বিজ্ঞপ্তি আসে, হাতে নিয়ে চোখ বুলাতেই বুকটা ধক করে ওঠে। গত মাসের চেয়ে আরও কয়েকশ টাকা বেড়েছে বিদ্যুতের বিল। রান্নাঘরের চুলা, লিভিংরুমের এসি, সারাদিন জ্বলতে থাকা লাইট, ফ্যান, চার্জার… প্রতিদিনের এই ছোট ছোট খরচগুলো মিলেই মাস শেষে হয়ে দাঁড়ায় বিশাল এক বোঝা। বাংলাদেশের শহর থেকে গ্রামে, মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত – ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের দাম সবার কাছেই এখন চিন্তার বিষয়। কিন্তু ভাবছেন কি, এই বিল কমানোর মোক্ষম হাতিয়ারটা হয়তো আপনারই বাড়ির ভেতরে লুকিয়ে আছে? আপনার ঘরের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ইন্টেরিয়র ডিজাইন শুধু টাকা বাঁচাবে না, বরং আপনার জীবনযাত্রাকে করবে আরও স্বাস্থ্যকর, আরামদায়ক ও টেকসই। শুধু কয়েকটি বুদ্ধিমত্তাপূর্ণ নকশা ও অভ্যাসের সমন্বয়েই আপনি মাসে শতকরা ২০-৩০% পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিল কমাতে পারেন। চলুন জেনে নিই, কিভাবে আপনার বাড়ির নকশাকেই পরিণত করতে পারেন বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ারে।
প্রাকৃতিক আলোকে কাজে লাগান: সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ সাশ্রয়কারী
দিনের বেলায় কৃত্রিম আলোর প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে দেওয়াই বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের প্রথম ও সবচেয়ে কার্যকর ধাপ। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ইন্টেরিয়র ডিজাইন এর মূল ভিত্তিই হলো সূর্যের আলোকে সর্বোচ্চ ব্যবহার করা।
- জানালার আকার, অবস্থান ও উপকরণ:
- দক্ষিণ বা পূর্ব দিকে বড় জানালা দিনের বেশিরভাগ সময় প্রাকৃতিক আলো নিশ্চিত করে। ভেলভেট বা শিফনের মতো হালকা পর্দা ব্যবহার করুন যা আলো ভেতরে ঢুকতে দেয় কিন্তু তাপ ও উজ্জ্বলতা নিয়ন্ত্রণ করে।
- সানস্ক্রিন ফিল্ম বা সোলার শেড ব্যবহার করে তাপ প্রবেশ কমিয়ে এসির উপর চাপ কমানো যায় (বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এর ফলে এসির বিদ্যুৎ খরচ ১০-১৫% কমে)।
- আলোকিত সিলিং ও দেয়াল: হালকা রঙ (সাদা, ক্রিম, হালকা সবুজ/নীল) সিলিং ও দেয়াল আলো প্রতিফলিত করে ঘরকে উজ্জ্বল রাখে, ফলে দিনের বেলায় লাইট জ্বালানোর প্রয়োজন কমে। গাঢ় রঙ আলো শুষে নেয় এবং ঘরকে অন্ধকার দেখায়।
- অভ্যন্তরীণ লে-আউট: খোলামেলা ফ্লোর প্ল্যান তৈরি করুন। পার্টিশন কম রাখুন বা ফ্রস্টেড গ্লাস, পার্শিয়াল ওপেন শেলফ ব্যবহার করুন যাতে আলো এক কক্ষ থেকে অন্য কক্ষে সহজে প্রবেশ করতে পারে।
- লাইট শেলফ/টিউব: বিশেষ ধরনের এই ডিজাইন উপাদান জানালার পাশে বসে ছাদ বা দেয়ালে সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে ঘরের গভীরে আলো পৌঁছে দেয়।
বাস্তব উদাহরণ: ঢাকার মোহাম্মদপুরের রিনা আক্তার। তার ফ্ল্যাটের লিভিং রুম ছিল উত্তর দিকে, দিনে প্রচুর অন্ধকার। একজন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার পরামর্শে দক্ষিণ দিকের রান্নাঘরের সাথে লাগোয়া দেয়ালে একটি আয়তাকার গ্লাস উইন্ডো (জালি জানালার মতো) বসানো হয় এবং লিভিং রুমের দেয়ালের রঙ সাদা করা হয়। ফলাফল? দিনের বেলায় আর লাইট জ্বালাতে হয় না, মাসিক বিল কমেছে প্রায় ৩০০ টাকা শুধুমাত্র এই কক্ষে আলোর খরচ বাঁচিয়ে!
