রাহিবুর রহমান রাহি, নোবিপ্রবি প্রতিনিধি: দেশে ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর প্রায় দুই মাসেও কমেনি এর প্রকোপ। গত ১৮ মার্চ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করা হয়। কবে নাগাদ ছুটি শেষ হবে এ বিষয়টি রয়েছে অনিশ্চয়তায়।
এদিকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার পরপরই নোয়াখালী ত্যাগ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আছেন প্রায় সাড়ে ছয় হাজারের অধিক শিক্ষার্থী। দুই তৃতীয়াংশই থাকেন নোয়াখালী শহরের বিভিন্ন মেস, হোস্টেল কিংবা বাসা ভাড়া নিয়ে।
এমন অনেক শিক্ষার্থী আছেন যারা নিজেরা টিউশনি করে চলেন, বাড়িতেও টাকা পাঠান। এই মহামারির সময়ে তাদের নিজেদের আয় বন্ধ হয়ে গেছে, পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। এমতাবস্থায় তাদের পক্ষে বাসা ভাড়া পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
বাসা ভাড়া (মেস ভাড়া) মওকুফের বিষয়ে ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য এবং জেলা প্রশাসন বরাবর খোলা চিঠি লিখেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ অলিউল্লাহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিংহভাগ শিক্ষার্থী তাদের পড়াশোনা ও বাড়িভাড়ার খরচ চালায় টিউশন করিয়ে। দেশের এই পরিস্থিতিতে এখন সবাই বাড়িতে। তাই টিউশনও নাই। আর বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর পরিবারই মধ্যবিত্ত। দেশের এই সংকটময় অবস্থায় সবারই আয়ের উৎস মোটামোটি বন্ধ। এখন পরিবারের পক্ষেও সম্ভব না এই টাকা দেয়া। তাই বাড়ি ভাড়া মওকুফ করলে শিক্ষার্থীদের অনেক উপকার হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মশিউর রহমান বলেন, করোনার প্রভাবে প্রায় প্রতিটি পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা পঙ্গু হয়ে আছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রায় প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হলগুলোতে পর্যাপ্ত সিট না থাকায় তাদের বিভিন্ন ভাড়া বাসায় থাকতে হচ্ছে। এই মহামারির সময়টাতে বাসা ভাড়া দেয়াটা অনেকের পক্ষে কঠিন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, আবাসন ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসের বাইরে মেস বা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে হয়। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশের প্রতিটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। টিউশন যাদের চলাফেরার একমাত্র অবলম্বন ছিল তারা কী করে এই বাড়ি ভাড়া নামক ঋণ থেকে মুক্তি পাবেন।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং প্রক্টর ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, আমি মেস ও বাসা মালিকদের অনুরোধ করব। এই সময়ে তারা যাতে তাদের মানবিকতা থেকে শিক্ষার্থীদের কাছে ভাড়া না নেন। আমি আজকেই বিষয়টি নোয়াখালীর রাজনীতিবিদ, নেতৃস্থানীয় ও প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ডিসিকে অবহিত করব এবং জোর দাবি জানাবো এ বিষয়টি যাতে খুব দ্রুত সমাধান করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. দিদার-উল-আলম বলেন, শিক্ষার্থীদের বাসা ভাড়ার বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসন বরাবর আবেদন করা হবে। আর ডিসির সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা হয়েছে। কোনও শিক্ষার্থীকে বাড়িওয়ালা বাসা ভাড়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।