জুমবাংলা ডেস্ক : বাবার নাম পাল্টে নিজেকে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে পরিচয় দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সৈয়দ আবু নাঈম আজাদ টিপুর বিরুদ্ধে। তাঁর বাড়ি সিলেটে। থাকেন মা সাহেনা বেগমের সঙ্গে।
দৈনিক সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত বকুল আহমেদের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সৈয়দ আবু নাঈম আজাদ টিপু প্রতারণার মাধ্যমে জাল জন্মসনদ ব্যবহার করে সৎভাইদের সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে চাইছেন বলে দাবি করে আদালতে তাঁর নামে মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। টিপুর বিরুদ্ধে ভুল তথ্য দিয়ে জাল জন্মনিবন্ধন সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির প্রমাণ পাওয়ার দাবি করেছেন তদন্তকারীরা।
সিআইডি বলছে, টিপুর বয়স ২৯ বছর। তাঁর বাবা মৃত কামাল মিয়া। কামাল মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত নন। তাই তাঁকে অস্বীকার করে নিজেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত ডা. সৈয়দ তছির আহমদের সন্তান হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন টিপু। বাবার নামের স্থলে সৎবাবার নাম ব্যবহার করে বানানো জন্মসনদ ও এনআইডি কার্ড দিয়ে তিনি সরকারি তালিকায় নিজের নাম মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে নথিভুক্ত করেছেন। এবার তিনি ছেলে হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ তছিরের রেখে যাওয়া সম্পত্তির ভাগও দাবি করছেন। এসব অভিযোগে টিপুর নামে গত ৫ জানুয়ারি সিলেটের আদালতে মামলা করেন সৈয়দ তছিরের বড় ছেলে সৈয়দ আবু শাহিন আজাদ খোকন। তদন্তভার পেয়ে অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে সিলেট মহানগর ও জেলা সিআইডি।
সিআইডি দাবি করছে, সৈয়দ তছিরের গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিমানবন্দর থানার কলাপাড়ায়। ১৯৯১ সালের ১৬ এপ্রিল মারা যান তিনি। তাঁর দুই সংসারে ১০ ছেলে-মেয়ে। প্রথম স্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। সৈয়দ তছির মারা যাওয়ার পর তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী সাহেনা ১৯৯২ সালের ১৬ জুন কামাল মিয়ার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ওই সংসারে ১৯৯৪ সালের ২৩ এপ্রিল জন্ম হয় টিপুর। ২০১৩ সালে মারা যান কামাল। তবে এর আগেই তাঁকে ছেড়ে সন্তান নিয়ে প্রথম স্বামীর বাড়িতে ফিরে যান সাহেনা। টিপু নিজের বাবা হিসেবে কামালের নাম-পরিচয় ব্যবহার করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে প্রতারণার বিষয়টি মাথায় আসে তাঁর। জন্মদাতা বাবার পরিচয় গোপন করে তাঁর মায়ের আগের স্বামী মৃত সৈয়দ তছিরকে নিজের জনক সাজিয়ে জাল কাগজপত্র তৈরি করেন। পরে সব জায়গায় বাবা হিসেবে সৈয়দ তছিরের নাম ব্যবহার করেন। সৈয়দ তছিরের স্ত্রী হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পান তাঁর মা সাহেনা।
মামলার বাদী সৈয়দ আবু শাহিন আজাদ খোকন বলেন, ‘আমার বাবা সৈয়দ তছিরের নাম ব্যবহার করে মানুষের কাছ থেকে নানা সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে টিপু। এ ছাড়া মাকে ম্যানেজ করে মুক্তিযোদ্ধার ভাতার সুবিধা নিচ্ছে। সে কখনও তার প্রয়াত বাবা কামালের পরিচয় দেয় না। আমার বাবার পরিচয় দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। এখন সে আমাদের সম্পত্তির ভাগ নেওয়ার চেষ্টা করছে।’
তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক মুহাম্মদ শামছুল হাবীব বলেন, টিপুর দুটি জন্মসনদ। প্রথমটিতে বাবার নাম কামাল মিয়া। দ্বিতীয়টিতে বাবার নামের জায়গায় দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ তছিরের নাম। সৈয়দ তছির যেহেতু ১৯৯১ সালের এপ্রিলে মারা গেছেন, তাই তাঁর মৃত্যুর প্রায় সাত মাস আগে ১৯৯০ সালের ১৯ নভেম্বর জন্ম তারিখ দেখিয়ে জন্মসনদ তৈরি করেছেন। অথচ তাঁর জন্ম ১৯৯৪ সালে। টিপুর প্রতারণা ও জালিয়াতির বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। শিগগির তাঁর বিরুদ্ধে সিলেট আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
অভিযুক্ত টিপু বলেন, ‘আমি মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ তছিরের ছেলে। আমার ভাইয়েরা পৈতৃক সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্য আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। তা ছাড়া আমার মা দ্বিতীয় বিয়েও করেননি।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।