শক্তি-সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ও আলোর ব্যবস্থা: বিনিয়োগ যা দ্রুত ফেরত দেয়
আধুনিক যুগে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ইন্টেরিয়র ডিজাইন মানে শুধু ঘরের গঠন নয়, বরং ভেতরে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও আলোর ব্যবস্থাপনাকেও স্মার্টভাবে বাছাই করা।
স্টার রেটেড যন্ত্রপাতি: বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (BPDB) এবং স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (BSTI) শক্তি-দক্ষতার জন্য যন্ত্রপাতিকে ১ থেকে ৫ তারকা রেটিং প্রদান করে।
- এসি: ইনভার্টার প্রযুক্তির ৫ তারকা এসি প্রচলিত এসির চেয়ে ৩০-৫০% পর্যন্ত কম বিদ্যুৎ খরচ করে (ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি – IEA রিপোর্ট)।
- রেফ্রিজারেটর: সঠিক আকারের (পরিবারের সদস্য সংখ্যা অনুযায়ী) ৫ তারকা ফ্রিজ বেছে নিন। ফ্রিজকে রান্নাঘরের গরম এলাকা (চুলার পাশে) থেকে দূরে রাখুন।
- লাইটিং: পুরনো ইনক্যান্ডিসেন্ট বাল্ব বা টিউবলাইটের পরিবর্তে এলইডি বাল্ব ব্যবহার করুন। একটি ১০-ওয়াটের এলইডি বাল্ব ৬০-ওয়াটের ইনক্যান্ডিসেন্ট বাল্বের সমান আলো দেয় এবং ৮৫% কম বিদ্যুৎ খরচ করে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (BERC) এলইডি ব্যবহারে উৎসাহিত করে থাকে।
- ফ্যান: ডিসি (ব্রাশলেস) ফ্যান প্রচলিত এসি ফ্যানের চেয়ে ৫০-৭০% কম বিদ্যুৎ খরচ করে এবং অনেক শান্ত।
স্মার্ট লাইটিং সিস্টেম:
- মোশন সেন্সর: করিডোর, বাথরুম বা স্টোর রুমে মোশন সেন্সর লাগালে আলো শুধু প্রয়োজনমত জ্বলবে।
- ডিমার সুইচ: রাতের বেলায় বা মিউজিক শোনার সময় আলোর তীব্রতা কমিয়ে বিদ্যুৎ বাঁচানো ও পরিবেশ তৈরি করা যায়।
- স্মার্ট বাল্ব/সুইচ: মোবাইল ফোন দিয়ে দূর থেকে লাইট অন/অফ করা যায়, ভুলে গেলে জ্বালিয়ে রাখার ভয় থাকে না। টাইমার সেট করা যায়।
- টাস্ক লাইটিং: পুরো ঘর আলোকিত করার চেয়ে পড়ার জায়গা বা কাজের টেবিলে ফোকাসড টাস্ক লাইট (জলন্ত এলইডি ডেস্ক ল্যাম্প) ব্যবহার করা অনেক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী।
- পাওয়ার স্ট্রিপের ব্যবহার: ফ্যান, টিভি, সেট-টপ বক্স, চার্জার, মাইক্রোওয়েভ ইত্যাদি ‘ভ্যাম্পায়ার ডিভাইস’গুলো স্ট্যান্ডবাই মোডেও বিদ্যুৎ টানে। এগুলোকে একটি স্মার্ট পাওয়ার স্ট্রিপে সংযোগ দিন। প্রধান সুইচ বন্ধ করলেই সব ডিভাইসের বিদ্যুৎ সংযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এটি মাসে উল্লেখযোগ্য বিদ্যুৎ বাঁচায়।
দক্ষতার ডেটা: যন্ত্রপাতির ধরন পুরনো মডেলের গড় খরচ (ওয়াট) ৫-স্টার/এনার্জি সেভিং মডেলের গড় খরচ (ওয়াট) আনুমানিক মাসিক সঞ্চয় (টাকায়)* এসি (১.৫ টন) ১৫০০-১৮০০ ৮০০-১১০০ (ইনভার্টার) ৫০০-৮০০ রেফ্রিজারেটর (২৫০ লিটার) ১৫০-২০০ ৮০-১২০ ২০০-৩০০ সিলিং ফ্যান ৭০-৮০ ৩০-৩৫ (ডিসি ফ্যান) ১০০-১৫০ টিউবলাইট (৪ ফুট) ৪০ ১৮-২০ (এলইডি) ৩০-৫০ গণনা: গড় দৈনিক ব্যবহার ৮ ঘন্টা, প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ৮ টাকা (BERC প্রস্তাবিত মূল্য কাঠামো বিবেচনায়) ধরে।
ইনসুলেশন ও ভেন্টিলেশন: তাপ নিয়ন্ত্রণে প্রাকৃতিক সমাধান
