হেদায়েত উল্লাহ সৌখিন : গানে, কবিতায় ও লোকমুখে বহুল প্রচলিত একটি বৃক্ষের নাম ‘পারুল’। সাত ভাই চম্পার একমাত্র বোন পারুলকে কে না চিনে? তবে শুনতে কষ্ট লাগলেও এটাই সত্যি যে পারুল গাছ আজ প্রায় বিলুপ্ত।
উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ও গবেষকদের মতে, উপমহাদেশের সর্বশেষ পারুল গাছটি রয়েছে বগুড়া জেলার সোনতলা
উপজেলার সরকারী নাজির আকতার কলেজ চত্বরে।
বাংলায় এই গাছকে বলে পারুল, হিন্দিতে পারুলা আর ইংরেজিতে বলে ট্রাম্পেট।
এই পারুল গাছ BIGNONIACEACE পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এই পারুল গাছটির উচ্চতা প্রায় ৮০/৯০ ফুট ও পাতার রং গাঢ় সবুজ। ৬/৭ ইঞ্চি লম্বা পাতাযুক্ত এই গাছে এক ইঞ্চি লম্বা সাদা রঙের ফুল ফোটে। ফুলে পাঁচটি পাঁপড়ি থাকে এবং ফুলের মিষ্টি সৌরভ রয়েছে। ফুল থেকে বরবটির মতো দেখতে ফল হয় এবং এতে বীজ থাকে। ইতোপূর্বে উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা এর বংশবৃদ্ধির চেষ্টা করেও সফল হতে পারেননি।
উদ্ভিদ গবেষক ড. মো: আউয়াল বলেন, একসময় আমাদের দেশে শালবনগুলোতে পারুলের দেখা মিলত। শাল গাছের সাথে একই পরিবেশে বেড়ে উঠত গাছটি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পৃথিবী থেকে অনেকগাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশে শালবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আর পারুল অনেক আগেই একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, প্রত্যেকটি গাছের বেঁচে থাকার জন্য একটি বিশেষ পরিবেশ প্রয়োজন। কোনো বিশেষ
কারণে পরিবেশের পরিবর্তন ঘটলে পুরো ইকোসিস্টেমের পরিবর্তন হয়। ফলে অনেক উদ্ভিদ বিলুপ্ত হয়ে যায়। পারুল গাছের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন তিনি।
পরিবেশ দূষণ, বিশেষ করে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে এমন হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করেন ড. মো: আউয়াল।
গাছটি সম্পর্কে জানতে চাইলে এলাকাবাসীরা জানান, সোনাতলার নাজির আক্তার কলেজের জমি দানকারী মরহুম সৈয়দ নুরুল হুদা অবিভক্ত ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরের খড়গপুর থেকে দুটি চারা এনে এখনে রোপন করেছিলেন। চারা দুটির একটি কিছুদিন পরই মারা যায়। অপরটি আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে তাঁর অস্তিত্ব বিশ্বের কাছে জানান দিতে।
বর্তমানে উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা পারুল গাছকে বিরল গাছ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। গাজীপুরের শালবনে আরও পাঁচটি পারুল গাছের দেখা মিললেও সেগুলো আদি পারুল নয় বলে জানিয়েছেন তাঁরা। সোনাতলার মাটি ও পরিবেশ পারুলের জন্য উপযুক্ত হতে পারে বলে তাঁদের ধারণা। এটি একটি ভেষজ গাছ যা ঔষধ তৈরিতে ব্যাবহার করা হয়।
তবে আশার কথা, সোনাতলা উপজেলার গড়ফতেপুর গ্রামের আব্দুল লতিফ আকন্দের পুত্র দিদারুল ইসলাম সজল পারুলের চারা তৈরি করতে পেরেছেন বলে জানা গেছে। চারাগুলি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. অপূর্ব কুমার রায়কে অবহিত করলে তিনি চারাগুলিকে পারুলের চারা হিসেবে নিশ্চিত করেন।
তৈরি হোক পারুলের নতুন চারা, পারুলের স্নিগ্ধতায় ও সুগন্ধে ভরে উঠুক ধরণী, প্রকৃতি ফিরে পাক তাঁর স্বরুপ- এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয় সচেতন মহলের।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।