রঞ্জু খন্দকার : গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে প্রাণ যেন ওষ্ঠাগত। বাইরে বের হলে দুরন্ত রোদ আপনার মাথায় ঝিঝি ধরিয়ে দেবে। কিন্তু গরমের এই দাপটেও আপনার চোখে প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে দেবে প্রকৃতি। ঝিমধরা রোদ বাঁচিয়ে চোখ খুললে দেখবেন কোথাও শিমুলের সাদা তুলো উড়ছে বাতাসে। কোথাওবা হলুদ সোনালু, বেগুনী জারুল কিংবা লাল কৃষ্ণচূড়া শোভা ছড়াচ্ছে ফুলে-ফুলে।
গাইবান্ধা সদর থেকে গোবিন্দগঞ্জের নাকাইহাট রাস্তাটি ঝকঝকে তকতকে। এই সড়ক ধরে দক্ষিণে কয়েক কিলোমিটার গেলেই হরিণসিংহা গ্রাম। এইখানে রাস্তার ধারে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে দুটি শিমুলগাছ। গ্রীষ্মের এই বাতাসে সাদা তুলো ওড়াচ্ছে গাছ দুটি।
শিমুলের এমন সাদা তুলোয় ভেসে যাচ্ছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর তীরের জয়নাল আবেদীনের বাগান। এইখানে ১০০ বিঘা জমিতে দেশের সবচেয়ে বড় শিমুলবাগান করেছেন তিনি। বাগান ছাড়াও দেশের আনাচে-কানাচে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা শিমুলগাছগুলো এখন তুলো ছড়াচ্ছে সবখানেই।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কুমারগাড়ী গ্রামের রফিক খন্দকারের পুকুরপাড়ে পাশাপাশি দুটি শিমুলগাছ। তিনি বললেন, এখন গাছের ফল থেকে তুলো সংগ্রহের মৌসুম। তিনি সংগ্রহও করেছেন। কিন্তু গাছ অনেক উঁচু হওয়ায় সব ফল সংগ্রহ করা যায় না। সেই ফল থেকেই এখন বাতাসে ছড়াচ্ছে নরম তুলো।
শুধু সাদা শিমুলতুলোয় নয়, প্রকৃতি এখন সেজেছে গ্রীষ্মের বাহারি সব ফুলে। রাজধানীর হাতিরঝিল, রমনাপার্ক, চন্দ্রিমা উদ্যান থেকে শুরু করে রাজশাহী নগরে রোপণ করা সোনালু, জারুল আর কৃষ্ণচূড়ায় ছেঁয়ে গেছে চারপাশ।
হাতিরঝিলের পাশ দিয়ে হেঁটে প্রতিদিন অফিসে যাতায়াত করেন বেসরকারি চাকরিজীবী তৌহিদুল ইসলাম।
তিনি জুমবাংলাকে জানান, গ্রীষ্ম আসলে প্রকৃতি আসলে নতুন রূপে ধরা দেয়। চোখে আলাদা প্রশান্তি এনে দেয় এর বাহারি সব ফুল। হাতিরঝিলে লাগানো সব ফুলের নামও জানি না। তবু জারুল, কৃষ্ণচূড়া তো না চিনে উপায় নেই। এই রাস্তায় হাঁটলেও চোখ আরাম পায়।
চন্দ্রিমা উদ্যানে মাঝেমধ্যেই এসে জিরিয়ে নেন সরকারি চাকুরে জাফর ইকবাল। তিনি বলেন, এই সময়ে গরমের দাপট থেকে বাঁচতে অনেকেই এই উদ্যানে বিশ্রাম নিতে আসেন। এসে সংসদ ভবনসহ আশপাশে কৃষ্ণচূড়ার শোভায় মুগ্ধ না হয়ে তো উপায়ই নেই।
রাজশাহী নগরের বিভিন্ন রাস্তায় বিপুল পরিমাণ সোনালুর চারা রোপণ করেছিল সিটি করপোরেশন। সেসব চারা এখন ছোটখাটো গাছ হয়ে পথিকের চোখকে আরাম দিচ্ছে হলুদ সোনালুর পসরা সাজিয়ে।
এই নগরের বাসিন্দা রিপন মণ্ডল জানালেন, সিটি করপোরেশন পুরো রাজশাহীকেই অনিন্দ্য সুন্দর রূপে সাজিয়েছে। তবে সবচেয়ে সুন্দর করেছে নগরজুড়ে সোনালু, ছাতিমের চারা লাগিয়ে। এই মুহূর্তে যদিও রাজশাহী নগরে বড় বৃক্ষ কম। ফলে গরম কিছুটা বেশি। তবে চারাগুলো বড় হলে দ্রুত পরিস্থিতি পালটে যাবে। ততদিনে সোনালুর সৌন্দর্যে মন মজাতে তো বাধা নেই।
গ্রীষ্ম যদিও এবার যথেষ্টই তীব্র। তবু বরাবরের মতোই এই সময় প্রকৃতি তার রূপ মেলে দিয়েছে অকৃপণভাবেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধার সংস্কৃতিকর্মী জুয়েল মাজহার বলেন, ‘সাধারণত আমরা শুধু গ্রীষ্মের প্রচণ্ডতাই লক্ষ্য করি। কিন্তু একইসাথে আমরা যদি চোখ মেলে তাকাই, তবে চারপাশের লাল-হলুদ-বেগুনী সৌন্দর্যও কিন্তু আমাদের নজরে পড়বে। তাই গ্রীষ্মে গরমে শরীর কষ্ট পেলেও মন রাঙাতে কিন্তু বাধা নেই।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।