ক্লান্ত চোখে ঘড়ির দিকে তাকালেন রাহাত। ঢাকা থেকে লন্ডনের ফ্লাইটে উঠতে মাত্র চার ঘণ্টা বাকি। হঠাৎই মনে পড়ল, পাসপোর্টটা কি হ্যান্ড ব্যাগেই আছে নাকি? গোটাবাড়ি উলটেপালটে খোঁজার সেই আতঙ্ক, ঘামে ভিজে যাওয়া… শেষমেশ সেটি পাওয়া গেল টেবিলের এক কোণায় বইয়ের নিচে চাপা পড়ে। সেই উৎকণ্ঠার স্মৃতিই আজ তাকে ভ্রমণের প্রস্তুতি নেওয়ার এই গাইডটি লিখতে প্রেরণা জুগিয়েছে। বিমান ভ্রমণের প্রস্তুতি শুধু কিছু চেকলিস্ট নয়; এটা হল সেই আত্মবিশ্বাস, যা আপনাকে যাত্রার আগের রাতের অনিদ্রা থেকে মুক্তি দেবে, প্রতিটি মুহূর্তকে করে তুলবে প্রত্যাশাময়।
আপনি কি প্রথমবারের মতো বিমানে উঠতে যাচ্ছেন, নাকি ঘন ঘন উড়াল দেন? আপনার অভিজ্ঞতার স্তর যাই হোক না কেন, সঠিক প্রস্তুতি একটি সুখকর, নিরাপদ এবং স্ট্রেস-মুক্ত জার্নির মূল চাবিকাঠি। শুধু টিকিট কাটলেই তো হয় না! ভিসা-পাসপোর্টের জটিলতা থেকে শুরু করে লাগেজ প্যাকিংয়ের কৌশল, বিমানবন্দরে ঢোকার নিয়মকানুন, নিরাপত্তা পরীক্ষার ধাপ, এমনকি বিমানে উঠেও যেসব ছোটখাটো বিষয় মাথায় রাখলে যাত্রা আরামদায়ক হয় – এই গাইডে সবকিছুই পেয়ে যাবেন এক জায়গায়। চলুন, শুরু করা যাক সেই যাত্রা, যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপ হবে সুপরিকল্পিত, প্রতিটি মুহূর্ত হবে উপভোগ্য।
বিমান ভ্রমণের প্রস্তুতি: যাত্রার আগের সপ্তাহগুলোর জন্য জরুরি করণীয়
এই ধাপটিই আপনার পুরো ভ্রমণের ভিত্তি তৈরি করে। এখানে ভুল করলে পরবর্তীতে বড় ধরনের ঝামেলা বা অতিরিক্ত খরচের মুখোমুখি হতে পারেন।
দলিলপত্র: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি (একদম প্রথমে চেক করুন!)
- পাসপোর্ট: মেয়াদ অন্তত ৬ মাস থাকতে হবে (গন্তব্য দেশভেদে এই শর্ত ৩ মাস বা ১২ মাসও হতে পারে, গন্তব্য দেশের দূতাবাসের ওয়েবসাইট বা বিমান সংস্থার শর্তাদি ভালো করে দেখুন)। পাসপোর্টে পর্যাপ্ত ফাঁকা পৃষ্ঠা আছে কি না নিশ্চিত হন (ভিসার জন্য)। পাসপোর্টের ফটোকপি রাখুন এবং মোবাইলে বা ক্লাউডে স্ক্যান সেভ করুন। প্রয়োজনে নবায়নের জন্য বাংলাদেশ পাসপোর্ট অফিসের ওয়েবসাইট (https://epassport.gov.bd/) চেক করুন।
- ভিসা: আপনার গন্তব্য দেশে ভিসা প্রয়োজন কিনা নিশ্চিত হন। ভিসা প্রক্রিয়ায় সময় লাগতে পারে (কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ)। ভিসার ধরন (ট্যুরিস্ট, বিজনেস, স্টুডেন্ট ইত্যাদি) সঠিক কি না যাচাই করুন। ভিসা স্টিকার বা ই-ভিসা প্রিন্টআউট যত্নে রাখুন। ভিসার শর্তাবলী (যেমন সর্বোচ্চ অবস্থানকাল) ভালো করে পড়ে নিন।
- আইডি কার্ড: জাতীয় পরিচয়পত্র বা ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফটোকপি/স্ক্যান রাখা ভালো। দেশীয় ফ্লাইটের জন্য প্রায়শই পাসপোর্টের পাশাপাশি জাতীয় আইডি চাওয়া হয়।
- অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজ: টিকিট প্রিন্টআউট বা ই-টিকিট (আপনার ইমেইলে/এয়ারলাইন অ্যাপে থাকবে, কিন্তু প্রিন্টেড কপি একটি ব্যাকআপ হিসেবে রাখুন), হোটেল বুকিং কনফার্মেশন, ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স ডকুমেন্ট (অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে বিদেশ ভ্রমণে), ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট (কোভিড-১৯ বা ইয়েলো ফিভারের মতো নির্দিষ্ট ভ্যাকসিন প্রয়োজন হতে পারে), কর্পোরেট ট্রাভেল অথরাইজেশন (যদি ব্যবসায়িক ভ্রমণ হয়)। সব কাগজপত্রের এক সেট ফটোকপি আলাদাভাবে রাখুন এবং মূল কাগজপত্রের স্ক্যান কপি আপনার ইমেইল বা ক্লাউড স্টোরেজে সেভ করুন।
