জুমবাংলা ডেস্ক : রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষে নিহত মুরসালিনের পাঁচ বছরের শিশু হামজা বাবার জন্য দিনভর অপেক্ষায় আছে। বাবা প্রতিদিনের মতো আজও মজা নিয়ে বাসায় ফিরবেন এই তার বদ্ধমূল ধারণা। কিন্তু হামজার বাবা মুরসালিন আর ফিরবেন না আর কোনোদিনই।
দেখা যায়, সবার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে হামজা। বলছে, আব্বু আসবে, আব্বুর কাছে যাব। কিন্তু ওর বাবা তো চলে গেছেন না ফেরার দেশে।
নিউমার্কেটে ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে সংঘর্ষে মোহাম্মদ মুরসালিন আহত হন। বেধড়ক মারধরে জ্ঞান হারিয়ে রাস্তায় পড়ে থাকলে এক ব্যক্তি আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার ভোর পৌনে ৫টায় তার মৃত্যু হয়। ঢামেক সূত্রে জানা যায়, আঘাতের কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মুরসালিনের মৃত্যু হয়েছে।
বাবার অপেক্ষায় সংঘর্ষে নিহত মুরসালিনের সন্তানেরা
সরেজমিন দেখা যায়, সংঘর্ষে চিরঘুমে চলে যাওয়া মুরসালিনের মরদেহের ময়নাতদন্ত চলছিল ঢামেক মর্গে আর তার স্বজনরা বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। ছিলেন মুরসালিনের বড় ভাই নূর মোহাম্মদও।
তিনি বলেন, ‘শুনেছি জোহরের নামাজ পরে বের হয়েছে। এমন সময় একদল লোক এসে মুরসালিনকে মারধর করে। অন্যের বলি হয়ে আমার ভাই চিরতরে চলে গেলেন। ওর দুটা বাচ্চা আছে; কি হবে তাদের।’
তিনি বলেন, ‘আমার ভাই নিউমার্কেটের বাংলাবাড়ি নামে একটি রেডিমেড পোশাক দোকানে কাজ করত। ৯ হাজার টাকা বেতনে তার সংসার চলত। মাকেও কিছু টাকা দিত। এখন ভাই নেই। কেমন করে চলবে সংসার।’
মামলা করবেন কি-না জানতে চাইলে বলেন, ‘এই দেশে কোনো বিচার নেই। কে করবে বিচার?’ এসব কথা বলে খানিক দূরে গিয়ে তিনি কিছুক্ষণ অঝোরে কাঁদলেন।
মর্গের বাইরে সকাল থেকে অপেক্ষায় ছিলেন স্বজন ও পরিচিতজনেরা। দুপুর দেড়টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে মুরসালিনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে কামরাঙ্গীরচর পশ্চিম রসুলপুরের ভাড়া বাসায় নেওয়া হয়। মুরসালিনের মরদেহ দেখতে এলাকার মানুষ ভিড় জমায়। দেখা যায় হৃদয় বিদারক পরিস্থিতি।
সাত বছরের মেয়ে হুমায়রা ও পাঁচ বছরের ছেলে হামজাকে নিয়ে কাঁদছিলেন মুরসালিনের স্ত্রী মিতু আক্তার। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘স্বামীকে হারিয়েছি। দুটি ছোট ছোট সন্তান নিয়ে এখন কোথায় দাঁড়াব! কী করব! যে সংসার চালাত সে আর নেই। কীভাবে কী করব কিছু মাথায় আসছে না। আমার স্বামী গণ্ডগোলে পড়ে গেছে। কারা মেরেছে সেটাও জানি না।’
মারামারির ঘটনার পরও মার্কেট সমিতি কেন মার্কেট বন্ধ রাখল না, এমনটা বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি বলেন, ‘যা হারানোর সেটা আমরা হারিয়েছি। আমার দুটা সন্তান। ১৩ বছরের সংসারের সব শেষ হয়ে গেল।’
নিহত মুরসালিনের মা নূরজাহান বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে নির্দোষ। তারা টেনে নিয়ে আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। যারা আমার ছেলেকে মেরেছে তাদের বিচার চাই।’ এছাড়াও সরকার ও মার্কেট সমিতির লোকজন যেন মুরসালিনের পরিবারের পাশে দাঁড়ায়, এমন আহ্বান জানিয়েছেন নিহতের স্বজনরা।
https://inews.zoombangla.com/ay-lok-ar-2nd-wife/
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।