মাওলানা নোমান বিল্লাহ : বিয়েতে পাত্র ও পাত্রীর দিনদারিতা, বংশ মর্যাদা, আর্থিক ও চারিত্রিক বিষয়গুলো মিল রাখাকে কুফু বা সমতা রক্ষা বলে। কোরআন ও হাদিস বিশারদগণ এ বিষয়ে তাদের কিতাবসমূহে বিস্তর আলোচনা করেছেন।
বিয়েতে কুফু বা সমতা রক্ষা করলে সে ক্ষেত্রে সংসার জীবনে সবকিছু সহজ হয়। এ জন্য যতটা সম্ভব কুফু ঠিক রাখার চেষ্টা করা উচিত। যেসব বিষয়ে কুফু মিলিয়ে দেখা যেতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা করা হলো।–
আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘তিনিই (আল্লাহ) মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পানি থেকে। এরপর তিনি তার বংশগত ও বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। তোমার রব সর্বশক্তিমান।’ (সুরা ফুরকান ৫৪)
বুখারি শরিফে কুফুর অধ্যায়ে আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি (রহ.) বলেছেন, এই আয়াতে বংশ ও বিয়ের কথা বলে বংশগতভাবে কুফু রক্ষার কথা বলা হয়েছে। বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনে যাতে ভবিষ্যৎ বংশ রক্ষার ব্যবস্থা হয়, সেই দৃষ্টিতে কুফু রক্ষা করা একটা জরুরি বিষয়।
ধর্মীয় ও চারিত্রিক কুফু
আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি (রহ.) লিখেছেন, ‘কুফু’ ইসলামি বিশেষজ্ঞদের কাছে সর্বসম্মত ও গৃহীত। তবে সেটি প্রধানত গণ্য হবে দিন পালনের ব্যাপারে। কাজেই মুসলিম মেয়েকে কাফিরের কাছে বিয়ে দেয়া যেতে পারে না এবং ব্যভিচারী পুরুষ ইমানদার মেয়ের জন্য এবং ব্যভিচারী নারী ইমানদার পুরুষের জন্য কুফু নয়।
কোরআনের এক আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তবে যে ব্যক্তি মুমিন, সে কি পাপাচারীর মতো? তারা সমান নয়।’ (সুরা সাজদা ১৮) অর্থাৎ মুমিন ও ফাসিক এক নয়। তাদের মধ্যে কোনো ধরনের সমতা ও সাদৃশ্য নেই।
ইমাম শাওকানি (রহ.) লিখেছেন, দিনদারি ও চরিত্রের দিক দিয়ে কুফু আছে কি না, বিয়ের সময়ে তা অবশ্যই লক্ষ করতে হবে।
আর্থিক কুফু
ইমাম শাফিয়ি (রহ.) ধন-সম্পত্তির দৃষ্টিতেও কুফুর গুরুত্ব স্বীকার করেছেন। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা এ কথা প্রমাণ করে না যে ধনী ও গরিবের সন্তানের মধ্যে পারস্পরিক বিয়ে হলে দাম্পত্যজীবনে তাদের সুখময় ভালোবাসার সৃষ্টি হতে পারে না। তবে একতরফা ধন-ঐশ্বর্য ও বিত্ত-সম্পদের প্রাচুর্য অনেক সময় দাম্পত্যজীবনে তিক্ততারও সৃষ্টি করতে পারে, তা অস্বীকার করা যায় না।
একজন যদি হয় ধনীর দুলাল আর একজন গরিবের সন্তান, তাহলে যদিও সেখানে ঘৃণার কোনো কারণ থাকে না, কিন্তু একজন যে অন্যজনের কাছে যথেষ্ট আদরণীয় না-ও হতে পারে; এসব বাস্তবতা সামনে রেখে দিনদারি ও নৈতিক চরিত্রের পাশাপাশি বংশ মর্যাদা, জীবিকার উপায় ও আর্থিক অবস্থার বিচার হওয়াও অন্যায় কিছু নয়।
বংশগত কুফু
ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম শাফিঈ (রহ.) একটি হাদিসের ভিত্তিতে বংশীয় ‘কুফু’র গুরুত্ব স্বীকার করেছেন।
হানাফি মাজহাবে ‘কুফু’র বিচারে বংশ মর্যাদা ও আর্থিক অবস্থাও বিশেষভাবে গণ্য। এর কারণ এই যে বংশ মর্যাদার দিক দিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পার্থক্য হলে যদিও একজন অন্যকে ন্যায়সংগতভাবে ঘৃণা করতে পারে না, কিন্তু একজন অন্যজনকে অন্তর দিয়ে গ্রহণ করতে অসমর্থ হতে পারে—তা অস্বীকার করা যায় না।
এ ছাড়া বহুসংখ্যক মনীষীর মতে, চারটি কুফুর বিচার গণ্য হয়ে থাকে। ১. দিনদারিতা, ২. স্বাধীনতা (দাস-দাসী হওয়া বা না হওয়া), ৩. বংশ এবং ৪. শিল্প-জীবিকা। তাদের অনেকে আবার ৫. দোষ-ত্রুটিমুক্ত ও ৬. আর্থিক সচ্ছলতার দিক দিয়েও কুফুর বিচার গণ্য করেছেন। ফলে কুফু বিচারের জন্য মোট দাঁড়াল ছয়টি গুণ।
এসব বিষয় মাথায় রেখে বিয়ের ক্ষেত্রে এগোলে সেখানে আল্লাহ তাআলা বরকত দেবেন ইনশাআল্লাহ। কুফু মেলালেই যে বিয়ে সার্থক হবে তা না। বরং কুফু মেলালে বিবাহিত জীবনে সবকিছু মানিয়ে নিতে সহজ হয়। উভয় পরিবারের বন্ধন শক্ত হয়। যোগাযোগ সহজ হয়। পরস্পর যোগাযোগে কোনো সংকোচ কাজ করে না। তৃতীয় পক্ষ নাক ছিটকানোর মতো পরিস্থিতি কম তৈরি হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।