জুমবাংলা ডেস্ক : রোজার আগ দিয়ে আমদানি চাহিদা বৃদ্ধি ও রিজার্ভ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তোড়জোড়ের মধ্যে চড়ছে মার্কিন ডলারের দাম।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া দর ১২০ টাকা হলেও মঙ্গলবার কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক রেমিটেন্স কিনেছে ১২৬ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১২৭ টাকায়। মানি এক্সচেইঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোও ডলার বিক্রি করছে বেশি দরে।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় টাকা ও ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে ‘নতুন মেকানিজম’ চালুর কথা বলছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা। বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আগামী মার্চে রোজা ঘিরে বেড়েছে আমদানি চাহিদা। অপরদিকে আইএমএফের শর্ত মেনে চলতি ডিসেম্বর শেষে নিট রিজার্ভ ১৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। সেজন্য ‘ডলার বিক্রি না করে’ উল্টো বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে কিনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ অবস্থায় আমদানি ব্যয় বেড়ে নভেম্বরে বেড়ে যাওয়া মূল্যস্ফীতি আরও চড়তে পারে।
মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, “ডলার দাম মূলত আমদানির চাহিদা বাড়ার কারণে বেড়ে গেছে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “ডলার দর বাড়ার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। মূলত আসন্ন রোজাকে কেন্দ্র করে আমদানি বাড়াচ্ছে ব্যাংকগুলো। তাতে ডলারের চাহিদা বেড়েছে। তবে আমদানির চাহিদা মোতাবেক রেমিটেন্স ও রপ্তানির প্রবাহ এখনও পর্যাপ্ত নয়।
“আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ডলার কিনছে। তাতে অনেক ব্যাংক ইন্টারব্যাংকে ডলার না দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিক্রি করছে। আর বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোও ব্যাংকগুলোতে বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে।”
বেসরকারি একটি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান বলেন, ব্যাংক দুইটা উৎস থেকে ডলার ক্রয় করে- রেমিটার ও এক্সপোর্টার। রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে যে ডলার কেনা হয় সেটা ১১৯-১২০ টাকার মধ্যেই কেনা হয়। আর রেমিটেন্স কেনা হয় আরেকটু বেশি দামে। এ দুটোর টাকাকে গড় করে এলসি খোলা হয়।
“বাংলাদেশ ব্যাংক আগে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করত, সেটা বন্ধ আছে। উল্টো বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ বাড়ানো জন্য ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কিনছে। আর রোজার মাসকে কেন্দ্র করে আমদানি এলসি খোলা বাড়ছে। সেজন্য ব্যাংকগুলোরও এলসি খোলার জন্য ডলারও বেশি দরকার,” যোগ করেন তিনি।
ডলার দরের বিষয়ে সিটিজেনস ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ মাসুম বলেন, “আমরা আশা করি নাই ডলারের দাম এত বাড়বে। কারণ ১২৭-১২৮ টাকা হয়ে যাচ্ছে। আবার বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করছে না।”
দর বৃদ্ধির কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “মূলত আমদানির এলসির চাহিদা বেড়ে যাওয়ার জন্য একটা চাপ তৈরি হয়েছে। আরেকদিকে আইএমএফের একটা শর্ত রয়েছে যে রিজার্ভ নিচে না নামে। অর্থাৎ নিট রিজার্ভ মেইনটেইন করার শর্ত থাকে।”
নাম প্রকাশ না করে অনিচ্ছুক একটি ব্যাংকের ডেপুটি ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, “ব্যাংক যদি বেশি দামে রেমিটেন্স কিনে তাইলে সেই ব্যাংক তো কম দামে ডলার বিক্রি করবে না। লোকসান করে কেউ ব্যবসা করে না। আইন মোতাবেক ফরেন এক্সচেঞ্জে লোকসান করা যায় না। ব্যাংক আইনেই এটা অন্যায়। তাই চাহিদা মোতাবেক যোগান না থাকার কারণে দাম বাড়ছে।”
ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে ডলার দর বেড়ে আমদানি ব্যয় বাড়লে এ মাসে মূল্যস্ফীতি আরও চড়তে পারে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) হালনাগাদ তথ্যে মূল্যস্ফীতি নভেম্বরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশে। আগের মাসে এই হার ছিল ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
ইরানি মুদ্রার ইতিহাসে রেকর্ড দরপতন, ডলারের বিপরীতে রিয়ালের দাম পৌনে ৮ লাখ!
চলতি বছর মে মাসে ডলার দর বিনিময় হার ‘ক্রলিং প্রেগ’ পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে ডলারের দর এক লাফে ৭ টাকা বেড়ে ১১৭ টাকা হয়। এরপর ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতিতে ডলার দর ১২০ টাকা করা হয়। এখন ফের ডলার দর বৃদ্ধির কারণে নতুন পথ খুঁজছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সূত্র : বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।