বাংলাদেশের গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় ঘর ঠান্ডা রাখতে এসির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ে, যা বিদ্যুতের বিলের প্রধান খরচ। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ইন্টেরিয়র ডিজাইন এর মাধ্যমে ঘরকে প্রাকৃতিকভাবে শীতল রাখার ব্যবস্থা করা যায়।
- ছাদের ইনসুলেশন: ছাদে সূর্যের তাপ সরাসরি পড়ে এবং পুরো বিল্ডিংকে গরম করে তোলে। সাদা রঙের থার্মোপ্লাস্টিক রুফ কোটিং (TPO) বা রিফ্লেক্টিভ পেইন্ট ব্যবহার করা, বা ছাদ বাগান তৈরি করা (যদি কাঠামোগতভাবে সম্ভব হয়) ছাদের তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে। এতে এসির ওপর চাপ কমে, বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়।
- দেয়ালের ইনসুলেশন: নতুন বাড়ি নির্মাণের সময় দেয়ালে ইনসুলেশন বোর্ড (পলিস্টাইরিন, রক উল) ব্যবহার করা দীর্ঘমেয়াদে তাপ স্থানান্তর কমিয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয় নিশ্চিত করে। বিদ্যমান দেয়ালে ভারী পর্দা, ট্যাপেস্ট্রি বা বিশেষ ইনসুলেশন পেইন্টও কিছুটা সাহায্য করে।
- ক্রস ভেন্টিলেশন: ঘরে বাতাস চলাচলের জন্য জানালার অবস্থান এমনভাবে ঠিক করুন যাতে বিপরীত দিক থেকে বাতাস প্রবেশ করতে পারে। গ্রিলযুক্ত জানালা বা জালি জানালা নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বাতাস চলাচল বাড়ায়। সিলিং ফ্যান বাতাস চলাচলকে ত্বরান্বিত করে এবং ‘ফিল-ফ্যাক্টর’ বাড়ায়, অর্থাৎ একই তাপমাত্রায় বেশি আরামদায়ক লাগে, ফলে এসির তাপমাত্রা সামান্য বাড়ালেও চলে।
- শেডিং ও গ্রিনারি: বাড়ির দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে গাছপালা (বিশেষ করে ছায়াদানকারী গাছ), ক্রিপার, পারগোলা বা শেড ক্লথ ব্যবহার সরাসরি সূর্যালোক ও তাপ বাড়িতে প্রবেশ কমায়। বারান্দায় বা জানালার বাইরে গাছের টবও সহায়ক।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ: স্থপতি অরুণিমা ইসলাম, যিনি টেকসই নকশার উপর কাজ করেন, বলেন, “বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ডিজাইনের মূল বিষয় হল জলবায়ুর সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া। প্যাসিভ কুলিং টেকনিক – যেমন সঠিক অভিমুখ, প্রাকৃতিক বায়ু চলাচল, ছাদের ইনসুলেশন এবং গাছপালা – প্রয়োগ করলে এসির ওপর নির্ভরতা ৪০% পর্যন্ত কমানো সম্ভব। এটি শুধু বিল কমায় না, বাসস্থানকে করে আরও স্বাস্থ্যকর।
জল ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য সাশ্রয়ী অভ্যাস: প্রতিদিনের ছোট পদক্ষেপ, বড় প্রভাব
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ইন্টেরিয়র ডিজাইন শুধু স্থাপত্য বা যন্ত্রপাতিতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং দৈনন্দিন কিছু অভ্যাস ও পানির ব্যবহারের স্মার্ট সমাধানও এর অন্তর্ভুক্ত।
- সৌর জল উত্তাপন: বাংলাদেশে সৌরশক্তি প্রচুর। বাড়ির ছাদে সোলার ওয়াটার হিটারের ইনস্টলেশন গ্যাস বা বিদ্যুতের উপর নির্ভরতা কমায়। যদিও প্রাথমিক বিনিয়োগ কিছুটা বেশি, তবে এটি দীর্ঘমেয়াদে (৩-৪ বছরের মধ্যে) লাভজনক হয়ে ওঠে এবং রান্না ও গোসলের জন্য উল্লেখযোগ্য বিদ্যুৎ/গ্যাস বিল সাশ্রয় করে। সরকারের সাসটেইনেবল অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (SREDA) সোলার হিটারের ব্যবহারে ভর্তুকি ও উৎসাহ প্রদান করে।
