
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরানের রেভ্যুলুশনারি গার্ডের হাতে ভূপাতিত ইউক্রেনের যাত্রীবাহী বিমানের নিহত ১৭৬ আরোহীর প্রত্যেকের পরিবারকে দেড় লাখ ডলার করে ক্ষতিপূরণ দেবে দেশটি। এর আগে ইউক্রেন বিমান ভূপাতিতের ঘটনায় ক্ষতিপূরণ এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানায়। খবর বিবিসির।
তেহরান থেকে উড্ডয়নের পর পরই ইউক্রেন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৩৭ বিমানটিতে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। প্রথমদিকে দায় অস্বীকার করলেও পরে ইরান স্বীকার করে যে, ইউআইএ-এর ফ্লাইটটি অনিচ্ছাকৃতভাবে ভূপাতিত করেছে দেশটির সামরিক বাহিনীর সদস্যরা।
এ ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ইরানের ৮২ জন, কানাডার ৬৩ জন, ইউক্রেনের ১১ জন নাগরিক ছাড়াও ৯ জন ক্রু, আফগানিস্তানের ৪ জন, যুক্তরাজ্যের চার জন এবং জার্মানির তিন জন নাগরিক ছিলেন।
সে সময় ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উচ্চ সতর্কতায় ছিল। এর কয়েক ঘণ্টা আগে মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানি জেনারেল কাসেম সোলাইমানি নিহত হওয়ার প্রতিশোধ হিসেবে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যালিস্টিক মিসাইল ছোড়ে দেশটি।
কিভাবে তদন্ত সামলেছে ইরান?
এক বিবৃতিতে ইরানের সরকার বলেছে যে, যত দ্রুত সম্ভব তারা ক্ষতিপূরণ দেবে। বুধবার তেহরান বলেছে যে, দেশটি বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন জড়িত দেশগুলো হচ্ছে ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, কানাডা, সুইডেন, যুক্তরাজ্য ও জার্মানি।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে যে, ক্ষতিপূরণের অর্থ আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী সমঝোতার মাধ্যমে আসা উচিত এবং এর সঙ্গে জড়িতদেরও বিচারের আওতায় আনা উচিত। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওলেহ নিকোলেঙ্কো বলেন, কোন পরিস্থিতিতে বিমানটিকে ভূপাতিত করা হয়েছে তা নিয়ে ইরানের কাছ থেকে একটি খসড়া কারিগরি প্রতিবেদন পাওয়ার আশা করছে ইউক্রেনের কর্তৃপক্ষ।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমরা নির্দোষ মানুষের ভাগ্য নিয়ে কথা বলছি তাই এ ধরনের পরিস্থিতি বিশেষভাবে অগ্রহণযোগ্য।’ ওলেহ নিকোলেঙ্কো বলেন, এ ঘটনায় যারা জড়িত তারা যাতে আইনের আওতায় আসে তা নিশ্চিত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাবে ইউক্রেন।
এ মাসের শুরুর দিকে কানাডার এক প্রতিবেদনে এ ঘটনার তদন্তে ইরানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এ ঘটনায় কানাডা সরকারের বিশেষ কাউন্সেলের লেখা ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করা হয়নি, যেমন হামলায় কারা জড়িত ছিল তাদের নাম উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া ৮ জানুয়ারি রাতে কেন ইরানের আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণা করা হলো না সেই প্রশ্নেরও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, ‘যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তারাই তদন্ত করছে, আর সেটার বেশিরভাগই গোপনে। এটা দিয়ে বিশ্বাস স্থাপন করা যায় না।’
ফ্লাইটটিতে থাকা যাত্রীদের পরিবারের সংগঠনের মুখপাত্র হামিদ এসমাইলিয়ন বলেন, নিহতদের পরিবারের সদস্যরা চায় যে, এ ঘটনায় জড়িতদের স্বতন্ত্র আদালতে বিচার হোক এবং ঘটনার জবাবদিহিমূলক তদন্ত করা হোক। বিমানের ব্ল্যাক বক্স প্রকাশেও ছয় মাসের মতো দেরি করেছে ইরান। তবে শেষমেষ জুলাই মাসে সেটি ফ্রান্সে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
ফ্লাইটটিতে কী ঘটেছিল?
৮ই জানুয়ারি স্থানীয় সময় বেলা ০৬:১২ মিনিটে তেহরানের ইমাম খোমেনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আকাশে ওড়ে ইউক্রেন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের বিমানটি। এটি ছিল বোয়িং ৭৩৭-৮০০। আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স শিল্পের ক্ষেত্রে এটি বহুল ব্যবহৃত বিমানের মডেল। বিমানবন্দরের আকাশসীমা পেরিয়ে যাওয়ার আগে বিমানটি রানওয়ের দিকেই মোড় নিয়েছিল। মূলত বিধ্বস্ত হওয়ার আগে আগেই এটি মোড় নেয়।
তেহরান কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে বলেছিল যে, ইউক্রেন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের বিমানটি উড্ডয়নের পর পরই কারিগরি ত্রুটির মুখে পড়ে। অন্য আরেকটি যাত্রীবাহী বিমানের ক্রু-কে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে উল্লেখ করে জানানো হয় যে, বিধ্বস্ত হওয়ার আগে বিমানটিতে আগুন ধরে গিয়েছিল। কর্তৃপক্ষ বলছে, উড্ডয়নের কয়েক মিনিট পর বিমানটি আট হাজার ফুট উপরে ছিল এবং এটির সঙ্গে রাডার যোগাযোগ হারায় তারা।
পরে এক প্রতিবেদনে ইরানের বেসসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা জানায়, আকাশ প্রতিরক্ষার যে ইউনিটটি বিমানটিকে টার্গেট করেছিল সেটি তাদের হিসেবে ভুল করেছিল। যার কারণে বেসামরিক বিমানকে শত্রু ভেবে ভুল করেছিল তারা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, মিসাইল ব্যাটারিটি কমান্ড সেন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি এবং কোনও অনুমোদন ছাড়াই বিমানটিকে ভূপাতিত করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।