জুমবাংলা ডেস্ক : ওরা সংঘবদ্ধ ডাকাত দল। কিন্তু বাসা-বাড়িতে ডাকাতি করে না। শহরের কোনও একটি জায়গায় অবস্থান করে একসঙ্গে যাত্রীবাহী কোনও বাসে ওঠে। তারপর বাসের চালক ও চালকের সহযোগীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বাসটি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এরপর সেই বাস নিয়ে ঘুরে বেড়ায় শহরের বিভিন্ন রাস্তায়। চলতি পথে যেসব যাত্রী সেই বাসে ওঠে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে সব ছিনিয়ে নিয়ে নামিয়ে দেয় তারা। রাতভর এভাবে ছিনতাই করে ভোরের দিকে বাসটি ফেলে রেখে চলে যায়।
সংঘবদ্ধ এই ডাকাত দলের সাত সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মোহাম্মদপুর জোনাল টিম। তারা হলো ফখরুল কবির শান্ত (২৩), রফিক (২৬), রিয়াজ (২৪), রাসেল (২৭), শাহজামাল (৩০), হারুন অর রশিদ (২৩) ও হুমায়ুন কবির (২৫)। তাদের কাছ থেকে নগদ ৬ হাজার টাকা, ১০টি মোবাইল, তিনটি ছুরি, ৩টি চাপাতি, একটি সুইচ গিয়ার ও দুইটি ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়েছে।
গোয়েন্দা পুলিশের মোহাম্মদপুর জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ আনিচ উদ্দিন বলেন, ‘এরা সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সদস্য। এই দলের নেতা হলো শান্ত। তার বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন থানায় ছয়টি মামলার সন্ধান পাওয়া গেছে। এছাড়া গ্রেফতারকৃত রফিক ও রিয়াজের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন থানায় একাধিক ডাকাতির মামলা রয়েছে। এই ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্যদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, এই ডাকাত দলটি সর্বশেষ গত ১৯ ডিসেম্বর রাজধানী শ্যামলী থেকে সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় আসা এ কে ট্রাভেলস-এর একটি বাস ছিনতাই করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে রাতভর রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যাত্রী তুলে তাদের সব কেড়ে নেয়। ভোরের দিকে বাসটি খিলক্ষেত এলাকায় ফেলে রেখে ডাকাত দলের সদস্যরা সবাই পালিয়ে যায়। ওই ঘটনায় রাজধানী আদাবর থানায় একটি মামলা দায়ের হলে সেই মামলার সূত্র ধরেই সংঘবদ্ধ এই ডাকাত দলের সাত সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ ডিসেম্বর রাত আড়াইটার এ কে ট্রাভেলস-এর একটি বাস সাতক্ষীরা থেকে ঢাকার শ্যামলীতে আসার পর সকল যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে চালক ও সহযোগীরা একটি হোটেলে রাতের খাবার খান। এরপর বাসের কাছে গিয়ে বাসটি পরিষ্কার করার সময় হঠাৎ ১০-১২ জন যুবক ওই বাসে উঠে চালক ও তার দুই সহযোগীকে ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের কাছ থেকে নগদ প্রায় ২০ হাজার টাকা ও সবার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। এরপর তাদের হাত-পা ও মুখ বেঁধে বাসের পেছনের সিটের দিকে ফেলে রাখে। ডাকাত দলের একজন সদস্য বাসটি চালিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ঘুরতে থাকে। পথে বিভিন্ন এলাকা থেকে যাত্রী তুলে তাদেরও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে হাত-পা বেঁধে গাড়ির পেছনের সিটে নিয়ে ফেলে রাখে।
মামলার বাদী ও এ কে ট্রাভেলস-এর চালকের সহযোগী আবু হুরাইরা জানান, ভোরের দিকে ডাকাত দলের সদস্যরা গাড়িটি খিলক্ষেত এলাকায় রেখে সবাই নেমে যায়। এসময় একজন যাত্রী নিজে নিজেই হাতের বাঁধন খুলে অন্য সবার হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দেন। এসময় তিনি গাড়িতে মতিউর রহমান, জিয়া, ফজিলা বেগম, মুরাদ হোসেন, আজিজুর রহমান, শাহীনসহ ১০-১৫ জন যাত্রীকে হাত-পাঁ বাধা অবস্থায় দেখতে পান।
আবু হুরাইরা জানান, হাত-পা বাঁধা যাত্রীদের মধ্যে একজন পুলিশের পোশাক পরিহিত যাত্রীও ছিল। ডাকাত দলের সদস্যরা তার কাছ থেকে নগদ প্রায় ৪ হাজার টাকা, একটি মোবাইল ও সরকারি কাজে ব্যবহৃত দুটি ওয়ারলেস সেটও ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ডাকাতির শিকার হওয়া ওই পুলিশ সদস্য ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত একজন কনস্টেবল ছিলেন। তিনি রাতের উিউটি শেষ করে বাসায় ফেরার জন্য ওই বাসে উঠে ডাকাত দলের খপ্পরে পড়েন। তার কাছ থেকে খোয়া যাওয়া সরকারি ওয়্যারলেস সেট দুটি উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তা আনিচ উদ্দিন জানান, গ্রেফতারকৃত ডাকাত দলের সদস্যদের সবাইকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ডাকাতির কথা স্বীকার করেছে। আদালতেও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে রাজি হয়েছে। তাদের কাছ থেকে সহযোগীদের নাম পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।