জুমবাংলা ডেস্ক : বিরিয়ানি কিন্তু বেশির ভাগ বাঙালিরই প্রথম প্রেম। বিরিয়ানির প্রথম প্রচলন শুরু হয় দিল্লি এবং লখনউতে, মোগলাই এবং অওধি ক্যুইজিন হিসেবে। কিন্তু এই বিরিয়ানি সমগ্র বাঙালি জাতির মন জয় করে নিয়েছে খুব সহজেই। আর এখন মফস্সল হোক কিংবা শহর কলকাতা— এখন সব জায়গাতেই বিরিয়ানির দোকান রয়েছে।
একটা বড় হাঁড়ি, তার গায়ে একটা লাল শালু জড়ানো, এটার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। ওই হাঁড়িই হলো বিরিয়ানিপ্রেমীদের আসল ‘সিগন্যাল’। বিরিয়ানিপ্রেমীরা ওই লাল শালু পেচানো হাঁড়ির দিকে পাগলা ষাঁড়ের মতো দৌড়বেন, এটাই স্বাভাবিক, ঠিক এমনটাই কি ভাবেন পরিবেশকরা? চিকেন বিরিয়ানি, মটন বিরিয়ানি, আন্ডা বিরিয়ানি, আলু বিরিয়ানি বা ভেজ বিরিয়ানি— বিরিয়ানির অনেকরকম প্রকারভেদ রয়েছে। তবে কোনওদিন কী কখনো ভেবে দেখেছেন, এই বিরিয়ানির ডেকচি কেনো লাল শালুতে ঢাকা থাকে?
আসুন, এই বিষয়টাকে নিয়ে একটু সহজভাবে চিন্তা করি আমরা, আমাদের দেশে যখন বিদেশী অতিথিরা আসেন তখন তাকে আমরা কেন লালগালিচা পেতে সংবর্ধনা দিই ? কেনোই বা লালের জায়গায় নীল বা হলুদ গালিচা পেতে তাদেরকে স্বাগত জানাইনা আমরা? এই যে এত মাজার, উরস হচ্ছে সেখানে কেনোই বা বাঁশের মাথায় লাল শালুর পতাকা ঝোলানো থাকে? বিরিয়ানি, হালিমের ডেকচিতেই বা কেনো লাল শালু জড়ানো থাকে? সেখানে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য তো কালো বা অন্য চকমকে কোনও মখমল বা দামি কারুকাজ কাপড়ও ব্যবহার করা যায়? পান ও পনিরওয়ালারাও এই লাল শালু কেন ব্যবহার করেন?
কারণ, মানুষের ভাষার মতোই কিন্তু রংয়েরও একটা আলাদা ভাষা আছে। আপনার চিন্তাতেও কিন্তু এই রং অনেকটাই প্রভাব রাখে। তাই নয় কি? তেমনই কিন্তু পৃথিবীর প্রত্যেক দেশেই এই রংয়ের ভিন্ন ভিন্ন অর্থ রয়েছে। পতাকাগুলোই দেখুন, বেশির ভাগ ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর পতাকার রঙ ও কিন্তু সবুজ এবং সাদা। কারণ কেনো জানেন ? কারণ সবুজ রংকে শান্তি আর সাদাকে স্বচ্ছতা এবং শুদ্ধতার প্রতীক বলে মানা হয়। তেমনই লাল রংয়ের ও ব্যবহার কিন্তু একেক দেশে আলাদা আলাদা। কোনও কোনও দেশে এই লাল রং শৌর্য, আক্রমণ, বিপদ বোঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। যেমন, যে কোনও যুদ্ধে লাল নিশানা কিন্তু সৈন্যদের শত্রুর মোকাবিলায় নির্দেশনা দান করত। ট্রেনের অথবা রাস্তার সিগনাল ও কিন্তু তাই। ভেবে দেখুন, খেলার মাঠেও কিন্তু ফুটবল রেফারী প্রথমে সতর্ক বার্তা হিসাবে হলুদ এবং পরে কোনও খেলোয়াড় বিপদজনক আচরণ করলে তার জন্য লাল কার্ড ব্যবহার করে থাকেন।
তবে এই লাল রংকে আমরা সাধারণত সৌভাগ্য, উষ্ণতা, ও আনন্দ-উৎসব এবং ভালবাসার আবেগের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করি। আমাদের হৃদয়ের রং ও তো তাই? তাই না? না, শুধু তাই নয়, কাউকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানোর জন্যও কিন্তু হৃদয়ের এই লাল রং-ই আমরা ব্যবহার করে থাকি।
গোড়ার দিকের আবার মুঘল শাসকরা পারস্য সংস্কৃতি প্রভাবিত হয়েছিলেন। তারা তাদের জীবনে এই ধারাই সবসময় অনুকরণ করতেন। সম্রাট হুমায়ুন ছিলেন এই প্রথার পথপ্রদর্শক। কারণ তিনি যখন রাজ্য হারিয়ে ইরানে আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেই সময় পারস্য সম্রাট তাকে এই লালগালিচার মাধ্যমেই উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন । খাবার পরিবেশন করার জন্য দরবারি রীতিগুলোতে, রুপোলি পাত্রে যে খাবার রাখা থাকতো তার জন্য লাল কাপড় আর ধাতব ও চিনামাটির পাত্র ষে যে খাবার রাখা থাকত তার জন্য সাদা কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে ডেকে নিয়ে আসা হতো। মুঘলরা তাঁদের দরবারে এই রীতি চালু করেন। শুধু তাই নয় সম্মানিত ব্যক্তি বা আধ্যাত্মিক সাধকদের জন্যও এই লাল পাগড়ি ব্যবহার করা হত।
বিরিয়ানি সবচেয়ে প্রথম ভারতে পা রাখে মুঘল আমলেই। খাবার পরিবেশন করার জন্যে লখনউয়ের নবাবরাও এই প্রথা অনুসরণ করতেন। সামাজিক জীবনে অভিজাত্য, বনেদি, ও উষ্ণতা প্রকাশের জন্য এই লাল শালু বা লাল কাপড়ের ব্যবহার চলে আসছে অনেক যুগ ধরেই। রঙের শহর আমাদের শহর কলকাতাই বা কিভাবে তার ব্যতিক্রম হয় বলুন?
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।