জুমবাংলা ডেস্ক: আল আমীন (৪০)। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক পাশ করেন। প্রায় ৫ বছর আগে একই উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের তালতলা গ্রামের ইউসুফ আলীর মেয়ে শিলাকে বিয়ে করেন। সম্প্রতি তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে।
আশরাফুল নামে তাদের দুই বছরের এক ছেলে রয়েছে। কিন্তু স্ত্রী শিলার সাথে বিচ্ছেদের পর নিজ সন্তানকে কাছে রাখতে না পাওয়ায় হতাশায় ভুগছিলেন তিনি। ছেলেকে কাছে রাখতে না পারায় বিষপান করে আত্মহত্যা করেছেন আমীন।
আল আমীন ঘাটাইল উপজেলার দিঘলকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকবাল খানের বড় ছেলে। শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ময়নাতদন্ত শেষে লাশ নিহতের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
তার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে আমীন বিষপান করেন। প্রথমে তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে মির্জাপুর কুমুদিনি হাসপাতালে নেয়া হলে ওই দিনই তিনি মারা যান। তবে বিষপান করার আগে আমীন একটি চিরকুটি লিখে যান তার ছোট ভাই মাহমুদের কাছে। সেই চিরকুটে আত্মহত্যার কারণ লিখে যান আমীন।
চিরকুটে আমীন লিখেন, ভাই আমার জীবন আর চালাই নিতে পারছিনারে ভাই। প্রতিটি মূহুর্ত যন্ত্রণার। মাহমুদ, অনেক ভালোবাসি ভাই তোকে। আমাকে মাফ করে দিস। আমার সংসারটা শিলার বাবা, মা আর ওর ভাই নাহিদ নষ্ট করে দিছে। আমার কলিজা টুকরা কেউ নিয়ে গেছে ওরা। ভাই, প্রতিদিনের এই যন্ত্রণা কষ্ট থেকে এটা ছাড়া উপায় ছিল না। ভাই আমার অসহায়ত্ব আর চোখের পানিও ওদের কাছে হাসি তামাশার মনে হয়েছে। ভাই বাবুকে দেখে রাখিস। আর পারলাম না ভাই। একটু একটু করে মরার চেয়ে একেবারেই মরে যাওয়া ভালো। তাও যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাব। আমার আব্বা মাকে মাফ করে দিতে বইলো ভাই। আল আমীন ১৭/২/২২।
আর সেই সুইসাইড নোটটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের আইডি থেকে পোস্ট করেছেন মাহমুদ।
মাহমুদের চাচা আবুল খায়ের খান জানান, আমীনের সঙ্গে উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের তালতলা গ্রামের ইউসুফ আলীর মেয়ে শিলার বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের ঘরে একটি ছেলে সন্তান হয়। কিন্তু সম্প্রতি আমীনের সাথে তার স্ত্রীর বিচ্ছেদ হয়ে যায়। বিচ্ছেদের সময় দুই বছরের ছেলে আশরাফুলকে স্ত্রী (শিলা) নিয়ে যায়। এ কারণে আমীন মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে।
এ বিষয়ে মৃত আল আমীনের শ্বশুর ইউসুফ আলী বলেন, আমার মেয়ের জামাই ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রতিনিয়ত অত্যাচার করত। তাদের অত্যাচার সইতে না পেরে বছর দুই আগেও একবার চলে এসেছিলো। আমি ও আমার আত্মীয় স্বজন বুঝিয়ে তাঁকে আল আমীনদের বাড়িতে পাঠিয়ে ছিলাম। কিছুদিন আগে আল আমীনের বাবা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন। মেয়ের সুখের কথা ভেবে আমি এক লক্ষ টাকা পাঠাই। তারপরও তারা আমার মেয়েকে অত্যাচার করছে।
দেড় মাস আগে রাতে আল আমীন আমার মেয়েকে রাতে নির্মমভাবে অত্যাচার করে। মেয়ে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আমার বাড়িতে চলে আসে। আমি তাঁকে স্বামীর বাড়িতে যেতে বললেও মেয়ে আর যাবে না বলে জানায়। আর আমি যদি জোর করে তাঁকে পাঠাই তা হলে নিজেই নিজের ক্ষতি করবে। তাই বাবা হিসেবে আমি আর সেখানে পাঠাতে পারি না। আর আমীন ও তার বাবা মা যেভাবে আমার মেয়ের উপর অত্যাচার করেছে তা বলে শেষ করা যাবে না।
ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহারুল ইসলাম সরকার জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি একটি আত্মহত্যা। লাশ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তাস্তর করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর বিস্তারিত জানা যাবে। আর এখন পর্যন্ত কেউ কোন লিখিত অভিযোগও জানায়নি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।