আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ করার পর সারা বিশ্বে আলোচনা হচ্ছে। পাকিস্তান এই ইস্যুতে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছে। দেশটি আশা করেছিল, মুসলিম বিশ্ব এই ইস্যুতে সোচ্চার হবে এবং কাশ্মীরিদের অধিকারের পক্ষে আওয়াজ তুলবে। কিন্তু সেটা ঘটছে বলে মনে হচ্ছে না। বরং আরব বিশ্ব কাশ্মীরের চেয়ে ভারতকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে। গতকাল বিবিসি বাংলার বিশ্লেষণে এসব কথা বলা হয়েছে।
কাশ্মীরকে বিবেচনা করা হতো ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বিষয় হিসেবে। তবে বিষয়টি নিয়ে যখন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা হলো তখন কাশ্মীরিদের অনেকেই আশা করেছিলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থায় এর সমাধান হবে। এর মধ্যে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেলে সেখানে তাকে উষ্ণ সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। কেবল তাই নয়, তাকে দেশটির সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননাও দেওয়া হয়েছে। আর আবুধাবিকে নরেন্দ্র মোদির দ্বিতীয় বাসস্থান হিসেবেও ঘোষণা করা হয়েছে।
সৌদি আরবে ভারতের সাবেক কূটনীতিক তালমিজ আহমেদ বিবিসিকে বলেন, পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলো মূলত কাশ্মীরকে ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক বিষয় বলে মনে করে। এটাই তাদের সামগ্রিক ধারণা। সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল ভারতের অভ্যন্তরীণ ও সাংবিধানিক বিষয় বলেও তারা মনে করেন। একই ব্যাখ্যা দিয়ে ভারতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল ফর ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্সের গবেষক ফজলুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এখন বাস্তবতাবাদের যুগে প্রবেশ করেছে। নীতি নৈতিকতার যুগ এখন আর নেই। তার মতে, আমেরিকা কিংবা ইউরোপের দিকে তাকালেও একই বিষয় দেখা যাবে। সেখানেও আঞ্চলিক রাজনীতি ও নিজস্ব বিষয়গুলো প্রাধান্য পাচ্ছে।
ফজলুর রহমান আরো বলেন, ভারতের বিষয়ে পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি গত আট দশ বছরে আমূল বদলে গেছে। তালমিজ বলেন, ভারতের সঙ্গে আরব বিশ্বের সম্পর্কে বড়ো ধরনের পরিবর্তন আসে ২০০১ সালে যখন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী যশবন্ত সিং সৌদি আরব সফরে গিয়েছিলেন। তালমিজ আহমেদ সেসময় সৌদি আরবে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে ছিলেন। ওই সময় আরব বিশ্বের সঙ্গে ভারতের রাজনৈতিক সংলাপ শুরু হয়।
তালমিজ আহমেদ জানান, এরপর থেকে সৌদি আরব ও ভারতের মধ্যে নতুন করে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সূচনা হয় যাতে বলা হয় যে অন্য কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক তাদের সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে না। ২০০৬ সালে এই সম্পর্ক আরো উষ্ণ হয় যখন ভারত তার প্রজাতন্ত্র দিবসে সুলতান আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজকে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানায়। গত বছর সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানও ভারত সফর করেন।
তালমিজ আহমেদ জানান, ভারত ও আরব বিশ্বের মধ্যে সম্পর্কে প্রথম দিকে জ্বালানি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০১০ সালের পর এটি বদলে যায় এবং রিয়াদ ভারতের সঙ্গে কৌশলগত অংশিদারিত্বের কথা ঘোষণা করে। এরপর থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে আরব বিশ্বের সম্পর্ক দুর্বল হতে শুরু করে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তালমিজ বলেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আসলে এভাবে কাজ করে না যে একটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হলে আরেকটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাবে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। তবে ভিত্তি আলাদা। পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে চায় তারা। কিন্তু এর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নেই। ভারতের সঙ্গে তারা যে সম্পর্ক তৈরি করেছে তার মধ্যে রয়েছে জ্বালানি, অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সহযোগিতা এবং সন্ত্রাস দমন। অন্যদিকে ফজলুর রহমান বলেন, গত ১০ বছরে ভারতের অর্থনীতি অনেক বেশি স্থিতিশীল হয়েছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থানের কথাও এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শোনা যাচ্ছে। অথচ এ দু’টো বিষয়ে পাকিস্তানের অবস্থান আগের তুলনায় বেশ খারাপ হয়েছে। তিনি আরো বলেন, পাকিস্তানের অর্থনীতি এতোটাই খারাপ হয়েছে যে আরব দেশগুলো বিশেষ করে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত পাকিস্তানকে এখন অনেকটাই বোঝার মতো মনে করছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গেও মধ্যপ্রাচ্যের অবস্থানের পার্থক্য প্রকাশ্যে এসেছে। মধ্যপ্রাচ্যে পাকিস্তান সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি হয়েছে যে অতীতে এই দেশটি তাদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু ইয়েমেন, সিরিয়া কিংবা লেবানন ইস্যুতে সেভাবে সমর্থন দেয়নি। এমনকি ইয়েমেনে সৈন্য পাঠাতেও তারা অস্বীকার করেছে। ফজলুর রহমান বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারত, ইসরাইল, ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ঘিরে নতুন যে রাজনীতি তৈরি হয়েছে তা থেকে পাকিস্তান যেন ক্রমশই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।
Get the latest Zoom Bangla News first — Follow us on Google News, Twitter, Facebook, Telegram and subscribe to our YouTube channel.