সাজেদ ফাতেমী: এক অভূতপূর্ব ও অসামান্য অভিজ্ঞতা হলো ১২ এপ্রিল দুপুরবেলা। এদিন এক অনন্য ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ হলো। পাঠ্যবই কিংবা অন্য বইপত্রে নানান দেশের বহু মনীষীর কথা আমরা জেনেছি।
বাণিজ্যক্ষেত্রের বহু কিংবদন্তী কিংবা মহাজনের কথাও জানি। কিন্তু আমি যার দর্শন পেলাম তিনি সবকিছুকে ছাপিয়ে ‘বাণিজ্যের মনীষী মহাজন’রূপে আমার কাছে ধরা দিলেন। তিনি সুফি মিজানুর রহমান। পিএইচপি পরিবারের চেয়ারম্যান এবং ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস (ইউআইটিএস) এর ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান। তাঁর সঙ্গে কাটানো দুই ঘণ্টার দুপুর আমার জীবনে যেন নতুন কোনো দিগন্ত উন্মোচন করে দিল।
সুফি মিজান স্যারকে কিভাবে পেলাম? বলছি। ৬ এপ্রিল প্রথম আলোয় ‘সুফি মিজানের পরিবারে একটি সন্ধ্যা’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেন এ দেশের বিজ্ঞানের অন্যতম কান্ডারি অধ্যাপক মো. কায়কোবাদ। তিনি চট্টগ্রামে সুফি মিজান স্যারের বাসায় তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একটি সন্ধ্যা কাটিয়েছেন। সেখানে তাঁদের আতিথেয়তায় মুগ্ধতা এবং সেখানে অনুষ্ঠিত গানের আসর (প্রতি সপ্তাহে গানের আসর বসে) থেকে উজ্জীবনী সুধা নিয়ে বাড়ি ফেরার গল্প খুব সুনিপূণভাবে তুলে ধরেছেন। কায়কোবাদ স্যারের লেখাটি এক দমে পড়ার পর যেন এক ঘোরের মধ্যে ডুবে গেলাম। সম্বিৎ ফিরে পেয়ে একটু থিতু হয়ে কায়কোবাদ স্যারকে ফোন দিলাম। লেখাটি পড়ে আমার মুগ্ধতার কথা জানিয়ে বললাম- ‘স্যার, যে মানুষটি নিজের বাড়িতে প্রতি সপ্তাহে গানের আসর বসান, আমি তার সঙ্গে দেখা করতে চাই’।
আমার কথা শেষ হতে না হতেই তিনি বললেন- ‘কথা বলেন’। বলে অন্য একজনকে ফোনটি ধরিয়ে দিলেন। ওপাশ থেকে একটা শান্ত অথচ মায়াবী কণ্ঠস্বর ভেসে এলো- ‘আসসালামুআলাইকুম স্যার। আমি সুফি মিজানুর রহমান বলছি। আপনি সাজেদ ফাতেমী স্যার বলছেন?’ আমিতো অবাক! রীতিমতো হকচকিয়ে গেলাম। বললাম- ‘আপনি কেন? আমিতো কায়কোবাদ স্যারের সঙ্গে কথা বলছিলাম’। তিনি বললেন- ‘কায়কোবাদ স্যার আমার সঙ্গেই আছেন। আপনি আর স্যার আমাকে নিয়েই কথা বলছিলেন। তাই ফোনটা নিলাম। আপনি ভালো আছেন?’ আমি দ্বিগুণ বিস্ময় নিয়ে বললাম- ‘জি স্যার। কিন্তু আপনি আমার মতো একজন ক্ষুদ্র মানুষের সাথে এভাবে কথা বলছেন? আমাকে স্যার বলছেন কেন?’ তিনি বললেন- আমি সবাইকে সম্মান দিই। আর আপনিতো শিল্পী। শিল্পীর কদর আমার কাছে অনেক বেশি।’ একরাশ বিস্ময় আর এক আকাশ ভালোলাগায় আমার বুক যেন ভরে গেল। তিনি আমাকে দেখা করার আমন্ত্রণ জানালেন।
আমন্ত্রণে সাড়া দিতেই গতকাল চলে যাই তাঁর ড্যারায়। জুমবাংলার সম্পাদক হাসান মেজর আগে থেকেই সুফি মিজান স্যারের পরিচিত। তাকে আমার সঙ্গী হতে অনুরোধ করলাম। তিনিও এলেন। দুজনে প্রবেশ করলাম বাণিজ্যের মহাজনের বিশাল কক্ষে। চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে আমাদের অভ্যর্থনা জানালেন। সাদা ধবধবে পাঞ্জারি, মাথায় টুপি। শুভ্র সফেদ শুশ্রুম-িত ৮০ বছর বয়সী এক টগবগে তরুণ। কক্ষে আগে থেকেই বসা ছিলেন এই ইউনিভার্সিটির ভিসি স্যার, প্রোভিসি স্যার ও ট্রেজারার স্যার। পরিচয়পর্ব শেষ হতে না হতেই বললেন-আপনিতো শিল্পী। একটা পুরোনো গান ধরেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে গেয়ে উঠলাম- মাঝি বাইয়া যাওরে…। গান শেষে তুমুল করতালি। তাঁদের সবার উচ্ছ্বাস দেখে আমিও মিজান স্যারকে গান গাইতে অনুরোধ করলাম। তিনি সঙ্গে সঙ্গে মাইজভান্ডারি গান ধরলেন। আহা! মুহূর্তে এক অন্যরকম মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়লো কক্ষজুড়ে।
তারপর একে একে আমার গান ও তাঁর কথা চলতে থাকলো। তাঁর জীবনের নানা চড়াই-উৎরাই, সংগ্রাম আর সাফল্যের গল্প শুনতে শুনতে দুই ঘণ্টা সময় যেন হাওয়া হয়ে গেল। এরই মধ্যে দুই পক্ষ থেকে কিছু স্যুভেনির বিনিময় হলো। আমি তাঁর এবং উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান স্যারের হাতে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির গিফটব্যাগ এবং তিনি তাঁকে নিয়ে মোহাম্মদ কায়কোবাদ স্যারের লেখা ‘বিনয়াবত সুফি মিজানুর রহমান’ বইটি আমার হাতে তুলে দিলেন। আমাকে ও হাসান মেজরকে বিদায় জানাতে দরোজা পর্যন্ত এগিয়ে এলেন বিনয়ী ও সদা হাস্যোজ্জ্বল মানুষটি।
(লেখক ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির পিআর ডিরেক্টর ও নকশীকাঁথা ব্যান্ডের ভোকাল)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।