জুমবাংলা ডেস্ক : পঞ্চগড়ে এক মাস হতে বাঘ আতঙ্কে কাটাচ্ছে চারটি গ্রামের সহস্রাধিক গ্রামবাসী। বাঘের আনাগোনা দেখছে প্রত্যক্ষ গ্রামবাসীদের কেউ কেউ। বাঘে গৃহপালিত গরুকে কামড় দিয়ে মারা গেছে এমন ঘটনাও ঘটেছে ওই এলাকায়। ছাগল ও কুকুরকে ধরে নিয়ে খেয়ে ফেলার ঘটনা ঘটে গত একমাস পূর্ব হতে। বাঘের পায়ের ছাপ পাওয়া যায় সেই গ্রামগুলোতে। বাঘ ধরতে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার অধীনে ঢাকা থেকে প্রশিক্ষিত কর্মীদের একটি দল কাজ করছে সেই এলাকায়। ঘটনাটি ঘটেছে পঞ্চগড় সদর উপজেলা, তেতুঁলিয়া উপজেলার সাতমেরা ও দেবনগড় ইউনিয়নের মুহুরিজোত, সাহেবীজোত, উষাপাড়া ও বাদিয়াগজ গ্রামে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সেখানকার চার একর জমিতে পুরোনো চা বাগানের চার পাশেই বাঘ দেখার আশায় জেলার বিভিন্ন এলাকা হতে ছুটে গিয়ে ভীড় করেছে হাজার হাজার উৎসুক জনতা। গ্রামবাসীদের দাবী জেলা প্রশাসন ও সামাজিক বনবিভাগ অথবা সরকারের অন্য কোন সংস্থা যদি বাঘ উদ্ধারের তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা না নেয় তাহলে সড়ক অবরোধের ঘোষনা দিয়েছে। ঘটনার খবর শুনে সামাজিক বনবিভাগের উদ্যোগে চারটি গ্রামে মাইকিং করে বুধবার রাতে সচেতন করেছেন।
দেবনগড় ইউনিয়নের উষাপাড়া গ্রামের আবুল কালাম জানায়, বুধবার বিকেলে আমার গরুটিকে বাঘে গলায় কামড়ে ধরে হত্যা করেছি । আমি নিজেই চা বাগানে চিতা বাঘকে দেখেছি এবং সে সময় আমার চিৎকারে লোকজন ছুটে আসে। চা বাগানের ভিতরে আমি বাঘটিকে দেখেছি বাঘটি আমার দিকে তেড়ে আসতে চেষ্টা করেছিল তবে চা বাগানের ডালের কারনে বেরিয়ে আসতে পারেনি।
সাহেবীজোত গ্রামের হাজিব উদ্দিন নামের একজন জানায় বর্তমানে আমরা এক হাজার পরিবার বাঘ আতঙ্কে রয়েছি। গত এক মাস হতে আমরা দশমাইল পাকা রাস্তা পার হওয়ার সময় বাঘের আনাগোনা দেখেছি। প্রশাসন যদি বাঘ ধরতে না পারে তাহলে আজ থেকে আমার রাতে পরিবার নিয়ে ঘুমাতে পারবোনা।
মুহুরীজোতা গ্রামের রুবেল রানা জানায় এই পুরোনো চা বাগানটিতে যদি বাঘ রয়েছে আমরা আতঙ্কে আর রাতে ঘুমাতে পারিনা । এজন্য এই পুরোনো চা বাগান কেটে ফেলে বাঘ ধরার অনুরোধ করছি প্রশাসনের প্রতি।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশের উপ পরিদর্শক শাহীনুজ্জামান এর নেতৃত্বে উৎসুক জনতার ভীড় সামলাতে এবং নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যেতে সচেতন করার কাজ করছে ওই এলাকায়।
এদিকে ঘটনার খবর শুনে বৃহস্পতিবার সদর উপজেলা নির্বাহি অফিসার আরিফ হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন একই সাথে উৎসুক জনতার ভীড় কমাতে পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশকে বলেছেন। সরেজমিনে তিনি জানায় গত কয়েকদিন আগে থেকে আমরা শুনতেছি যে এই এলাকায় বাঘের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। কিছু প্রত্যক্ষদর্শী এবং গরুকে হত্যা করার মালিক ও বাঘের পায়ের ছাপ থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে পুরোনা চা বাগানটিতে বাঘের অস্তিত্ব রয়েছে। জেলা প্রশাসক এ বিষয়টি সার্বক্ষনিক তদারকি করছে। আমরা বন বিভাগের সমন্বয়ে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো বাঘটিকে উদ্ধারের জন্য। তবে এলাকাবাসীদের অনুরোধ করছি এখানে যাতে কোন দোকান না করে এবং বাড়িতে থাকার অনুরোধ জানায় গ্রামবাসীকে। গ্রাম পুলিশ আইনশৃংখলা বাহীনি ইউপি চেয়ারম্যান তার গ্রাম পুলিশদের নিয়েও কাজ করবে। বন বিভাগ প্রযুক্তির মাধ্যমে তাদের কর্ম পরিকল্পনা চালিয়ে যাবে।
এদিকে সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের জানায় আমরা গতকাল শুনেছি এখানে বাঘের মাধ্যমে একটি গরুকে হত্যা করা হয়েছে। তাৎক্ষনিক জেলা বন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের জন্য । জানা গেছে এখানে একটি চিতাবাঘ তার দুটি বাচ্চা সহ ভারতথেকে বাঘ আসতে পারে বলে আমরা স্থানীয় সুত্রে খবর পেয়েছি। প্রধান বন সংরক্ষককে বিষয়টি জানানো হয়েছে। ভেটেরেনারি সার্জন সহ একটি দল এখানে আজ থেকেই বাঘ ধরতে কাজ করবে। ঢাকা থেকে তিন সদস্যের একটি টিম বৃহস্পতিবার থেকে কাজ করবে। প্রথমে আমরা চেস্টা করবো বাঘটিকে ধরার জন্য যদি ধরা না পড়ে তাহলে মানুষের যাতে কোন অসুবিধা না হয় নিরাপদে বাঘ ভারতে ফিরে যাওয়ার জন্য ব্যবস্থা করা হবে। সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাজ করবে বন বিভাগ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।