জুমবাংলা ডেস্ক : বিয়ের গয়না বিক্রির টাকায় ২০০৫ সালে দুটি গরু কিনে খামার শুরু করেন জেসমিন আরা। দীর্ঘ ১৮ বছরে তার খামারের আয়তন বেড়েছে। হয়েছেন কোটিপতি। বর্তমানে খামারে ১০০টি গরু রয়েছে। পাশাপাশি গড়েছেন ছাগল ও হাঁসের খামার। পাশেই করছেন মাছ চাষ। বাংলা ট্রিবিউন-এর প্রতিবেদক হালিম আল রাজী-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
জেসমিনের খামারে রয়েছে শতাধিক বিভিন্ন জাতের গরু। যার মধ্যে ৩০টি গাভি থেকে প্রতিদিন আড়াইশো লিটার দুধ পান। যা বিক্রি করে প্রতিদিন আয় হয় ৭-১০ হাজার টাকা। ছাগল, হাঁস ও মাছের খামার থেকে প্রতি মাসে আয় তিন লাখ টাকা। বর্তমানে তার খামারে ১০ জন যুবক কাজ করছেন।
জেসমিনের বাড়ি দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার জোৎবানী ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামে। বাড়ির পাশেই গড়ে তুলেছেন ‘জেসমিন ডেইরি ফার্ম’ নামে বিশাল গরুর খামার। ইতোমধ্যে তিনবার উপজেলা পর্যায়ে ডেইরি বিভাগে প্রথম স্থান অর্জনের পুরস্কার পেয়েছেন। এ ছাড়া গত বছর বেগম রোকেয়া দিবসে সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে জয়িতা সম্মাননা পেয়েছেন। এ ছাড়া ব্র্যাকের পক্ষ থেকে বাছুর প্রদর্শনীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন জেসমিন।
খামারে কর্মরত শ্রমিক সবুজ হোসেন বলেন, ‘আমি জেসমিন আপার খামারে একজন শ্রমিক হিসেবে কাজ করি। খামারের গরুর গোসল করানো খাবার দেওয়াসহ দেখাশোনার কাজ করি। মাসিক ১০ হাজার টাকা বেতন দেয়। এতে আমার পরিবার নিয়ে ভালোই চলছে।’
আরেক শ্রমিক আরশাদ হোসেন বলেন, ‘আমার বাবা নেই। কোনও কাজ কর্ম ছিল না। খুব কষ্ট করে মা সংসার চালাতো। এখন জেসমিন আপার খামারে কাজ করছি। যে টাকা পাচ্ছি সেই টাকা দিয়ে সংসার হাল ধরতে পারছি। আমার মতো আরও অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। তারাও কাজ করে ভালোই আছে।’
অপর শ্রমিক সিদ্দিক হোসেন বলেন, ‘জেসমিন আপার খামারে গরু, হাঁস ও ছাগল চারটি পুকুর রয়েছে। যেগুলোতে মাছ চাষ করা হয়। খামারে আমরা ১০ জন শ্রমিক রয়েছি। যারা সব কাজ করে থাকি। এই খামারে কাজের ফলে আমাদের বেকারত্ব দূর হয়েছে। সংসার ভালোভাবে চলছে।’
পাশের গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব হোসেন বলেন, ‘মানুষের কাছ থেকে শুনে জেসমিন আরার খামার দেখতে এসেছি। এসে যা দেখলাম, তাতো অবাক কাণ্ড। গরুর খামার করেছেন। পুকুরে মাছ চাষ করছেন। আবার হাঁস পালন করছেন। তার খামার দেখে নিজে খামার গড়ার ইচ্ছাপোষণ করেছি। তার কাছ থেকে এই সম্পর্কে খুঁটিনাটি সব জেনেছি। বাকিটা প্রাণিসম্পদ অফিসে গিয়ে কর্মকর্তাদের পরামর্শক্রমে খুব শিগগিরই খামার গড়ে তুলবো।’
দুটি গরু দিয়ে নিজের ভাগ্যবদল করেছেন বলে জানালেন জেসমিন আরা। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। সকালে স্কুলের যাওয়ার পর দিনের অনেকটা সময় আমার কোনও কাজকর্ম থাকতো না। বাসায় বসে থেকে ভালো লাগতো না। আগে থেকেই আমার গরু ছাগল লালনপালনের ইচ্ছে ছিল। সখ ছিল খামার করার। কিন্তু নানা কারণে হয়ে ওঠেনি।’
‘২০০৫ সালে নিজের বিয়েতে পাওয়া কিছু গয়না বিক্রির টাকা দিয়ে দুটি গাভি দিয়ে বাড়ির পাশে ছোট করে খামারের কার্যক্রম শুরু করি। স্বামীর অনুপ্রেরণা ও নিজের প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে সেই দুটি গাভির বাছুর থেকে খামারে গরুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। ষাঁড় বাছুরগুলো বিক্রি করে বকনা গরু রেখে দিতাম। এভাবে গরুর সংখ্যা বেড়ে যায়। এরপর ধীরে ধীরে গরু বাড়তে থাকায় স্থান সংকুলান না হওয়ায় পাশের আরও কিছু জায়গা কিনে কিছুটা বড় পরিসরে খামার দিই’ বলছিলেন জেসমিন আরা।
তিনি বলেন, ‘দেশি জাতের গরু দিয়ে শুরু করলেও পরে সেগুলো বিক্রি করে বিদেশি জাতের গরু কিনেছি। বর্তমানে আমার খামারে ১০০টি গরু আছে। এর মধ্যে ৩০টি গাভি। এর পাশাপাশি আমি নতুন করে ছাগল ও হাঁস পালন করছি। এ ছাড়া চারটি পুকুর লিজ নিয়েছি। যেখানে পোনা উৎপাদন থেকে শুরু করে মাছ চাষ করে বড় করে বিক্রি করছি। এসব কাজের জন্য আমার এই খামারে ১০ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। সবমিলিয়ে আল্লাহ আমাকে কোটিপতি বানিয়েছেন।’
জেসমিন আরা একজন সফল খামারি বলে জানালেন বিরামপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বিপুল কুমার। তিনি বলেন, ‘খামার গড়ে তোলার পর থেকে জেসমিনকে প্রাণিসম্পদ অফিস সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়োজিত দুজন কর্মী তার খামারটির সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখেন। তার এই সাফল্য দেখে ওই গ্রামের অনেকে খামার গড়তে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। কী ধরনের গরু কিনবেন, কীভাবে শেড তৈরি করবেন, এসব বিষয়সহ তাদের সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আমদানি নির্ভরতা কাটিয়ে মাংস ও দুধের চাহিদা মেটাতে তার মতো খামারির সংখ্যা বাড়াতে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।’
দেশে প্রথমবার কলাগাছের আঁশে তৈরি হলো দৃষ্টিনন্দন শাড়ি, দাম ৮ হাজার
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।