টিকিট ও ভ্রমণ বীমা: সুরক্ষা এবং নিশ্চয়তা
- টিকিট ডিটেইলস: ফ্লাইট নম্বর, সময় (স্থানীয় সময়ে), তারিখ, টার্মিনাল নম্বর বারবার চেক করুন। বিমান সংস্থার নাম মনে রাখুন বা লিখে রাখুন। অনলাইন চেক-ইন (Online Check-in) সুবিধা ব্যবহার করুন (সাধারণত ফ্লাইটের ২৪-৪৮ ঘন্টা আগে শুরু হয়)। এতে সময় বাঁচে এবং অনেক সময় ভালো সিট পাবার সুযোগ থাকে। বোর্ডিং পাস প্রিন্ট করে নিন বা মোবাইল অ্যাপে সেভ করে রাখুন।
- ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স: অবশ্যই, অবশ্যই নেবেন। এটি শুধু মেডিকেল ইমার্জেন্সির জন্যই নয়, ফ্লাইট ক্যানসেল, লাগেজ হারানো, ডকুমেন্ট হারানো, ট্রিপ ইন্টারাপশনের মতো দুর্ঘটনার বিরুদ্ধেও সুরক্ষা দেয়। বাংলাদেশ থেকে বের হলে এবং শেনজেন ভিসার ক্ষেত্রে এটি বাধ্যতামূলক। বিভিন্ন কোম্পানির পলিসির কভারেজ (যেমন মেডিকেল খরচ, ইভাকুয়েশন, লাগেজ লস, ট্রিপ ক্যানসেলেশন) এবং প্রিমিয়াম তুলনা করে কিনুন। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বীমা কোম্পানিগুলোর (সাদার্ন, পপুলার লাইফ, প্রগতি, মেঘনা লাইফ ইত্যাদি) ওয়েবসাইটে ট্রাভেল ইনস্যুরেন্সের বিস্তারিত পাবেন। পলিসি নম্বর এবং ইমার্জেন্সি কন্টাক্ট নাম্বার হাতের কাছে রাখুন।
লাগেজ প্যাকিং: স্মার্টলি প্যাক করুন, অতিরিক্ত চার্জ এড়িয়ে চলুন
- এয়ারলাইন ব্যাগেজ পলিসি: এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ! আপনার বিমান সংস্থার ওয়েবসাইটে গিয়ে অবশ্যই দেখে নিন:
- ক্যারি-অন ব্যাগের অনুমোদিত সংখ্যা, আকার (লেন্থ x উইড্থ x হাইট, সাধারণত ৫৬x৩৬x২৩ সেমি বা ২২x১৪x৯ ইঞ্চি) এবং সর্বোচ্চ ওজন (সাধারণত ৭ কেজি, তবে এয়ারলাইনভেদে ভিন্ন)।
- চেকড-ইন লাগেজের অনুমোদিত সংখ্যা এবং প্রতি পিসের সর্বোচ্চ ওজন (অর্থনৈতিক শ্রেণীতে সাধারণত ২০-৩০ কেজি, ব্যবসায়িক/ফার্স্টে বেশি)। ওজন সীমা অতিক্রম করলে প্রতি কেজির জন্য প্রচুর অতিরিক্ত চার্জ দিতে হবে।
- নিষিদ্ধ বা সীমিত আইটেমের তালিকা (Sharp objects, Flammables, Liquids over 100ml in hand luggage, Power banks specifications etc.). বিস্তারিত জানতে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ (CAAB)-এর ওয়েবসাইট (https://caab.gov.bd/) এবং আপনার এয়ারলাইনের নীতিমালা দেখুন।
- স্মার্ট প্যাকিং টিপস:
- ওজন মেপে প্যাক করুন: ছোট একটি ব্যাগেজ স্কেল ব্যবহার করুন। ভারী জিনিসপত্র (বই, জুতা) নিচে রাখুন। রোলিং পদ্ধতিতে কাপড় ভাঁজ করলে জায়গা বাঁচে।
- ক্যারি-অন ব্যাগে: পাসপোর্ট, মানি, ভ্রমণ কাগজপত্র, জরুরি ওষুধ, ইলেকট্রনিক্স (ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, পাওয়ার ব্যাংক), মূল্যবান জিনিস, এক সেট জামাকাপড় এবং টয়লেট্রিজ (১০০ এমএল এর কম, ট্রান্সপারেন্ট জিপলক ব্যাগে) রাখুন। মনে রাখবেন, ক্যারি-অন ব্যাগ যদি ওভারহেড বিনে না ঢোকে, তা হয়তো আপনাকে গেটেই চেক করতে দিতে হবে, যা ঝামেলার কারণ হতে পারে।
