বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞান ও গণিতে নারীদের অবদান অনেক। বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ শাখায় কাজ করেছেন, এমন কয়েকজন নারীদের নিয়ে আজকের এ আয়োজন।
অ্যাডা লাভলেস
অ্যাডা লাভলেস ১৯ শতকের গণিতবিদ। তাকেই বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামার বলা হয়। তাঁর বাবা ছিলেন বিখ্যাত কবি লর্ড বায়রন। কিন্তু মায়ের উৎসাহে গণিতের প্রতি আকৃষ্ট হন তিনি। অ্যাডার ১৭ বছর বয়সে তিনি গণিতবিদ চার্লস ব্যাবেজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ব্যাবেজের পরিকল্পনা করা কম্পিউটারের জন্য প্রথম প্রোগ্রাম করেন লাভলেস। ১৮৩৭ সালে লাভলেস অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিনের ওপর লেখা একটি পেপার ফরাসি ভাষা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন।
এই পেপারের সঙ্গে তিনি নিজের অনেক নোট যুক্ত করে দেন। তাঁর লেখা নোটগুলো মূল পেপারের চেয়ে বড় ছিল। অ্যাডা লাভলেস বিজ্ঞান ও গণিতে অনেক নারীর প্রেরণা। প্রতিবছর অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহকে লাভলেস দিবস হিসাবে পালন করা হয়। বাংলাদেশেও প্রোগ্রামিং কর্মশালা ও বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে দিনটি উদ্যাপন করা হয়।
ক্যারেন উলেনবেখ
২০১৯ সালে মার্কিন গণিতবিদ ক্যারেন উলেনবেখ প্রথম নারী হিসাবে আবেল পুরস্কার অর্জন করেন। এটিও গণিতের শ্রেষ্ঠ পুরস্কারের মধ্যে একটি। উলেনবেখ জ্যামিতিক আংশিক অন্তরীকরণ সমীকরণ, গজতত্ত্ব ও যোগজীকরণযোগ্য পদ্ধতিতে যুগান্তকারী অর্জনের স্বীকৃতি হিসাবে এ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছিল। বহুমাত্রিক মহাবিশ্বে সাবানের ফেনার আকার দেখতে কেমন, তা ক্যারেন উলেনবেখই প্রথম দেখিয়েছেন। সমতলের কাছাকাছি থাকা দুটি বিন্দুকে যোগ করলে একটি সরলরেখায় পরিণত হবে। এ সরলরেখা একমাত্রিক।
কিন্তু সমতলের পরিবর্তে বিন্দু দুটি পৃথিবীর ওপরে কোনো স্থানে হলে তা আর সরলরেখা থাকবে না। বরং বৃত্তের ব্যাসে পরিণত হবে। এই ব্যাস-ই দ্বিমাত্রিক। আর সাবানের ফেনা বা বুদবুদ হলো ত্রিমাত্রিক। এখানেই (ত্রিমাত্রিকে) দেখা মিলবে বিভিন্ন জটিলতার। মাত্রা যত বাড়বে, জটিলতাও তত বাড়বে। এই জটিলতারই সমাধান করেছেন ক্যারেন উলেনবেখ। ক্যারেনের দেখানো পথ ধরেই গড়ে উঠেছে কণা পদার্থবিজ্ঞানের স্ট্যান্ডার্ড মডেলের ভিত। এভাবেই জ্যামিতি, বিশ্লেষণ আর গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানের মধ্যে সেতুবন্ধন করেছেন ক্যারেন।
এমি নোয়েদার
২০ শতকের প্রথম দিকের একজন বিখ্যাত গণিতবিদ এমি নোয়েদার। তাঁর গবেষণা আধুনিক পদার্থবিদ্যা ও গণিতের দুটি মূল ক্ষেত্রে ভিত্তি স্থাপনে সহায়তা করেছিল। ১৯১০-এর দশক থেকে ১৯৩০-এর দশকের প্রথম দিকে জার্মানির গটিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক হিসাবে তিনি কাজ করেছেন। এই সময়েই তাঁর গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারগুলো মানুষের সামনে এসেছে।
তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ নোয়েদার থিওরেম বা নোয়েদারের উপপাদ্য। এই উপপাদ্যটি প্রতিসাম্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাঁর উপপাদ্যটি আধুনিক পদার্থবিদ্যা ও কোয়ান্টাম মেকানিক্সে খুব গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। পরে নোয়েদার বিমূর্ত বীজগণিতের ভিত্তি তৈরি করতেও সাহায্য করেন। এ কাজের জন্য তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন গণিতবিদদের মধ্যে। পাশাপাশি আরও চমৎকার কিছু মৌলিক কাজও রয়েছে তাঁর।
১৯৩৩ সালের এপ্রিলে অ্যাডলফ হিটলার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইহুদিদের বহিষ্কার করেন। আলবার্ট আইনস্টাইনের মতো নোয়েদারও বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। কিছুদিন তিনি নিজ বাড়িতে শিক্ষার্থীদের পড়াতে থাকেন। কিন্তু বেশিদিন বাসায় পড়াতে পারেননি। জার্মানি ছেড়ে পাড়ি জমাতে হয় যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৩৫ সালের এপ্রিলে মারা যান নোয়েদার। এর আগে পেনিসেলভানিয়ার ব্রিন মর কলেজ এবং প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছিলেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।