বিয়ের আগ দিয়ে সংশয়, উদ্বেগ কিংবা চাপ অনুভব করেন প্রায় সবাই। আর এই বিষয়টিকেই মনোবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘কোল্ড ফিট’ বা ‘পা ঠান্ডা হয়ে আসা’। ‘কোল্ড ফিট’ মূলত একটি টার্ম, যার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ সঙ্গীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবার আগে অনিশ্চিয়তার অনুভূতিকে বোঝায়। মূলত প্রতীকী অর্থে এই টার্মটির ব্যবহার হয়ে থাকে।
সাইকোলজিস্ট হাসিবুল আজিম আকাশ বলেন, কোল্ড ফিট তখনই হয়, যখন কোনো অজানা বিষয় নিয়ে ভয় বা উদ্বেগ কাজ করে। তবে বিয়ের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি অনেক বেশি কাজ করে। আমি পারব কি না, আমার সাথে এমনটা হবে কিনা এমন চিন্তা থেকেই ভয়টা কাজ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক ক্লিনিক্যাল সাইকোলিজিস্ট জোসেলিন চার্নার্সের মতে, বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর মানুষ যে ভয়, সংশয় আর দুশ্চিন্তা কাজ করে তার একটি ‘আমব্রেলা টার্ম’ কোল্ড ফিট। কোল্ড ফিট হলে সম্পর্কে দুইজন কতটা মানানসই হবে কিংবা সম্পর্কটির স্থায়িত্ব কতদিন হবে এমন সব বিষয় নিয়ে উদ্বেগ কাজ করতে পারে। মতবিরোধ, জীবনের ভিন্ন লক্ষ্য বা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আলাদা প্রত্যাশা নিয়ে উদ্বেগের মতো বিষয়গুলোও সিদ্ধান্তের ওপর অনিশ্চয়তার ছায়া ফেলতে পারে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মঞ্জুরুল ইকরাম বলেন, বিয়ের প্রস্তুতিসহ সব কিছু মিলিয়ে কখনও কখনও “প্রথম যে বিষয়টা আসে সেটা হলো বিয়ে করব না।” এটি কোল্ড ফিটেরই একটি লক্ষণ। বিয়ের আগে কেউ কোল্ড ফিটে ভুগছেন কিনা তা বোঝার জন্য এমন আরও বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে: যেমন, ব্যক্তির তীব্র সংশয়ের অনুভূতি সৃষ্টি হওয়া। অনেক সময় বিয়ের আগে ব্যক্তি নিজের এবং সঙ্গী- দুইজনের ভবিষ্যৎ নিয়েই সংশয়ে ভোগেন, যে যাকে পছন্দ করেছেন সে মানুষটা তার জন্যে ঠিক কিনা কিংবা বিয়ের জন্য সময়টা সঠিক কিনা। এমনকি বিয়েই করতে চাচ্ছেন কিনা – এমন অনুভূতিও কাজ করে। এছাড়াও সারা জীবনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবার বিষয়টি নিয়েও এক ধরনের সংশয়ও কাজ করে। কখনও কখনও বিয়ে ভাঙার মতো চিন্তাও মাথায় খেলা করে।
তবে সবার ক্ষেত্রে বিষয়গুলো যে খুব প্রকাশ্যে আসে, তেমনও না। অনেকের ক্ষেত্রে বিয়ের পরিকল্পনা ঘিরে তীব্র উদ্বেগে কাজ করে, কিন্তু সে নিজেই বুঝতে পারে না যে এটি ঘটছে কোল্ড ফিটের কারণে।
যেমন, বিয়েতে কোন রঙের পোশাক পরবেন কিংবা হানিমুনে কোথায় যাবেন – তা নিয়ে চিন্তা করতে করতে কেউ যদি কান্নায় ভেঙে পড়ে তবে তা হয়তো সব বিষয় নিয়ে তার আরও নিখুঁত হতে চাওয়ার কারণে না, বরং বিয়ে নিয়ে ভয়ের কারণেই হচ্ছে। আর সবশেষে সঙ্গীর সঙ্গে অনবরত ঝগড়া হতে পারে এবং অন্যান্য ব্যবহারগত পরিবর্তনও আসতে পারে।
সাইকোলজিস্ট হাসিবুল আজিম আকাশের মতে, বিয়ের আগে কিছু বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা জরুরি। বিয়ের জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা হয়, দেখতে সুন্দর কিনা বা ভালো আয় করে কিনা। কিন্তু এটাই শেষ না। এক্ষেত্রে জীবনের দর্শন মেলা প্রয়োজন। উদাহরণ দিয়ে আকাশ বলেন, কারো জন্যে যদি দেশে থাকা কিংবা সরকারি চাকরি করা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে, আর তার ভবিষ্যৎ সঙ্গীর ইচ্ছা থাকে দেশের বাইরে সেটেল করা- তবে পরবর্তী সময়ে তাদের মধ্যে ঝামেলা হবার শঙ্কা রয়েছে।
আবার কেউ যদি চান তার ভবিষ্যৎ সঙ্গী বিয়ের পর কাজ করবে না, কিন্তু তিনি যাকে বিয়ের কথা ভাবছেন, তার ইচ্ছা থাকে যে বিয়ের পরও কাজ চালিয়ে যাবেন সেক্ষেত্রেও সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এমন বিষয়গুলো যেন ভবিষ্যতে ঝামেলার উদ্রেক না করে, তা নিশ্চিত করতে আগেই নানামুখী আলোচনা করা প্রয়োজন। এতে করে পরবর্তী সময়ে কোল্ড ফিট দেখা দিলেও, সহজেই তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এছাড়াও পরিবার, বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেও কোল্ড ফিট কাটানো যেতে পারে। সবশেষে নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া জরুরি। সম্পর্কে যে বিষয়গুলো সামনে আসছে তা কি সমাধান সম্ভব কিনা সে বিষয়েও বুঝতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।