- চেকড-ইন লাগেজে: মূল কাপড়চোপড়, টয়লেট্রিজ (১০০ এমএলের বেশি), তরল পণ্য, শার্প আইটেম (ছুরি-কাঁচি, রেজর ব্লেড – অবশ্যই সঠিকভাবে প্যাক করা) রাখুন। নাজুক জিনিসের চারপাশে নরম কাপড় জড়িয়ে দিন। লাগেজের ভিতরে ও বাইরে আপনার নাম, ফোন নম্বর, ইমেইল এবং গন্তব্য ঠিকানার ট্যাগ লাগান। ভিতরে আরেকটি কপি রাখুন।
- এসেনশিয়ালস: প্রেসক্রিপশন ওষুধ (মূল বোতলে, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন কপিসহ), চশমা/কন্ট্যাক্ট লেন্স, সানগ্লাস, টিস্যু, স্যানিটাইজার, ইয়ারপ্লাগ/আইমাস্ক (ঘুমের জন্য), ট্র্যাভেল অ্যাডাপ্টার (বিদেশে গেলে)।
- কাপড়: গন্তব্যের আবহাওয়া চেক করুন। ভার্সাটাইল পিসেস (যেগুলো মিক্স-ম্যাচ করে নেওয়া যায়) নির্বাচন করুন। কমফোর্টেবল জুতো ভ্রমণের জন্য অপরিহার্য।
- এয়ারলাইন ব্যাগেজ পলিসি: এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ! আপনার বিমান সংস্থার ওয়েবসাইটে গিয়ে অবশ্যই দেখে নিন:
- স্বাস্থ্য ও অর্থ: সুস্থতা ও আর্থিক নিরাপত্তা
- স্বাস্থ্য প্রস্তুতি: প্রেসক্রিপশন ওষুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে নিন এবং ডাক্তারের চিঠি রাখুন (বিশেষ করে যদি ইনজেকশন বা বড়ি বিশেষ পাত্রে থাকে)। বেসিক ফার্স্ট এইড কিট (প্লাস্টার, অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম, পেইন কিলার, পেটের ওষুধ, অ্যান্টিহিস্টামিন) রাখুন। হাইড্রেটেড থাকার জন্য খালি পানির বোতল (সিকিউরিটি পরীক্ষার পর পানি ভরবেন)। গন্তব্য দেশের জন্য প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন (যেমন ইয়েলো ফিভার) নেওয়া আছে কি না নিশ্চিত হন। কোভিড-১৯ সংক্রান্ত সর্বশেষ প্রবিধান (টেস্ট, ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট) গন্তব্য দেশ এবং এয়ারলাইনের ওয়েবসাইটে চেক করুন। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ট্রাভেল হেলথ অ্যাডভাইজরি (https://dghs.gov.bd/) দেখতে পারেন।
- আর্থিক ব্যবস্থা:
- মুদ্রা বিনিময়: বিদেশ ভ্রমণে গন্তব্য দেশের কিছু স্থানীয় মুদ্রা আগে থেকে বিনিময় করে নিন (এয়ারপোর্টে রেট খারাপ থাকে)। টাকা রাখার জন্য মানিবেল্ট বা নেক ওয়ালেট ব্যবহার করতে পারেন।
- ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড: নোটিফাই করুন যে আপনি ভ্রমণ করবেন, যাতে কার্ড ব্লক না হয়। ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ফি এবং ফরেক্স মার্কআপ চার্জ সম্পর্কে জেনে নিন। ভিসা/মাস্টারকার্ড সাধারণত ভালোভাবে গৃহীত হয়।
- ট্রাভেল কার্ড/প্রিপেইড কার্ড: কিছু দেশে এগুলো সুবিধাজনক হতে পারে।
- নগদ টাকা: অতিরিক্ত নগদ টাকা না রাখাই ভালো। প্রয়োজনীয় পরিমাণ ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় (ব্যাগ, পকেট, মানিবেল্ট) রাখুন।
বিমানবন্দরে আপনার যাত্রা: নিরাপদে ও সহজে চেক-ইন থেকে বোর্ডিং পর্যন্ত
ভ্রমণের দিন এসে গেছে! বিমানবন্দরকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সঠিক ধাপগুলো জানলে সবকিছু সহজ হয়ে যায়।
সময় ব্যবস্থাপনা: যথাসময়ে পৌঁছানোর কোনো বিকল্প নেই
- আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্য: বিমান উড্ডয়নের কমপক্ষে ৩ (তিন) ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে পৌঁছান। ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (DAC) বা চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (CGP)-এ যানজট এবং লম্বা সারি বিবেচনা করুন।
- দেশীয় ফ্লাইটের জন্য: কমপক্ষে ২ (দুই) ঘণ্টা আগে পৌঁছানো নিরাপদ।
- ট্র্যাফিক: রাস্তায় যানজটের সম্ভাবনা মাথায় রেখে অতিরিক্ত সময় হাতে রাখুন। বিমানবন্দরে গাড়ি পার্কিং বা ড্রপ-অফ পয়েন্টে পৌঁছাতে কতক্ষণ লাগবে তা হিসাব করুন। ঢাকা বিমানবন্দরের রিয়েল-টাইম ট্র্যাফিক আপডেট (https://www.caab.gov.bd/) চেক করতে পারেন।
ড্রপ-অফ ও প্রবেশ: প্রথম ধাপগুলো
- টার্মিনাল: আপনার ফ্লাইট কোন টার্মিনাল (T1 বা T2) থেকে ছাড়বে তা নিশ্চিত হন। ঢাকার বিমানবন্দরে এখন দুটি আন্তর্জাতিক টার্মিনাল। স্ক্রিন বা ইনফরমেশন ডেস্কে চেক করুন।
- ড্রপ-অফ জোন: গাড়ি থেকে নামার পর, পোর্টার (যদি লাগেজের জন্য সাহায্য নেন) বা নিজেরাই সরাসরি আপনার এয়ারলাইনের চেক-ইন কাউন্টারে যান। প্রবেশদ্বারে প্রাথমিক নিরাপত্তা পরীক্ষা (সাধারণত টিকিট ও আইডি চেক) হতে পারে।
চেক-ইন প্রক্রিয়া: আপনার যাত্রার আনুষ্ঠানিক সূচনা
- কাউন্টারে চেক-ইন: আপনার পাসপোর্ট এবং টিকিট/বুকিং রেফারেন্স দিন। চেকড-ইন লাগেজ জমা দিন। ওজন চেক হবে। ল্যাগেজ ট্যাগ লাগানো হবে এবং রিসিট আপনাকে দেওয়া হবে – এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, হারানো লাগেজ দাবির জন্য এটি রাখুন! আপনার বোর্ডিং পাস হাতে পাবেন, যাতে গেট নম্বর, বোর্ডিং সময় এবং সিট নম্বর উল্লেখ থাকবে।
- স্বয়ংক্রিয় কিয়স্ক/ওয়েব চেক-ইন: যদি আগেই অনলাইনে চেক-ইন করে থাকেন এবং শুধু লাগেজ ড্রপ করতে হয়, তাহলে স্বয়ংক্রিয় কিয়স্ক ব্যবহার করে দ্রুত ট্যাগ প্রিন্ট করে লাগেজ ড্রপ জোনে জমা দিতে পারেন। শুধু লাগেজ ড্রপ কাউন্টার খুঁজে নিন।
- সিট সিলেকশন: চেক-ইনের সময় আপনার সিট পছন্দ (একলে, জানালার পাশে, গলির পাশে) বলতে পারেন। কিছু এয়ারলাইন আগে থেকেই সিট বুকিংয়ের সুবিধা দেয় (কখনও ফি দিতে হতে পারে)।
পাসপোর্ট কন্ট্রোল (বিদেশ ভ্রমণে): দেশ ছাড়ার অনুমতি
- আউটপাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টারে লাইনে দাঁড়ান। আপনার পাসপোর্ট এবং বোর্ডিং পাস জমা দিন। অফিসার আপনাকে কিছু মৌলিক প্রশ্ন করতে পারেন (যাত্রার উদ্দেশ্য, কতদিন থাকবেন ইত্যাদি)। ছবি তুলে সিল মেরে আপনাকে পাসপোর্ট ফেরত দেওয়া হবে। এই জায়গায় কোন ফটোগ্রাফি বা ভিডিও করা নিষিদ্ধ।
নিরাপত্তা পরীক্ষা: সবার জন্য বাধ্যতামূলক
- প্রস্তুতি: ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, পাওয়ার ব্যাংক, ইলেকট্রনিক গ্যাজেট, তরল পদার্থের ব্যাগ (১০০ এমএল এর কম প্রতিটি, ট্রান্সপারেন্ট জিপলক ব্যাগে), বেল্ট, জ্যাকেট, টুপি, মুদ্রা বা ধাতব জিনিসপত্র (কী, কয়েন) সহজে বের করা যায় এমন জায়গায় রাখুন বা বের করে ট্রেতে রাখুন। জুতো খুলতে বলা হতে পারে।
- প্রক্রিয়া: আপনার ক্যারি-অন ব্যাগ এবং ব্যক্তিগত জিনিসপত্র (জ্যাকেট, ল্যাপটপ ব্যাগ ইত্যাদি) এক্স-রে মেশিনে স্ক্যান করার জন্য ট্রেতে রাখুন। আপনি নিজে মেটাল ডিটেক্টর গেট বা বডি স্ক্যানারের মধ্য দিয়ে যাবেন। নিরাপত্তা কর্মীরা আপনাকে নির্দেশনা দেবেন। কোন সমস্যা হলে (যেমন ব্যাগে কোন নিষিদ্ধ জিনিস পাওয়া গেলে) তারা ব্যাগ হাতে চেক করবেন।
বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ এলাকা: বোর্ডিং গেটে যাওয়ার পথে
- ইমিগ্রেশন পরীক্ষার পর আপনি বিমানবন্দরের ডিউটি-ফ্রি জোনে প্রবেশ করেন। এখানে রয়েছে:
- ডিউটি-ফ্রি শপ: পারফিউম, কসমেটিক্স, অ্যালকোহল, চকলেট, স্যুভেনির ইত্যাদি কেনাকাটা (ট্যাক্স-ফ্রে)।
- রেস্টুরেন্ট ও ক্যাফে: খাবার ও পানীয় কেনার সুযোগ।
- লাউঞ্জ: কিছু এয়ারলাইন বা ক্রেডিট কার্ডের সুবিধায় নির্দিষ্ট লাউঞ্জে প্রবেশ করা যায়, যেখানে আরামদায়ক বসার জায়গা, ফ্রি ওয়াইফাই, স্ন্যাক্স, পানীয় পাওয়া যায় (প্রথম শ্রেণি/ব্যবসায়িক শ্রেণির যাত্রীদের জন্য সাধারণত ফ্রি)।
- ওয়াশরুম ও প্রার্থনাকক্ষ।
- আপনার বোর্ডিং গেট: বোর্ডিং পাসে উল্লেখিত গেট নম্বর খুঁজে নিন। বিমানবন্দরের স্ক্রিনগুলোতে ফ্লাইটের স্ট্যাটাস (অন সময়, বিলম্বিত, বোর্ডিং, গেট ক্লোজ) দেখানো হয়। বোর্ডিং শুরুর সময়ের আগেই গেটের কাছাকাছি অবস্থান করুন। গেট পরিবর্তন হতে পারে, তাই স্ক্রিনে নজর রাখুন।
- ইমিগ্রেশন পরীক্ষার পর আপনি বিমানবন্দরের ডিউটি-ফ্রি জোনে প্রবেশ করেন। এখানে রয়েছে:
- বোর্ডিং: বিমানে উঠার শেষ ধাপ
- বোর্ডিং শুরু হলে সাধারণত প্রথমে ব্যবসায়িক শ্রেণী/প্রথম শ্রেণী এবং প্রায়ই শিশু/শারীরিকভাবে অক্ষম যাত্রীদের ডাকা হয়, তারপর ইকোনমি শ্রেণীর বিভিন্ন জোন বা সিট রো ধরে ধরে ডাকা হয় (বোর্ডিং পাসে জোন নম্বর দেখানো থাকে)। লাইনে দাঁড়ান, বোর্ডিং পাস (এবং পাসপোর্ট, আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে) জমা দিন। স্টাফ সিলমোহর করবেন এবং আপনাকে বিমানে প্রবেশ করতে নির্দেশ দেবেন। এই সময়ই টয়লেট শেষ করে নেওয়া ভালো, কারণ বিমান ট্যাক্সি করার সময় টয়লেট ব্যবহার বন্ধ থাকে।
আকাশপথে: বিমানের ভিতর আরামদায়ক ও নিরাপদ যাত্রা
এবার আপনি বিমানের ভিতরে। কিছু সহজ টিপস মেনে চললে যাত্রাটি আরও সুখকর হবে।
আপনার সিট খোঁজা এবং জিনিসপত্র রাখা: কেবিন ক্রুদের সাহায্য নিতে পারেন। ক্যারি-অন ব্যাগ ওভারহেড বিনে রাখুন। সিটের নিচে শুধুমাত্র ছোট ব্যাগ (পার্স, ল্যাপটপ ব্যাগ) রাখা যায়। ইলেকট্রনিক্স বন্ধ রাখুন বা ফ্লাইট মোডে রাখুন। সিটবেল্ট পরুন এবং তা সঠিকভাবে বাঁধা আছে কি না চেক করুন (টাইট করে টানুন)।
সেফটি ব্রিফিং: অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ! কেবিন ক্রুদের প্রদর্শিত সেফটি ইনস্ট্রাকশন মনোযোগ দিয়ে দেখুন এবং শুনুন, যদিও আপনি আগেও শুনেছেন। নিকটস্থ জরুরি প্রস্থানের পথ (Emergency Exit) চিহ্নিত করুন। লাইফ জ্যাকেট কোথায় এবং কীভাবে পরতে হয় দেখুন। অক্সিজেন মাস্ক কীভাবে ব্যবহার করতে হয় জানুন (প্রথমে নিজের, তারপর অন্যের সাহায্য করুন)।
আরামদায়ক থাকার টিপস:
- হাইড্রেশন: বিমানের ভিতরের বাতাস খুব শুষ্ক হয়। প্রচুর পানি পান করুন। অ্যালকোহল বা ক্যাফেইন ডিহাইড্রেশন বাড়াতে পারে, সীমিত করুন।
- কাপড়: ঢিলেঢালা, আরামদায়ক (কমফোর্টেবল) পোশাক পরুন। স্তর করে পোশাক পরুন (লেয়ার) – কখনো ঠান্ডা, কখনো গরম লাগতে পারে।
