক্ষ্য: অসম্ভব লক্ষ্য (যেমন: “আজীবন আর বাইরে খাবো না”) না রেখে বাস্তবসম্মত লক্ষ্য রাখুন (“সপ্তাহে ৮০% খাবার ঘরে খাব”)।
- নমনীয়তা: মাঝেমধ্যে বিশেষ অনুষ্ঠানে বা ভ্রমণে বাইরের খাবার খেয়ে ফেললে নিজেকে শাস্তি দেবেন না। সেটাকে ব্যতিক্রম হিসেবে মেনে নিন এবং পরের দিন স্বাভাবিক রুটিনে ফিরে যান।
- ফোকাস স্বাস্থ্য ও সুস্থতায়: ওজন কমানো নয়, বরং নিজের সুস্থতা, এনার্জি লেভেল বাড়ানো এবং অসুস্থতা থেকে দূরে থাকাকে প্রাথমিক লক্ষ্য করুন।
- অগ্রগতি ট্র্যাক করুন: একটি ডায়েরিতে বা অ্যাপে আপনার খাদ্যাভ্যাস ট্র্যাক করুন। সপ্তাহে কতবার বাইরে খেলেন, কী খেলেন তা নোট করুন। উন্নতি দেখে নিজেকে অনুপ্রাণিত করুন।
- পেশাদার সাহায্য: বিশেষ কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা (ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা) থাকলে বা খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনে খুব কঠিন মনে হলে একজন রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ান বা নিউট্রিশনিস্টের পরামর্শ নিন।
বাইরের খাবার কম খাওয়ার উপায় শুধু কিছু টিপস নয়; এটি আপনার শরীরকে শ্রদ্ধা জানানোর, আপনার স্বাস্থ্যের মূল্য দেয়ার এবং আপনার ভবিষ্যতকে উজ্জ্বল করার একটি সচেতন সিদ্ধান্ত। প্রতিটি ঘরে তৈরি খাবার শুধু পেট ভরায় না, তা আপনার ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং আপনাকে দেয় প্রাণবন্ত অনুভূতি। প্রতিবার যখন আপনি বাইরের খাবারের প্রলোভনকে ‘না’ বলবেন, আপনি আসলে নিজের জন্য ‘হ্যাঁ’ বলছেন – একটি দীর্ঘ, সুস্থ ও সুখী জীবনের জন্য। শুরু করুন আজই। ছোট্ট একটি পদক্ষেপ – হয়তো আজ রাতের খাবারটা ঘরেই বানিয়ে খাওয়া – হতে পারে আপনার সুস্থতার যাত্রার শুভ সূচনা। আপনার শরীর, আপনার পরিবার, আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুস্থতা এই সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। পুষ্টিকর খাবারের আনন্দে জীবনকে রাঙিয়ে তুলুন, নিজেকে সময় দিন, এবং সুস্থ থাকুন।
জেনে রাখুন (FAQs) (H2)
- প্রশ্ন: বাইরের খাবার একদম বন্ধ করতে হবে কি?
উত্তর: একদম বন্ধ করা বাধ্যতামূলক নয় এবং অনেকের জন্যই বাস্তবসম্মত নাও হতে পারে। মূল লক্ষ্য হলো বাইরের খাবার কম খাওয়ার উপায় বের করে এর পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো এবং যখন খেতেই হয়, তখন স্বাস্থ্যকর পছন্দ করা। বিশেষ অনুষ্ঠান বা প্রয়োজনে মাঝেমধ্যে খাওয়া যেতে পারে, কিন্তু নিয়মিত অভ্যাস না হওয়াই কাম্য। - প্রশ্ন: রাস্তার খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর: রাস্তার খাবার খাওয়ার সময় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন পরিচ্ছন্নতা ও তাজাত্বে। খাবার তৈরির স্থান ও ব্যক্তির পরিচ্ছন্নতা দেখুন। খোলা খাবার (যেমন: ফুচকার আচার, স্যালাড) যেখানে মাছি বসতে পারে বা ধুলোবালি লাগতে পারে, সেগুলো এড়িয়ে চলুন। গরম গরম পরিবেশিত খাবার নিরাপদ। ভেজা বা বাসি দেখালে খাবেন না। পানি অবশ্যই বোতলজাত বা ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করা ব্যবহার করুন। - প্রশ্ন: অফিসে ব্যস্ততার মধ্যে ঘরে তৈরি টিফিন নেওয়ার সময় কীভাবে পাব?
