যদি প্রশ্ন করা হয় পৃথিবীর ইতিহাসে কে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সময় বেঁচে ছিলেন? তার বয়সই বা কথা ছিল? গিনেজ বিশ্ব রেকর্ড অনুযায়ী তিনি জাপানের জিরোমন কিমুরা মারা যাবার সময় যার বয়স ছিল ১১৬ বছর। এখন কথা হলো, মানুষের মধ্যে তিনিই সর্বোচ্চ বেঁচে ছিলেন। তবে প্রানী জগতে এমন অনেক প্রানীই আছে যা কিনা শত শত বছর ধরে বেঁচে থাকতে পারে। আজকের লেখা তাদের নিয়েই।
ওশেন কোয়াহগ- জীবনকাল, প্রায় ৫০০ বছর
ওশেন কোয়াহগ একটি গভীর সমুদ্রের ঝিনুক, যেটি এখন পর্যন্ত নথিভুক্ত সবচেয়ে দীর্ঘজীবী প্রাণী। “মিং” নামক একটি কোয়াহগ ঝিনুকের বয়স ছিল ৫০৭ বছর। এরা উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের শীতল তলদেশে বাস করে এবং খুবই ধীরে বৃদ্ধি পায়।
এদের ধীর বিপাকক্রিয়া (মেটাবলিজম) এবং শীতল পরিবেশে বসবাস করার ফলে শরীরের কোষগুলো ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়। প্রচন্ড শক্ত খোলস তাদের শত্রু থেকে রক্ষা করে ফলে তারা শতাব্দীর পর শতাব্দী বেঁচে থাকতে পারে।
গ্রিনল্যান্ড শার্ক– জীবনকাল, প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ বছর
গ্রিনল্যান্ড শার্ক হলো বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘজীবী মেরুদণ্ডী প্রাণী। এরা উত্তর আটলান্টিক ও আর্কটিক মহাসাগরের বরফশীতল পানিতে প্রচন্ড গভীরে বসবাস করে।
কিছু শার্কের বয়স ৫০০ বছরের কাছাকাছি বলে ধারণা করা হয়, এবং তারা প্রজননে সক্ষম হয় প্রায় ১৫০ বছর বয়সে। এদের অত্যন্ত ধীর বৃদ্ধির হার (প্রতি বছরে মাত্র ১ সেন্টিমিটার) এবং বরফ শীতল পানিতে ধীর বিপাকক্রিয়া বয়স বাড়ার গতি কমিয়ে দেয়। গভীর সমুদ্রের পরিবেশে শত্রু কম থাকায় জীবনযাত্রা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ হয় যা তাদের বেশিদিন বাঁচতে সাহায্য করে।
টিউব ওয়ার্ম– জীবনকাল, প্রায় ২৫০ বছরের বেশি
হাইড্রোথার্মাল ভেন্ট বা গভীর সমুদ্রের উত্তপ্ত আগ্নেয়গিরির মুখের কাছে বসবাসকারী এই টিউব ওয়ার্মগুলো একই জায়গায় স্থিরভাবে শত শত বছর আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকে। এদের মুখ নেই, পাকস্থলীও নেই। অণুজীবদের সাথে মিথষ্ক্রিয়ার মাধ্যমে এরা শক্তি উৎপাদন করে।
নিঃশব্দ পরিবেশ এবং নিম্ন শক্তি চাহিদার ফলে এদের শরীরে বার্ধক্যজনিত ক্ষয় অনেক ধীরে ঘটে। এছাড়া প্রায় শত্রুহীন পরিবেশে জীবনযাপনের ফলেও তারা অনবরত মৃত্যু ঝুঁকিতে থাকে না। এই সবকিছু মিলিয়ে এরা কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।
কই মাছ– জীবনকাল, ২২৫ বছরের বেশি
সাধারণ কই মাছ ২৫ থেকে ৫০ বছর বাঁচে, তবে কিছু কই মাছ এর চেয়েও বহু বছর বাঁচে। জাপানে থাকা ”হানাকো” নামের একটি কই মাছ ২২৬ বছর বেঁচে ছিল।
নির্বাচিত প্রজনন (সিলেক্টিভ ব্রিডিং), বন্দী অবস্থায় প্রচন্ড যত্নশীল পরিবেশ, এবং ঝুঁকিহীন জীবনযাপন কই মাছের দীর্ঘ আয়ুর কারণ। ঠান্ডা রক্তবিশিষ্ট হওয়ায় এদের বিপাকক্রিয়া ধীর থাকে, ফলে কোষের ক্ষয়ও ধীরে হয়।
বোহেড তিমি– জীবনকাল, ২০০ বছরের বেশি
বোহেড তিমি হলো বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘজীবী স্তন্যপায়ী প্রাণী। আর্কটিক অঞ্চলের বরফাচ্ছন্ন জলরাশিতে তারা বসবাস করে এবং তাদের মধ্যে কিছু তিমির দেহে শত বছর পুরোনো হারপুনের মাথাও পাওয়া যায়!
এদের বিশেষ জিনগত ক্ষমতা রয়েছে যা কোষ মেরামত করতে সাহায্য করে এবং বার্ধক্যজনিত রোগ প্রতিরোধ করে। এছাড়া ঠান্ডা পরিবেশ, ধীর জীবনচক্র, এবং দেহের বিশালতার ফলে প্রাকৃতিক শত্রুর অভাব তাদের দীর্ঘজীবী করে তোলে।
অমর জেলিফিশ- কখনও মারা যায় না
পৃথিবীর ইতিহাসে একটি প্রাণীকে বিজ্ঞানীরা কার্যত “অমর” বলে আখ্যা দিয়েছেন। এটি এক ধরনের জেলিফিশ যাকে সাধারণভাবে “অমর জেলিফিশ” নামে ডাকা হয়। এটি মূলত ভূমধ্যসাগর ও জাপানের উপকূলে দেখা যায়, যদিও এখন এটি বিশ্বের বিভিন্ন সাগরে ছড়িয়ে পড়েছে।
এই জেলিফিশের বিশেষত্ব হলো, এটি বার্ধক্যের প্রাকৃতিক চক্র এড়িয়ে বারবার নিজেকে নতুন করে গড়ে তুলতে পারে। এই প্রক্রিয়াকে বলে ট্রান্সডিফারেনসিয়েশন, সহজে বললে কোষের পুনঃ রূপান্তর অর্থাৎ যেখানে কোষগুলো নিজেদের রূপ পরিবর্তন করে নতুন জীবনে প্রবেশ করে।
ফলে, এটি বার্ধক্যজনিত কারণে কখনোই মারা যায় না। যদিও পরিবেশগত বিপর্যয়, রোগ বা শিকারী প্রাণীর আক্রমণে এটি মারা যেতে পারে, তবে প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে এর মৃত্যু হয় না। এই তথাকথিত ‘অমরত্ব’ বা কোষ নবায়ন ও বার্ধক্য প্রতিরোধে প্রানীটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।