- চলাচল: লম্বা ফ্লাইটে প্রতি ১-২ ঘণ্টা পর পর হাঁটুন (যখন সিটবেল্ট সাইন বন্ধ থাকে) বা সিটে বসে পা-হাতের হালকা ব্যায়াম করুন (Ankle circles, leg lifts)। এটি রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে এবং DVT (Deep Vein Thrombosis) এর ঝুঁকি কমায়।
- কান বন্ধ হওয়া: টেক-অফ এবং ল্যান্ডিংয়ের সময় কানে চাপ বা বন্ধ ভাব অনুভূত হতে পারে। চুইংগাম চিবানো, জোরে গিলে ফেলা বা ভ্যালসালভা ম্যানুভার (নাক বন্ধ করে নিঃশ্বাস ধীরে ধীরে নাকের দিকে চাপ দেওয়া) করলে সাহায্য হয়। শিশুদের বোতলে দুধ/পানি খাওয়ালে বা প্যাসিফায়ার দিলে সাহায্য হয়।
- ঘুম: আইমাস্ক এবং ইয়ারপ্লাগ/নয়েজ-ক্যানসেলিং হেডফোন ব্যবহারে গভীর ঘুমে সাহায্য করে। নেক পিলো (ট্র্যাভেল পিলো) ব্যবহার করলে ঘাড়ে আরাম পাবেন।
- বিনোদন: ইন-ফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেমে সিনেমা, গান, গেমস, টিভি শো থাকে। নিজের ডিভাইসেও ডাউনলোড করা কনটেন্ট দেখতে পারেন (হেডফোন নিতে ভুলবেন না!)। বই পড়ুন বা গান শুনুন।
খাদ্য ও পানীয়: এয়ারলাইন সাধারণত ফ্লাইটে খাবার ও পানীয় পরিবেশন করে (ফ্লাইটের দৈর্ঘ্য ও শ্রেণীভেদে)। বিশেষ ডায়েট (ভেজ, মুসলিম, হালাল, গ্লুটেন-ফ্রি ইত্যাদি) প্রয়োজন হলে টিকিট বুকিংয়ের সময় বা কমপক্ষে ২৪-৪৮ ঘন্টা আগে রিকোয়েস্ট করতে হয়। নিজের কিছু হালকা স্ন্যাক্স (ড্রাই ফ্রুটস, বিস্কুট) রাখতে পারেন।
- শিশু ও বিশেষ সহায়তা প্রয়োজনীয় যাত্রী: শিশুদের সাথে ভ্রমণে অতিরিক্ত ধৈর্য্য ও প্রস্তুতি দরকার। খেলনা, বই, স্ন্যাক্স, অতিরিক্ত কাপড়-ডায়াপার রাখুন। স্ট্রলার গেটে জমা দেবেন এবং গন্তব্যে পেয়ে যাবেন। শারীরিকভাবে অক্ষম বা বিশেষ সহায়তা প্রয়োজন এমন যাত্রীরা এয়ারলাইনকে আগে থেকে জানালে হুইলচেয়ার সহায়তা বা অন্যান্য সুবিধা পাবেন।
গন্তব্যে অবতরণ ও পরবর্তী ধাপসমূহ: যাত্রার সমাপ্তি সুরক্ষিতভাবে
বিমানটি অবতরণ করেছে, কিন্তু আপনার যাত্রা এখনও শেষ হয়নি। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ সামনে।
অবতরণ ও বিমান থেকে নামা: বিমান সম্পূর্ণভাবে থামা পর্যন্ত এবং সিটবেল্ট সাইন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আপনার সিটে বসে থাকুন। ওভারহেড বিন থেকে আপনার জিনিসপত্র নিন। ক্রুদের নির্দেশনা অনুসরণ করে ধীরে ধীরে বিমান থেকে নামুন। মনে রাখবেন, সাধারণত সামনের সারির যাত্রীরা আগে নামেন।
পাসপোর্ট কন্ট্রোল / ইমিগ্রেশন (বিদেশ ভ্রমণে): দেশে প্রবেশের অনুমতি
- “Foreign Passports” বা “Non-Residents” লাইনে দাঁড়ান (যদি স্থানীয় নাগরিক না হন)।
- আপনার পাসপোর্ট, ভিসা, এবং প্রায়ই ভ্রমণ ফর্ম বা ইমিগ্রেশন কার্ড (যা বিমানে দেওয়া হয় বা আগে থেকে অনলাইনে পূরণ করা যায়) জমা দিন।
- ইমিগ্রেশন অফিসার আপনাকে যাত্রার উদ্দেশ্য, থাকার স্থান, থাকার সময়কাল ইত্যাদি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। সৎ ও সংক্ষিপ্ত উত্তর দিন।
- ছবি তুলে, ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যান করে এবং পাসপোর্টে স্ট্যাম্প দিয়ে আপনাকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (যেমন রিটার্ন টিকিট, হোটেল বুকিং) হাতের কাছে রাখুন, যদিও সবসময় চাওয়া নাও হতে পারে।
লাগেজ ক্লেইম: আপনার ব্যাগ খোঁজা