উত্তর: পরিকল্পনা এবং প্রিপারেশনই মূল চাবিকাঠি। সপ্তাহান্তে বা রাতের খাবারের সময় পরের দিনের জন্য একটু বেশি রান্না করে রাখুন। সহজ রেসিপি বেছে নিন যা দ্রুত তৈরি করা যায় (যেমন: ডাল, ডিম ভর্তা, সিদ্ধ সবজি দিয়ে রুটি/পরোটা রোল)। রান্না করা ডাল/তরকারি ফ্রিজে রাখলে বেশ কয়েকদিন ভালো থাকে। দ্রুত সালাদ বা স্যান্ডউইচ বানানো যায়। একবার রুটিন তৈরি হয়ে গেলে সময় বের করা সহজ হবে। - প্রশ্ন: বাচ্চারা বাইরের খাবার বেশি পছন্দ করলে কী করব?
উত্তর: ধৈর্য ধরুন এবং ধীরে ধীরে পরিবর্তন আনুন। বাচ্চাদের জন্য ঘরে তৈরি করে আকর্ষণীয়ভাবে পরিবেশন করুন (রঙিন সালাদ, ফান শেপের স্যান্ডউইচ, হোমমেড পিজা/বার্গার)। তাদের সাথে রান্নায় অংশ নিতে দিন – নিজেরা বানালে খেতে বেশি আগ্রহী হয়। বাইরের খাবারের ক্ষতিকর দিকগুলো বয়স উপযোগী করে বুঝিয়ে বলুন। পুরস্কার বা বিশেষ দিন হিসেবে মাঝেমধ্যে বাইরের খাবার দিতে পারেন, কিন্তু নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হতে দেবেন না। - প্রশ্ন: বাইরের খাবার কম খেলে কি সত্যিই স্বাস্থ্যের উন্নতি দেখা যাবে?
উত্তর: অবশ্যই! বাইরের খাবার কম খাওয়া এবং ঘরে তৈরি তাজা, পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার অভ্যাসের বহু ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। ওজন নিয়ন্ত্রণে আসা, হজমশক্তি ভালো হওয়া, এনার্জি লেভেল বেড়ে যাওয়া, ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যে উন্নতি, রক্তচাপ ও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকা, এবং দীর্ঘমেয়াদে ডায়াবেটিস, হৃদরোগের ঝুঁকি কমার মতো সুবিধাগুলো স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায়। অনেকেই মানসিক স্বচ্ছতাও অনুভব করেন। - প্রশ্ন: বাইরের খাবার কম খাওয়ার পরিকল্পনা শুরু করার পর যদি আবারও পুরনো অভ্যাসে ফিরে যাই?
উত্তর: এটি একেবারেই স্বাভাবিক। কোনো অভ্যাস পরিবর্তনই রাতারাতি হয় না এবং সেখানে উত্থান-পতন থাকবেই। নিজেকে দোষারোপ করবেন না। যে কারণগুলোতে ফিরে গেলেন সেগুলো চিহ্নিত করুন। কী পরিস্থিতিতে বা কোন ট্রিগারে ফিরে গেলেন? সেই পরিস্থিতি সামনে আসলে কী করবেন তার পরিকল্পনা করুন। ব্যর্থতাকে চূড়ান্ত মনে না করে আবার শুরু করুন। মনে রাখবেন, প্রতিটি নতুন শুরুই আপনাকে আপনার লক্ষ্যের এক ধাপ কাছাকাছি নিয়ে যায়। ধারাবাহিকতাই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।