নাজমুল ইসলাম : রাজধানীসহ সারাদেশের বাজারে এখন চালের চেয়ে আলু বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে মোটা ও মাঝারি ধরনের চালের দামকে ছাড়িয়ে গেছে আলুর দাম। দামের চোটে সবচেয়ে সহজলভ্য নিত্যপণ্যটি থেকেও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে অনেক ক্রেতা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি কার্ডিনাল, গ্যানোলা, ডায়মন্ডসহ বিভিন্ন জাতের আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। তবে বড় বাজার থেকে পাল্লা (৫ কেজি) হিসাবে কিনলে কিছুটা কমে পাওয়া যায়। অথচ ২০ দিদন আগে আলুর কেজি ছিল ৫৫-৬০ টাকা।
সরকারি সংস্থা টিসিবি’র হিসাবে, গত বছর এই সময়ে খুচরা বাজারে আলুর কেজি ছিল ৪৫-৫০ টাকা, যা এখন ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে দুই মাস আগে পণ্যটির আমদানি শুল্ক কমিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর আমদানিও হয়েছে। তবে বাজারে এর প্রভাব দেখা যায়নি; বরং দাম বেড়েছে।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, হিমাগার ফটকে আলুর দাম বেড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে ভোক্তা পর্যায়ে। তবে হিমাগার মালিক ও পাইকারি আলু ব্যবসায়ীরা বলেন, কৃষকের ঘরের আলু প্রায় শেষ। হিমাগারেও মজুত শেষ পর্যায়ে। তাছাড়া মৌসুমে বেশি লাভের আশায় কৃষকরা তাড়াতাড়ি আলু তুলে ফেলেছেন। এজন্য কিছুটা কম হয়েছে ফলন।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল (গুটিস্বর্ণা ও চায়না ইরি) বিক্রি হচ্ছিল ৫২ থেকে ৫৫ টাকায়। এ ছাড়া মাঝারি চালের (বিআর-২৮ ও পাইজাম) কেজি ৫৮ থেকে ৬৫ এবং চিকন চালের (মিনিকেট ও নাজিরশাইল) কেজি ৬৮ থেকে ৮০ টাকা। সেই হিসাবে শুধু মোটা ও মাঝারি নয়, ক্ষেত্রবিশেষ সরু চালের দরকেও ছাড়িয়েছে আলুর দাম।
হিমাগার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ) এর সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী জুমবাংলাকে বলেন, আলুর দাম বৃদ্ধি নিয়ে গিমাগার মালিকদের কোন হাত নেই। আর বাজারে যে সিন্ডিকেটের কথা শোনা যায় সবজির দাম কম বা বেশি এজন্য সিন্ডিকেটের কোন প্রভাব নেই। দেশে ২২৩ টি হিমাগার থাকলেও কৃষকদের মাধ্যমে আলু সরাসরি বাজারে সরবরাহ করা হয়। সবমিলিয়ে বলতে গেলে এখন আলুর মজুত ফুরিয়ে আসছে। যে কারণে দাম বেশি দেখা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, এবার আলুর ফলন বাড়বে। গত বছর প্রতি কেজি আলুতে কৃষক ১৫ থেকে ২০ টাকা মুনাফা পেয়েছে। তাতে এবার তাদের মধ্যে বেশ উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। আলু চাষের জন্য গত বছর যে জমি ৩০ হাজার টাকায় লিজ নিয়েছেন কৃষক, এবার সেই একই জমি লিজ নিচ্ছেন ৫০ হাজার টাকায়।
বাজারে শীতের সবজি আসা শুরু হলেও দাম তেমন কমেনি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে অতি কষ্টে দিনযাপন করছে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষেরা।
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার মিয়ার বাজারের ক্রেতা মোখলেছুর রহমান জুমবাংলাকে বলেন, তিনি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালান। বাজারের যে অবস্থা, তাতে শীত যে চলে আসছে, বোঝারই উপায় নেই। এখনো বাজারে শীতের সবজি নেই। উপরন্তু আলুর দাম আরও বেড়েছে।
একই বাজারে গিয়েছিলেন মিজানুর রহমান। তিনি কামলা দিয়ে সংসার চালান। তিনি বলেন, আগে ঘরে তরিতরকারি না থাকলে অন্তত আলুভর্তা করে ভাত খাওয়া যেত। এখন সে উপায়ও নেই। আলুর দামই অনেক বেশি।
পলাশবাড়ীর তালুকজামিরা বাজারে কথা হয় সঞ্চয় মাহমুদের সঙ্গে। তিনি তালুকজামিরা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তিনি বলেন, বাজারে কোনো কিছুতেই হাত দেওয়ার জো নেই। দাম শুনে নাভিশ্বাস ওঠে।
এই বাজারের ক্রেতা শামসুল আলম বলেন, শুধু আলুভর্তা করতেও আলু, লবণ, মরিচ ও পেঁয়াজ লাগে। কিন্তু এর কোনোটিই ধরাছোঁয়ার মধ্যে নেই। মানুষ যে আলুভর্তা খেয়ে দিন কাটাবে, সেই উপায়ও নেই।
উচ্চ দ্রব্যমূল্যের কারণে ক্রেতা হিসেবে নিজেও চাপে আছেন বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। তিনি বলেন, বাজারে আমন ধান এলে চালের দাম কমবে। গতকাল বৃহস্পতিবার খাদ্য ভবনে এক বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় খাদ্যসচিব ও খাদ্য অধিদপ্তরের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘আমি আপনাদের মতো মধ্যবিত্ত। আমি নিজেই বাজার করি, চাপে আছি।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।