জুমবাংলা ডেস্ক : বাগেরহাটে বাণিজ্যিকভাবে বারমাসি উন্নত জাতের সজনে চাষ শুরু হয়েছে। সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের বেনেগাতি গ্রামের কৃষক আব্দুল আজিজ টিটু এক বিঘা জমিতে সজনে চাষ শুরু করেছেন। আটমাস আগে লাগানো ওডিসি-৩ জাতের এই সজনে গাছে ফুলও এসেছে। প্রথম বছরেই বিনিয়োগের দ্বিগুণ লাভ হবে বলে আশা করছেন মালয়েশিয়া ফেরৎ আব্দুল আজিজ টিটু। টিটুর সফলতা দেখে স্থানীয় আরও অনেকে সজনে চাষের ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন।
আব্দুল আজিজ টিটু বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সবজি চাষ করি। সবজির চাষ পদ্ধতি, পুষ্টিগুণ, দাম ও বিক্রয় কৌশল নিয়ে আগ্রহ থাকায় নিয়মিত কৃষি বিষয়ক ভিডিও দেখি। ইউটিউবে ওডিসি-৩ জাতের সজনের গুণাগুণ ও ব্যাপক ফলনের কথা জানতে পারি। এরপর স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ ও বিভিন্ন ভিডিও দেখে ওডিসি-৩ জাতের চাষ কৌশল আয়ত্বে আনি। পরবর্তীতে ২০২১ সালের শেষের দিকে ভারতের কেরালা রাজ্য থেকে বীজ আনি। এরপর জমি প্রস্তুত করে জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে বীজ লাগিয়ে দেই। খুব দ্রুত বড় হয়েছে গাছগুলো। মাত্র আট মাসে আমার গাছে ফুল এসেছে। গাছের বৃদ্ধিও অনেক ভাল। আশা করি অনেক ফল হবে এবার।
বীজ ক্রয়, বপন ও পরিচর্যার ব্যয় বিষয়ে টিটু বলেন, এক বিঘা (৫২ শতক) জমি প্রস্তুত, বীজ সংগ্রহ ও রোপন করতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় পরিচর্যা ও আগাছা পরিষ্কার করতে আরও ১০ হাজার টাকার মত ব্যয় হয়েছে। যেভাবে ফুল এসেছে আশা করি এবার এক থেকে দেড় লক্ষ টাকার সজনে বিক্রি করতে পারব। তিনি আরও বলেন, এই সজনে ক্ষেতকে আমি মাদার ক্ষেত হিসেবে তৈরি করব। এখানে উৎপাদিত সজনে বাজারে বিক্রির পাশাপাশি, এই সজনে থেকে বীজ উৎপাদন করব। বীজ থেকে চারা তৈরি করে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
স্থানীয় রুহুল আমিন শেখ নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমরা প্রচুর সবজি চাষ করি। সবজি ক্ষেতের পাশে দুই-একটা সজনে গাছও থাকে। কিন্তু এভাবে বাণিজ্যিকভাবে সজনে চাষের কথা কখনও চিন্তা করিনি। সারা বছর সজনে হয় এটাও জানা ছিল না। আব্দুল আজিজ টিটুর ক্ষেত দেখে আমার খুব ভাল লেগেছে। বীজের ব্যাপারে আজিজের সাথে কথা বলেছি। জানুয়ারি মাসের দিকে চাষ শুরু করব।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর, বাগেরহাটের উপ-পরিচালক মোঃ আজিজুর রহমান বলেন, সজনে একটি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সবজি। যার ফলে বাজারে সজনের ব্যাপক চাহিদা ও ভাল দাম রয়েছে। এরপরেও বাগেরহাটে বাণিজ্যিকভাবে সজনে চাষ নেই বললেই চলে। বাগেরহাট সদর উপজেলার বেনেগাতি এলাকার মালয়েশিয়া ফেরৎ কৃষক আব্দুল আজিজ টিটু বাণিজ্যিকভাবে সজনের চাষ করেছেন। তার গাছে ফলও এসেছে। আশা করি ফলও ভাল হবে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকেও তাকে সব ধরণের কারিগরি পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
আব্দুল আজিজ টিটু ভাগ্য বদলের আশায় মালয়েশিয়া যান। ২০০৯ সালে মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করে সুবিধা করতে পারেননি। দুই বছর পরে ২০১১ সালে নিজের জমিতে সবজি চাষ শুরু করেন। প্রতিবছর সবজি ও ফল চাষের জমি বাড়াতে থাকেন। বর্তমানে এক বিঘা জমিতে সজনেসহ মোট দশ বিঘা জমিতে সবজি ও ফল রয়েছে তার। তার ক্ষেতে পেঁপে, লাউ, বেগুন, ঢেঁড়স, করলা, দুন্দল, কুশি, ঝিঙ্গে, ডাটা, কুমড়া, লেবু, চুইঝালসহ নানা জাতের সবজি রয়েছে। বসত ঘরের সামনে রয়েছে শতাধিক প্রকার চারার ছোট নার্সারি। সবজি ক্ষেত ও নার্সারি থেকে প্রতিবছর ৫ লক্ষ টাকার বেশি আয় রয়েছে টিটুর। টিটুর কৃষি ক্ষেতে সারা বছর ৪ জন নারী ও ৪জন পুরুষ নিয়মিত কাজ করেন। ২০২০-২১ অর্থ বছরে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে সফল কৃষক হিসেবে পুরষ্কার পান তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।