জুমবাংলা ডেস্ক : সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি দেশে। অভিযোগ আছে, বিদ্যুৎ খাত থেকে হরিলুট করে এই বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার করেছেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুৎ খাতে হরিলুটের অন্যতম উৎস ছিল কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। তখন বিনা টেন্ডারে প্রয়োজনের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনুমোদন দেওয়া হয়।
এসব উচ্চমূল্যের বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসিয়ে রেখে চুক্তি অনুযায়ী বছরের পর বছর সরকারকে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা।
এর সিংহভাগই গেছে নসরুল হামিদ ও জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পকেটে। এরই মধ্যে এ ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসছে বিদেশে বিপুল অর্থ পাচার এবং সে টাকায় বিলাসবহুল বাড়িসহ নানা সম্পদ কেনার তথ্য।
দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট তথ্য বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি কোম্পানি খুলে সেই কোম্পানির মাধ্যমে নসরুল হামিদের হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগও পাওয়া গেছে। এ কোম্পানি প্রতিষ্ঠাকালে নসরুল হামিদ তার নিজের যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অবস্থিত বাসভবনের ঠিকানা ব্যবহার করেন। পাঁচ বেডরুমের এই বাসার বাজারমূল্য ৩৬ লাখ ১৭ হাজার ৪১৫ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় এর মূল্য ৪২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
যুক্তরাষ্ট্রে শরীফ হায়দার নামে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে নসরুল হামিদ তার স্ত্রী সীমা হামিদকে নিয়ে ‘পথ ফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনাল’ নামে একটি ট্রেড করপোরেশনের লাইসেন্স নেন। এই করপোরেশনের আওতায় মবিল গ্যাস স্টেশনসহ দেড় ডজনের মতো ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ফ্লোরিডায় অবস্থিত ওই গ্যাস স্টেশনটি কেনা হয় কয়েক মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে। শরীফ হায়দারের মাধ্যমেই হাজার কোটি টাকা যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেন নসরুল হামিদ।
২০১৪ সালে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সরাসরি দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন নসরুল হামিদ। টানা ১০ বছর ধরে তিনি এই দায়িত্বে ছিলেন। বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীরা বলছেন, নসরুল হামিদ দেশে কোনো লেনদেন করতেন না। তার অধিকাংশ টাকা বিদেশে লেনদেন হতো।
দুর্নীতিতে জড়িত যে সিন্ডিকেট
বিদ্যুৎ খাতের অপকর্মের নেতৃত্বে ছিলেন নসরুল হামিদ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বসে এসব অপকর্মকে নির্বিঘ্ন করতে কলকাঠি নাড়তেন বিদ্যুৎ খাতের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এ সিন্ডিকেট একের পর এক রেন্টাল-কুইক রেন্টাল প্রকল্প হাতে নেয়। বিনা টেন্ডারে সরকারের ঘনিষ্ঠ বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীদের এসব প্রকল্প থেকে হাজার হাজার টাকা আয়ের সুযোগ করে দেওয়া হয়। এর বিনিময়ে সুবিধাভোগী এসব কম্পানিকে নিজেদের পাশাপাশি শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে এই সিন্ডিকেট।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সচিব থাকাকালে আহমদ কায়কাউসের নেতৃত্বে বিদ্যুৎ খাতের সব উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন মন্ত্রণালয়ে নিয়ে আসতে বাধ্য করা হয়। এরপর তার রুমে চলত কমিশন বাণিজ্য। এই সিন্ডিকেট এভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেয়। পিডিবির সাবেক চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ দায়িত্ব পান রেন্টাল, কুইক রেন্টাল থেকে প্রতি মাসে মাসোয়ারা আদায় করার। বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর অনুমোদন দেওয়া এবং এগুলোর অনিয়ম তদন্তের কাজ ছিল তার ওপর। এভাবে তিনি ব্ল্যাকমেল করে নসরুল হামিদের জন্য প্রতি মাসে শত শত কোটি টাকার ব্যবস্থা করে দিতেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।