জুমবাংলা ডেস্ক: বেগুড়ায় বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে স্ট্রবেরি চাষ। এক সময় উচ্চমূল্যের এই ফসলটি চাষে কৃষকরা লোকসানে পড়লে মুখ থুবড়ে পড়ে এর উৎপাদন কার্যক্রম। তবে চাষ এবং জমি পরিচর্যা পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনে সাফল্যের মুখ দেখছেন বগুড়ার কৃষকরা।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, বাণিজ্যিকভাবে জেলায় স্ট্রবেরি চাষ হচ্ছে। চলতি বছর জেলার ১ হেক্টর জমিতে স্ট্রবেরির চাষ করেছেন কৃষকরা। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামীতে স্ট্রবেরি চাষের জমি আরো বাড়বে।
বগুড়ায় স্ট্রবেরি গাছের চারা উৎপাদন এবং ফল চাষ শুরু করেছেন সদর উপজেলার কোয়ালিপাড়া গ্রামের এম হাসান আলী। তিনি ইউরোপে বসবাস করতেন। দেশে ফেরার পর গত ৭ বছর যাবৎ বিভিন্ন ধরণের উচ্চমূল্যের ফসল নিয়ে কাজ করছেন। হাসান আলী বলেন, স্ট্রবেরিতে ইনভেস্টটা একটু বেশি কিন্তু প্রফিট অনেক গুণ বেশি। যে কারণে তিনি স্ট্রবেরি চাষ এবং চারা উৎপাদন শুরু করেছেন।
হাসান আলী বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় এক সময় স্ট্রবেরির প্রচুর চাষ হতো। কিন্তু এখন সেটা অনেক কমে গেছে। কারণ স্ট্রবেরির একটা সমস্যা হলো গাছে ‘ছত্রাক’ রোগ ধরে। ওই সময় কৃষকরা প্রথাগত ট্রিটমেন্ট করতেন। যে কারণে তাদের সমস্যারও সমাধান হয়নি। যে কারণে তাদের লোকসান গুনতে হয়েছে। তবে এই সময়ে আমরা পড়াশোনা করে উচ্চমূল্যের ফসল উৎপাদনে নেমেছি। আমিও কিন্তু লোকসানগুনেই এখন সফলতার মুখ দেখছি। আমার কোন গাছে কিন্তু ছত্রাক আক্রমণ করেনি। মূল বিষয়টা হলো ভিন্নভাবে যদি চাষাবাদ করা যায়, ভিন্নভাবে যদি কিছু মেডিসেনের সমন্বয়ে তৈরি ককটেল মেডিসিনস্প্রে করা যায় তাহলে কিন্তু জমি ঠিক থাকে। ছত্রাক থেকে বাঁচানো যায় গাছ।
হাসান আলী বলেন, আমি গত ডিসেম্বরে ৬০ হাজার পিস স্ট্রবেরি চারা বিক্রি করেছি দেশের বিভিন্ন স্থানে। চারাটাও অনেক লাভজনক। আর স্ট্রবেরির গাছের মজা হচ্ছে একবার গাছ লাগালে তাকে ৩ বছর আর গাছ ক্রয় করতে হয় না। পরের বছর ওই গাছ থেকে নতুন গাছের জন্ম হয়। আমার কাছ থেকে যারা চারা নিয়েছেন তাদের প্রত্যেককেই আমি জমি পরিচর্যার পদ্ধতি এবং পরামর্শ দিয়েছি। সে ক্ষেত্রে তাদের ফিডব্যাকটাও কিন্তু ভালো। এখন যারা স্ট্রবেরি চাষ করছেন তারা কিন্তু প্রত্যেকেই তরুণ এবং আধুনিক কৃষক। তিনি বলেন, স্ট্রবেরি পরিচর্যায় অন্য ফসলের চেয়ে পানির পরিমাণটা বেশি লাগে। সেচের ব্যবস্থা থাকতে হবে। সঠিক নিয়মে বালাইনাশক, ছত্রাক নাশক সেটা রুটিন মাফিক প্রয়োগ করতে হবে নিয়মিত।