- কম ফ্লাশ টয়লেট ও সেন্সর ট্যাপ: বাথরুম ডিজাইনের সময় ওয়াটার-সেভিং ফিক্সচার ব্যবহার করুন। ডুয়াল ফ্লাশ টয়লেট পানির ব্যবহার প্রায় ৫০% কমায়। মোশন সেন্সর ট্যাপ পানির অপচয় রোধ করে। গরম পানির জন্য পাইপলাইন ছোট রাখুন এবং পাইপ ইনসুলেট করুন যাতে অপেক্ষা কম করতে হয়।
- এনার্জি মনিটরিং: স্মার্ট এনার্জি মিটার (যা সরকার ধীরে ধীরে বসাচ্ছে) বা প্লাগ-ইন এনার্জি মনিটর ব্যবহার করে কোন যন্ত্র কত বিদ্যুৎ খরচ করছে তা বাস্তব সময়ে ট্র্যাক করুন। এতে ‘বিদ্যুৎ খোর’ যন্ত্রগুলো চিহ্নিত করা সহজ হয় এবং ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
- নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ: এসির ফিল্টার মাসে অন্তত একবার পরিষ্কার করলে এর কার্যকারিতা বজায় থাকে। ফ্রিজের কয়েল পরিষ্কার রাখুন। ফ্যানের ব্লেড ধুলামুক্ত রাখুন। এগুলো যন্ত্রের ওপর চাপ কমায় এবং বিদ্যুৎ খরচ কমিয়ে আনে।
দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিবর্তন:
- দিনের বেলায় প্রাকৃতিক আলো ব্যবহার করুন।
- ব্যবহার না করলে যন্ত্রপাতি, চার্জার, টিভি সম্পূর্ণ বন্ধ করুন (স্ট্যান্ডবাই মোডে রেখে না দিয়ে)।
- এসির তাপমাত্রা ২৪-২৬°C রাখুন। প্রতিটি ডিগ্রি কমালে বিদ্যুৎ খরচ ৩-৫% বাড়ে।
- রান্নার সময় পাত্রে ঢাকনা ব্যবহার করুন।
- ফ্রিজের দরজা কম সময়ের জন্য খুলুন এবং ঠিকমত সিল আছে কি না নিয়মিত চেক করুন।
- কম্পিউটার স্ক্রিন সেভার বন্ধ রাখুন – এটি বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে না বরং ব্যবহার করে।
সফলতার গল্প: চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বসবাসকারী তাসিন আহমেদ। তিনি তার দোতলা বাড়ির ছাদে সোলার ওয়াটার হিটার ও ইনসুলেশন কোটিং করান। পাশাপাশি সব জানালায় শেডিং নেট ও সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য কিছু ক্রিপার লাগান। পুরো বাড়িতে এলইডি বাল্ব ও ডিসি ফ্যান ব্যবহার করেন। ফলাফল? গত গ্রীষ্মে তার এসির ব্যবহার প্রায় অর্ধেক কমেছে এবং মাসিক বিদ্যুৎ বিল আগের চেয়ে গড়ে ১২০০ টাকা কমেছে! তার বিনিয়োগ মাত্র ২ বছরের মধ্যেই উঠে এসেছে।
জেনে রাখুন (FAQs)
প্রশ্ন: বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ইন্টেরিয়র ডিজাইনের প্রাথমিক খরচ কি অনেক বেশি?
উত্তর: কিছু উপাদানের (যেমন উচ্চ রেটেড যন্ত্রপাতি, সোলার হিটার, স্মার্ট সিস্টেম) প্রাথমিক বিনিয়োগ সাধারণের চেয়ে কিছুটা বেশি হতে পারে। তবে, এগুলো দীর্ঘমেয়াদে (সাধারণত ২-৫ বছরের মধ্যে) বিদ্যুৎ বিলে সাশ্রয়ের মাধ্যমে নিজের খরচ তুলে নেয়। এরপর থেকে সেটা আপনার আয়ের উৎস হয়ে দাঁড়ায়! ছোটখাটো পরিবর্তন (রঙ, পর্দা, এলইডি বাল্ব, অভ্যাস) খুব কম খরচে বা বিনা খরচেই করা যায়।প্রশ্ন: পুরানো বাড়িতে কিভাবে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ইন্টেরিয়র ডিজাইন প্রয়োগ করা সম্ভব?
