জুমবাংলা ডেস্ক : বর্তমানে প্রযুক্তি মানুষকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। আগে মানুষ নিজের সন্তানকে নিয়ে নানা স্মৃতিকথা লিখে রাখতেন ব্যক্তিগত ডায়রিতে। কিন্তু বর্তমানে বাবা-মারা নিজেদের সন্তানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেন। সেই সঙ্গে তাদের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে অনেক কিছু শেয়ারও করেন। এর ফলে অনেকটাই ভীতি কাজ করে ছেলে-মেয়েদের মনে। ভুগেন নিরাপত্তহীনতায়ও।
বাবা-মাদের অতিরিক্ত শেয়ার নিয়ে ‘মম অ্যান্ড ডেড, ইট’স মাই (ডিজিটাল) লাইফ’ শিরোনামে তরুণদের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে নিউইয়র্ক টাইমস। সাক্ষাৎকার ১৭ বছর বয়সী পাইগে নামের এক ব্যক্তি বলে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমি আমার ব্যক্তিগত নিউজ ফিডকে সুরক্ষিত রাখতে এবং ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার পরিমাণ কমাতে কঠোর পরিশ্রম করি, তবে আমার বাবা-মায়ের এ ধরনের উদ্বেগ নেই। তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিউজ ফিড দেখে নিজকে উলঙ্গ মনে হয়। আমি যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করতে এতো পরিশ্রম করেছি; তা তাদের পোস্টের মাধ্যমে অতি সহজে শেষ হয়ে যায়। আমার সম্মতি ছাড়াই ব্যক্তিগত তথ্য ফেসবুকে পোস্ট করা হচ্ছে। এই বিষয়টি অনিরাপদ।
জুলিয়া নামের ২৩ বছর বয়সী এক নারী বলেন, আমার বাবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক বেশি সক্রিয়। জিজ্ঞাসা না করেই তিনি আমাকে নিয়ে পোস্ট করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এর কারণে এটি সামাজিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, সম্ভবত সূক্ষ্ম কারণেই। ইন্টারনেট হলো ভয়ঙ্কর জায়গা। আমরা কী শেয়ার করি সে সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত।
জুলস নামের ১৯ বছর বয়সী এক তরুণ বলেন, আমি যখন ১০ বছর বয়সী ছিলাম তখন আমার ফেসবুক প্রোফাইল নিয়ন্ত্রণ করতেন বাবা-মা। তারা ওই আইডি থেকে আমার ছবি বা ভিডিও শেয়ার করতেন। তাদের উদ্দেশ্যে ছিলো মানুষকে দেখানো আমি কতো স্মার্ট ছিলাম। এটি আমাকে খুব অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছিল। এতে করে আমার আত্মবিশ্বাসের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
কর্টনি-আন নামের ২০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি বলেন, আমার মাকে বুঝানো মুশকিল ছিলো যে, আমি কখন নিজের কোনো কিছু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না। যদিও আমাকে বা আমার ইমেজ তৈরি করতে তার ভূমিকা ছিলো কিন্তু এই বিষয়টি আমার ব্যক্তিগত।
২৯ বছর বয়সী জেক বলেন, আমার মা যখন ছোট বেলার ছবি শেয়ার করার সিদ্ধান্ত নেয় তখন আমি বিব্রত ও অপমানিত হই। তিনি প্রায়ই এ জাতীয় ছবি পোস্ট করেন। আমার ছোট বেলার ছবিগুলো ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। আমি স্নাতক ডিগ্রিসহ একজন তরুণ পেশাদার, তবুও তার দৃষ্টিতে আমি তা নই।
সাশা (১৪) নামের এক কিশোরী বলে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি পোস্ট করার আগে আমার মা জিজ্ঞাসা করেন। আমি তা করতে নিষেদ্ধ করি। কিন্তু তিনি জোরাজুরি করেন। এর কারণে আমি অস্বস্তি বোধ করি।
১৯ বছর বয়সী পারকিন নামের এক তরুণ বলেন, আমাদের জীবনের ডিজিটাল রেকর্ড রাখার কোনো ধরনের প্রয়োজন নেই। বর্তমানে ডিজিটাল গোপনীয়তা এবং সেই সম্পর্কে বুঝা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
নাটালি নামের ২৩ বছর বয়সী এক তরুণী বলেন, আমার কয়েকজন চাচাতো-মামাতো ভাই-বোন অনুরোধ করেছেন যে, তাদের বাচ্চাদের কোনো ছবি যেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট না করি। এটি প্রথমে আমাকে কষ্ট দিয়েছিল কিন্তু এখন আমি সম্পূর্ণ একমত। মা এখনো আমার জন্মদিনে ছোট বেলার ছবি বা যে ছবিগুলো সুন্দর নয়, সেগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেন।
২৯ বছর বয়সী অ্যাশলে নামের এক নারী বলেন, বাবা-মা যখন সম্মতি ছাড়াই অনলাইনে আমার এবং আমাদের পরিবারের ছবি পোস্ট করেন তখন আমি ভালো অনুভব করি না। আমি মনে করি না যে, তারা এ বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে পেরেছে। কারণ তাদের এ ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়নি। হাসপাতালের প্রথম দিন থেকে যাদের জীবন অনলাইনে পড়ে আছে তাদের জন্য আমি দুঃখিত।
ভেরা নামের ৩৪ বছর বয়সী এক ব্যক্তি বলেন, বাবা-মা ৬০ বছর বয়সেও আমার ব্যক্তিগত ছবি শেয়ার, লেখা শেয়ার ও স্ক্রিন ক্যাপচার করেন। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চেনার জায়গাগুলো ছোট করে নিয়েছি। এটি করেছি যাতে করে অনলাইনে আমার বাবা-মা আমাকে খুঁজে না পায় এবং অতি সহজে তাদের এড়িয়ে চলা যায়। সূত্র- কালেরকণ্ঠ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।