- স্ক্রিনে আপনার ফ্লাইট নম্বর এবং লাগেজ বেল্ট নম্বর দেখানো হবে। সঠিক বেল্টে চলে যান।
- ধৈর্য্য ধরুন, লাগেজ বের হতে কিছু সময় লাগতে পারে। আপনার লাগেজ সাবধানে দেখে নিন (আকার, রং, ট্যাগ চেক করুন)।
- লাগেজ হারিয়ে গেলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে: সাথে সাথে আপনার এয়ারলাইনের “Baggage Service Office” বা “Lost & Found” ডেস্কে রিপোর্ট করুন। আপনার লাগেজ ট্যাগ রিসিট (প্রাপ্তিস্বীকার পত্র) দিন। তারা আপনাকে একটি Property Irregularity Report (PIR) ফর্ম পূরণ করতে দেবে। রিপোর্টের কপি এবং এয়ারলাইনের কন্টাক্ট ডিটেইলস রাখুন। ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স কোম্পানিকেও জানান।
কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স:
- কাস্টমস ডিক্লারেশন ফর্ম (যদি দেওয়া হয়ে থাকে) পূরণ করুন। সাধারণত দুটি লেন থাকে:
- গ্রিন চ্যানেল / নথিভুক্ত নয়: যদি আপনার কাছে ডিউটি-ফ্রি সীমার মধ্যে বা নিষিদ্ধ নয় এমন জিনিস থাকে।
- রেড চ্যানেল / নথিভুক্ত: যদি আপনার কাছে ডিউটি দিতে হয় এমন, সীমা অতিক্রমকারী বা নিষিদ্ধ জিনিস থাকে।
- কাস্টমস অফিসার র্যান্ডম চেক করতে পারেন। জিজ্ঞাসা করলে সৎভাবে উত্তর দিন।
- কাস্টমস ডিক্লারেশন ফর্ম (যদি দেওয়া হয়ে থাকে) পূরণ করুন। সাধারণত দুটি লেন থাকে:
- বিমানবন্দর ত্যাগ করা: কাস্টমস ক্লিয়ার করার পর আপনি আনুষ্ঠানিকভাবে গন্তব্য দেশে প্রবেশ করেছেন। এখন ট্যাক্সি, রেন্টাল কার, ট্রেন, মেট্রো বা প্রাক-বুকড ট্রান্সফারের মাধ্যমে আপনার চূড়ান্ত গন্তব্যে (হোটেল, বাড়ি) রওনা দিতে পারেন।
বিমান ভ্রমণ মানেই শুধু প্লেনে চড়া নয়, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ প্রক্রিয়া। এই গাইডে বর্ণিত বিমান ভ্রমণের প্রস্তুতির প্রতিটি ধাপ মেনে চললেই আপনি সেই উদ্বেগ দূর করে ফেলতে পারবেন যা অনেক অভিজ্ঞ ভ্রমণকারীকেও তাড়া করে। সঠিক কাগজপত্র, স্মার্ট প্যাকিং, সময়ানুবর্তিতা এবং ভেতরে-বাইরে কী করবেন সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা – এই চারটি স্তম্ভই আপনাকে একটি মসৃণ, নিরাপদ এবং উপভোগ্য আকাশযাত্রার নিশ্চয়তা দেবে। মনে রাখবেন, পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতি যত নিখুঁত হবে, আপনার ভ্রমণ ততই আনন্দময় হবে। আপনার পরবর্তী ফ্লাইটের টিকিট বুক করার পরই এই গাইডটি আবার একবার দেখে নিন, এবং নিশ্চিন্তে উড়াল দিন!
জেনে রাখুন (FAQs)
প্রশ্ন: বিমান ভ্রমণের আগে কতক্ষণ আগে বিমানবন্দরে পৌঁছানো উচিত?
উত্তর: আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্য কমপক্ষে ৩ ঘণ্টা এবং দেশীয় ফ্লাইটের জন্য কমপক্ষে ২ ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে পৌঁছানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকা বা চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের যানজট, লম্বা চেক-ইন ও নিরাপত্তা লাইন এবং অনাকাঙ্ক্ষিত দেরির সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখে এই সময় নির্ধারণ করা হয়। দেরিতে পৌঁছালে চেক-ইন বন্ধ হয়ে যেতে পারে বা আপনি ফ্লাইট মিস করতে পারেন।প্রশ্ন: হাতে-লাগেজে (ক্যারি-অন) কী কী জিনিস নিতে পারি? তরল পদার্থের জন্য কী নিয়ম?