উত্তর: পুরানো বাড়িতেও অনেক কার্যকর পরিবর্তন সম্ভব। জানালায় হালকা পর্দা লাগানো, দেয়াল ও সিলিং হালকা রঙ করা, পুরনো বাল্ব/টিউবলাইট এলইডি দিয়ে প্রতিস্থাপন করা, ফ্যানের পরিবর্তে ডিসি ফ্যান ব্যবহার করা, পাওয়ার স্ট্রিপ ব্যবহার করা, এসির ফিল্টার নিয়মিত পরিষ্কার করা – এসবের কোনটাই বড় ধরনের রেনোভেশন ছাড়াই করা যায়। বড় জানালা খোলা সম্ভব না হলে লাইট শেলফ বা টিউব ব্যবহার করা যেতে পারে।প্রশ্ন: সবচেয়ে কার্যকরী বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী উপায় কোনটি?
উত্তর: একটি মাত্র ‘সবচেয়ে কার্যকরী’ উপায় বলা কঠিন, কারন সফলতা নির্ভর করে একাধিক পদ্ধতির সমন্বয়ের উপর। তবে, প্রাকৃতিক আলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং এনার্জি স্টার রেটেড এলইডি লাইটিং ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারকে প্রায়ই সবচেয়ে সহজ ও দ্রুত ফলদায়ক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এরপর আসে ইনসুলেশন ও স্মার্ট পাওয়ার ম্যানেজমেন্টের বিষয়গুলো।প্রশ্ন: বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ডিজাইন কি শুধু বড় বাড়ির জন্য? ফ্ল্যাটে কি সম্ভব?
উত্তর: একদমই না! বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ইন্টেরিয়র ডিজাইন এর নীতিগুলো যেকোন আকারের বাসস্থানের জন্য প্রযোজ্য। ফ্ল্যাটে জানালার দিক, পর্দার ধরন, রঙের প্যালেট, যন্ত্রপাতির দক্ষতা, স্মার্ট লাইটিং ও পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট, গাছপালা (ব্যালকনিতে) – এসবের মাধ্যমে খুব ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব। মূল বিষয় হল উপলব্ধ স্থান ও সম্পদকে সর্বোত্তমভাবে কাজে লাগানো।- প্রশ্ন: সরকারি কোন সাহায্য বা উৎসাহ আছে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, বাংলাদেশ সরকার শক্তি দক্ষতা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারে কাজ করছে। SREDA (স্রেডা) এর মাধ্যমে সোলার ওয়াটার হিটার, সোলার হোম সিস্টেম, এমনকি কিছু শক্তি-সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতির উপর ভর্তুকি বা সহজ শর্তে ঋণের সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। SREDA ওয়েবসাইট বা স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিস থেকে এ সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য জানা যাবে। BERC শক্তি দক্ষ যন্ত্রপাতির লেবেলিং বাধ্যতামূলক করেছে।
একটি সুচিন্তিত বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ইন্টেরিয়র ডিজাইন কোন বিলাসিতা নয়; বরং এটি বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে একান্ত প্রয়োজনীয়তা। এটি শুধু আপনার মাসিক বিলের চাপই কমাবে না, বরং আপনার বাসস্থানকে করবে আরও স্বাস্থ্যকর, আরামদায়ক ও পরিবেশবান্ধব। প্রাকৃতিক আলো মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়, শক্তি-দক্ষ যন্ত্রপাতি কম শব্দদূষণ করে, এবং কম বিদ্যুৎ খরচ মানে জাতীয় গ্রিডের উপর চাপ কমে ও কার্বন নিঃসরণ হ্রাস পায় – যা আমাদের সকলের জন্য একটি টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে সাহায্য করে। আপনার বিদ্যুৎ বিলের চাপ আজই কমাতে শুরু করুন। ছোট্ট একটি পরিবর্তন – হতে পারে সেটা একটি পুরনো বাল্ব এলইডি দিয়ে বদলে দেওয়া, কিংবা পরের বার রঙ করার সময় সিলিংটিকে ঝকঝকে সাদা করে তোলা – থেকেই যাত্রা শুরু করতে পারেন। আপনার বাড়িটিকেই পরিণত করুন বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের সেরা বন্ধুতে। একটি ছোট পদক্ষেপই পারে আপনার বিলের বোঝাকে হালকা করতে, আর আপনার জীবনযাত্রাকে দিতে উজ্জ্বল আলোর ছোঁয়া। আজই শুরু করুন – আপনার বাড়ি, আপনার সঞ্চয়, আপনার ভবিষ্যতের জন্য।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।