হাসান আলী বলেন, স্ট্রবেরির চারা লাগানোর জন্য উত্তম সময় অক্টোবর মাস। এক বিঘা জমিতে চারা লাগানো থেকে শুরু করে ফল উঠানো পর্যন্ত খরচ পড়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে ৫০০০ স্ট্রবেরি চারা লাগানো যায়। চারা লাগানোর ৫০ দিন থেকে গাছে ফুল আসা শুরু হয়ে যায়। ৮০ দিনের মাথায় ফল সংগ্রহ করা যায়। এক বিঘা জমি থেকে প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ৫০০ গ্রাম করে ফল সংগ্রহ করা যায়। মোট ফল পাওয়া যায় ২৫০০ কেজি। তিনি বলেন, ১ বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি থেকে বছরে খরচ বাদ দিয়ে ৫ লাখ টাকা লাভ করা সম্ভব।
হাসান আলী আরো বলেন, আমি পড়াশোনার জন্য জর্জিয়ায় গিয়েছিলাম। সেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি করতাম। তো আসলে অন্যের অধীনে কাজ করতে গেলে মানসিকভাবে অনেক চাপে থাকতে হয়। যে কারণে নিজে স্বাধীনভাবে কিছু করার তাগিদে তিনি কৃষিখাতকে বেছে নিয়েছি। আমি ৭ বছর যাবৎ কৃষি নিয়ে কাজ করছি। প্রথম থেকেই সফলতা আসেনি। সে সময় শুধু বিনিয়োগ করে গেছি। সেই তুলনায় লাভের পরিমাণ খুব কম ছিলো। পরে বিষয়গুলো নিয়ে ভালোমতো পড়াশোনা, জানাশোনার পর পুনরায় কাজ শুরুর পর কিন্তু এখন লাভজনক অবস্থায় আছি।
তিনি বলেন, স্ট্রবেরি দ্রুত পচনশীল একটি ফল। আগে সাধারণভাবে প্যাকেট করে ফলটি এক জায়গায় থেকে আরেক জায়গায় পরিবহন করা হতো। যে কারণে পচে যেত। নষ্ট হতো। কিন্তু আমরা এখন পরিবহনের ক্ষেত্রে পদ্ধতি কিছুটা পরিবর্তন করেছি। আমরা আপেলের যে ফোম পাওয়া যায় সেই ফোমগুলো ব্যবহার করছি স্ট্রবেরি পরিবহনের ক্ষেত্রে। যে কারণে ফল কিন্তু একটাও আর নষ্ট হয় না।
তিনি তার জমিতে উৎপাদিত স্ট্রবেরি ঢাকার কয়েকটি সুপারশপে, ঢাকার অভিজাত এলাকার কয়েকটি দোকানে পাইকারি সরবরাহ করেন। এছাড়া সিলেট এবং চট্টগ্রামে তার জমির ফলগুলো যাচ্ছে। রানিং বাজারে প্রতি কেজি ৬০০ টাকায় স্ট্রবেরি পাইকারি বিক্রি করছেন তিনি।
হাসান আলী জানান, স্ট্রবেরির বাইরে ড্রাগন, মাল্টা, ক্যাপসিক্যাম, ইয়েলো তরমুজ, ব্ল্যাক তরমুজ, ব্রুকলি, রেড ক্যাভেজসহ যে সকল ফলের উৎপাদন করে লাভ করা যাবে সেগুলোই আমি করি। আমি চেষ্টা করি অফ সিজনে ফসল উৎপাদন করার। অফ সিজনে ফসলের দাম বেশি পাওয়া যায়। সিজনে তো দাম অনেক কমে যায়, যে কারণে এই পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) এনামুল হক বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরেই বগুড়ায় স্ট্রবেরি চাষ হচ্ছে। তবে চলতি অর্থবছর থেকে আমরা আমাদের কৃষকদের উৎসাহিত করে বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেশি চাষে উৎসাহিত করছি। জেলার নন্দীগ্রাম, বগুড়া সদর এবং শিবগঞ্জ উপজেলায় এবার ১ হেক্টর জমিতে স্ট্রবেরি চাষ হয়েছে। আগামীতে স্ট্রবেরির চাষ বৃদ্ধির জন্য প্রকল্পভিত্তিক কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি নতুন যারা উদ্যোক্তা আছেন তাদেরকে এই ফল চাষে উৎসাহিত করবো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।