বশির ইবনে জাফর : উচ্চশিক্ষায় বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে দেশের অসংখ্য শিক্ষার্থী। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে প্রতি বছরই বাড়ছে বিদেশগামী শিক্ষার্থীর সংখ্যা। সময়টা হয়েছে এমন, যেন দেশ ছাড়তে পারাই এখন তরুণদের বড় স্বপ্ন!
২০২৩ সালে ইউনেস্কোর একটি প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে গেলো বছর বিদেশে পাড়ি জমানো শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫২ হাজারেরও বেশি! এই সংখ্যা আগামী কয়েক বছরে দ্বিগুণ হলেও অবাক হবার কিছু নেই। প্রতি বছরের হিসেবের বাইরে গিয়ে প্রতি পাঁচ বা দশ বছরে কতো বড় সংখ্যক তরুণ দেশ ছেড়ে গেলো, কেনই বা যাচ্ছে আর যাচ্ছেই বা কোথায়; সেই ভাবনা কি কারো আছে?
যদিও বিভিন্ন তথ্য-তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে দেশে উচ্চশিক্ষার পরিবেশ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুণগত মান ও পড়াশোনা শেষে চাকরি জীবনের অনিশ্চয়তাকে দেশত্যাগের মূল কারণ হিসেবে বিবেচনা করা যায়।
কিন্তু কথা হচ্ছে, প্রতি বছর বিদেশে পাড়ি জমানো এই এতো সংখ্যক তরুণ পড়াশোনা শেষে কী করে বা দেশে ফেরত আসা শিক্ষার্থীর হার কতো? যদি কেউ পড়াশোনার জন্য বিদেশে যায় তাহলে পড়াশোনা শেষে তাদের পরবর্তী গন্তব্য বা অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন আসাটা খুবই প্রাসঙ্গিক। আর এই প্রশ্নের সমাধান বা উত্তর জানতে না চাওয়াটা একটা দেশের জন্য ভালো কিছু নয়। কারণ তরুণরাই একটি দেশের মূল চালিকাশক্তি বা ভবিষ্যৎ।
একটি দেশে যোগ্য নাগরিক শুধু নিজ দেশ থেকেই হতে হবে তা নয়, বরং দেশের বিভিন্ন সেক্টরে বিদেশি কালচার থেকে অর্জিত জ্ঞানে পরিপক্ব জনশক্তির প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে। কেননা তরুণদের বৈশ্বিক যোগ্যতার যথাযথ ব্যবহার একটি দেশে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে। তাদের গবেষণা কৌশল কখনও পারে দেশের বৃহৎ কোন সমস্যার সমাধান আনতে। আগামীর আধুনিক দেশ গড়ার স্বপ্ন এসব তরুণরা আরও সুন্দর করে বাস্তবায়নে সামর্থ্য রাখে যদি ঠিকমতো এদের নিয়ে ভাবা হয়।
সংগত কারণেই তাই বিদেশগামী তরুণদের পড়াশোনা শেষে কোথায় কীভাবে থেকে যাচ্ছে,নাকি হারিয়ে যাচ্ছে; এ সবকিছুর খোঁজ রাখা একটি দেশের সরকারের নির্দিষ্ট মহলের দায়িত্ব। বিশেষ করে প্রতিটি দেশেই আমাদের যেসব অ্যাম্বেসি রয়েছে তাদের এই দায়িত্বটি গুরুত্বের সাথে আমলে নেয়া দরকার ছিলো কিনা তা ভাবার সময় সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের।
পৃথিবীর যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে যায় সেখানে ওই দেশের অ্যাম্বাসির উদ্যোগে বিভিন্ন সময় নানাবিধ কর্মশালার মাধ্যমেও দেশের সাথে একটি যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে আমাদের তরুণদের।
আর সেখানে ডেটাবেইজ তৈরি করে মেধাবী তরুণদের প্রতি দেশের স্বার্থে সুদৃষ্টি দেয়া অনেকটাই সহজ। বিশেষ করে যারা বিভিন্ন দেশে পড়াশোনা ও অন্যান্য এক্সট্রাকারিক্যুলার এক্টিভিটিসে ভালো করছে তাদের নিয়ে বিশেষ উদ্যোগ সরকারিভাবেই নেয়া উচিত। কারণ তাদের মাধ্যমে আমাদের দেশের সুনাম ও ভাবমূর্তি প্রতিফলিত হয় বিশ্বমঞ্চে।
পৃথিবীর অন্যান্য আধুনিক দেশে মেধাবী শিক্ষার্থীদের শর্তসাপেক্ষে সরকারি উদ্যোগে বিদেশে পড়তে পাঠানো হয়। আর পড়াশোনা শেষে নিজ দেশে ফিরে এলে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হয় সরকারের পক্ষ থেকেই। আমাদের দেশে না হয় কর্মসংস্থানের অভাব। কিন্তু নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে বিদেশে পাড়ি জমানো তরুণদের স্বাগত জানাতে তো কোন বাধা থাকার কথা না।
আর সেটিও যদি না পারা যায় তাহলে যারা নিজ যোগ্যতায় বিদেশে দেশের পরিচয় ধরে এগিয়ে চলেছে তাদের অবদানগুলোকে স্মরণীয় করে রাখার মাধ্যমে তার পথচলাকে আরো বেগবান করতে উৎসাহ দেয়া উচিত। শ্রমজীবী মানুষগুলো বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স পাঠালে যদি তাদেরকে সিআইপি মর্যাদা দিতে পারে আমাদের দেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; তাহলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কেন শিক্ষার্থীদের খোঁজ রাখতে পারবে না? কেনই বা তাদের অবদানকে উৎসাহের সাথে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে না?
লেখক: শিক্ষার্থী, ইউনিভার্সিটি পূত্রা মালয়েশিয়া
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।