উত্তর: ক্যারি-অন ব্যাগে আপনি সাধারণত জরুরি ওষুধ, ইলেকট্রনিক্স (ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, ক্যামেরা), গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, একটি সেট জামাকাপড়, বই, ছোট স্ন্যাক্স ইত্যাদি রাখতে পারেন। তরল পদার্থের (লিকুইড, জেল, অ্যারোসল, ক্রিম) জন্য কঠোর নিয়ম: প্রতিটি আইটেমের ধারণক্ষমতা ১০০ মিলিলিটার (৩.৪ আউন্স) এর বেশি হতে পারবে না। সব তরল পদার্থ একটি স্বচ্ছ, রিজাইডেবল প্লাস্টিক ব্যাগে (আয়তন সাধারণত ১ লিটার) রাখতে হবে এবং নিরাপত্তা পরীক্ষার সময় আলাদাভাবে ট্রেতে রাখতে হবে। প্রেসক্রিপশন ওষুধ বা বেবি ফুডের জন্য আলাদা নিয়ম থাকতে পারে, প্রয়োজনে আগে থেকে জানুন।প্রশ্ন: চেকড-ইন লাগেজে ওজন সীমা কত? সীমা অতিক্রম করলে কী হয়?
উত্তর: চেকড-ইন লাগেজের ওজন সীমা এয়ারলাইন, টিকিটের শ্রেণী (ইকোনমি, বিজনেস), এবং গন্তব্য ভেদে ভিন্ন হয়। সাধারণত অর্থনৈতিক শ্রেণীতে ২০ কেজি থেকে ৩০ কেজি পর্যন্ত অনুমোদিত। আপনার এয়ারলাইনের ওয়েবসাইটে বা টিকিটে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা থাকে এটি, তাই অবশ্যই চেক করুন। ওজন সীমা অতিক্রম করলে প্রতি অতিরিক্ত কেজির জন্য আপনাকে প্রচুর অতিরিক্ত চার্জ (Excess Baggage Fee) দিতে হবে, যা প্রায়ই আগে থেকে অতিরিক্ত ওজনের ভাতা (Extra Allowance) কিনতে পারার চেয়ে অনেক বেশি ব্যয়বহুল। সীমা অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন।প্রশ্ন: বিমানে ওঠার পর কানে ব্যথা বা চাপ লাগে, কী করব?
উত্তর: টেক-অফ (উড্ডয়ন) এবং বিশেষ করে ল্যান্ডিংয়ের (অবতরণ) সময় বায়ুর চাপের পরিবর্তনের কারণে কানে ব্যথা বা ভোঁতা ভাব অনুভূত হওয়া খুবই স্বাভাবিক। এ থেকে মুক্তি পেতে:- চুইংগাম চিবান বা ক্যান্ডি চুষুন (লালা গ্রন্থির কর্মকাণ্ড বাড়ে, গিলতে সাহায্য করে)।
- প্রায়ই জোরে গিলে ফেলুন বা জিবা নাড়ান।
- ভ্যালসালভা ম্যানুভার: গভীর শ্বাস নিন, নাকের নাসারন্ধ্র আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরে বন্ধ করুন এবং মুখও বন্ধ রাখুন, এবার নিঃশ্বাস নাকের দিকে ধীরে ধীরে চাপ দিন (মানে নাক ফোলানোর মতো, কিন্তু নাক বন্ধ থাকায় বাতাস কানের দিকে চাপ দেয়)। সতর্কতার সাথে করুন।
- শিশুদের জন্য: বোতলে দুধ/পানি পান করান বা প্যাসিফায়ার দিন।
- ইয়ারপ্লাগ: বিশেষ বিমান ভ্রমণের জন্য ডিজাইন করা ইয়ারপ্লাগ (যেমন ‘EarPlanes’) ব্যবহার করতে পারেন, যা চাপের পরিবর্তন ধীরে ধীরে হতে সাহায্য করে।
- প্রশ্ন: ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স কি সত্যিই জরুরি? কী কী কভার করে?
উত্তর: হ্যাঁ, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স অত্যন্ত জরুরি এবং প্রায়শই বাধ্যতামূলক (ভিসার শর্ত হিসেবে)। এটি শুধু মেডিকেল ইমার্জেন্সি (যা বিদেশে অত্যন্ত ব্যয়বহুল) কভারই করে না, বরং আরও অনেক কিছু কভার করতে পারে, যেমন:- ফ্লাইট ক্যানসেলেশন বা বিলম্ব (Trip Cancellation/Delay)
- লাগেজ হারানো, দেরিতে আসা বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া (Baggage Loss/Delay/Damage)
- ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা (Personal Liability)
- ভ্রমণ কেটে যাওয়া (Trip Interruption)
- পাসপোর্ট/ট্রাভেল ডকুমেন্ট হারানো
- জরুরি চিকিৎসা পরিবহন (Medical Evacuation)
বিভিন্ন পলিসির কভারেজ ভিন্ন হয়, তাই কেনার আগে বিস্তারিত পড়ে নিন এবং আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী বেছে নিন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।