আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এতিম-বিপন্ন শিশুদের জন্য বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক (হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক) চালুর উদ্যোগটি ব্যর্থ হয়েছে। ঢাকার মাতুয়াইলের সরকারি শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে (আইসিএমএইচ) গত ১ ডিসেম্বর মিল্ক ব্যাংকের কাজ শুরুর কথা ছিল। এজন্য বিদেশ থেকে আনা হয় আধুনিক যন্ত্রপাতিও। কিন্তু ওলামাদের একটি অংশের বিরোধিতার মুখে আটকে গেছে এর কাজ।
তবে বাংলাদেশে না হলেও বিশ্বের অনেক দেশেই কিন্তু মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক রয়েছে। শিশুদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে মায়ের দুধের ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। শিশুদের জন্য ঈশ্বর প্রদত্ত এই খবারটি নিশ্চিত করতেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্থাপন করা হয়েছে এই ব্যাংক। চলুন তাহলে এ সম্পর্কে নানা তথ্য জেনে নেয়া যাক।
যে কারণে হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) হিসাব মতে প্রতিবছর দুই কোটি শিশু কম ওজন নিয়ে জন্ম নেয়। এই ধরনের নবজাতকদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে মায়ের বুকের দুধ পান করানোর উপর বিশেষভাবে জোর দিয়েছে হু। পাশাপাশি যেকোনো নবজাতককে জন্মের পর থেকে অন্তত ছয়মাস মাতৃদুগ্ধ পান করার পরামর্শ দেয় হু এবং জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থ ইউনিসেফ। শিশু তার মায়ের দুধ না পেলে অন্যকোন মায়ের বুকের দুধ যাতে পান করতে পারে সেই ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে হু। এই প্রয়োজন থেকেই হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকের উদ্ভব। যেসব মায়েদের নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে কিংবা সন্তানকে খাওয়ানোর পরও যাদের অতিরিক্ত দুধ আছে তারা হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকে তা সংরক্ষণ করতে পারেন। আর যেসব শিশুরা মায়ের বুকের দুধ থেকে বঞ্চিত তারা সেখান থেকে দুধ পানের সুযোগ পায়।
বিশ্বের প্রথম হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক
এই ধরনের ব্যাংক প্রথম প্রতিষ্ঠা হয় ব্রাজিলে, ১৯৪৩ সালে। ১৯৮৫ সালে দেশটিতে তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় ব্রাজিলিয়ান নেটওয়ার্ক অফ হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকস। শুধু নিজ দেশে নয়, গোটা ল্যাটিন আমেরিকায় মিল্ক ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা দেয় তারা। ২০১৫ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই অঞ্চলে এমন ৩০১টি সংরক্ষণাগার রয়েছে যার ২১৮টিই ব্রাজিলে।
ইউরোপে দুই শতাধিক
ইউরোপের বিশটিরও বেশি দেশে মাতৃদুগ্ধ সংরক্ষণাগার রয়েছে। সব মিলিয়ে যার সংখ্যা ২৩৯টি বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশন। আরো ১৫ টি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া চলছে। এই অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ৩৭টি ব্যাংক আছে ইটালিতে। ফ্রান্সে ৩৬টি, সুইডেনে ২৮টি আর জার্মানিতে রয়েছে ২০টি।
উত্তর আমেরিকায়
১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকিং অ্যাসোসিয়েশন অফ নর্থ আমেরিকা। তারা এই অঞ্চলের অলাভজনক মাতৃদুগ্ধ সংরক্ষণাগারগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে। বর্তমানে তাদের অধীনে মিল্ক ব্যাংকের সংখ্যা ২৯টি।
আফ্রিকায় তিনটি
আফ্রিকার তিনটি দেশে বর্তমানে হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক রয়েছে। ১৯৮০ সালে প্রথম চালু হয় সাউথ আফ্রিকাতে, এরপর ২০১১ সালে আফ্রিকার কেপ ভার্দে এমন উদ্যোগ নেয়। সবশেষ চলতি বছরের আগস্টে কেনিয়ার নাইরোবিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দেশটির প্রথম হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক।
এশিয়ায় প্রথম ভারতে
এশিয়ায় প্রথম মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক যাত্রা শুরু করে ভারতের মুম্বাইতে ১৯৮৯ সালে। বর্তমানে যার সংখ্যা প্রায় অর্ধশত৷ চীনেও এমন ব্যাংক আছে অনেকদিন থেকে। ২০১৭ সালে সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম তাদের প্রথম মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে৷ ২০১৫ সালে থেকে এই উদ্যোগ চালু রয়েছে ফিলিপিন্সেও৷ চলতি বছর ইউনিসেফের সহযোগিতায় বিশ্বের অন্যতম বড় হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সেখানে৷
মুসলিম দেশগুলোতে
মুসলিম প্রধান দেশগুলোর মধ্যে ২০১৬ সালে তাবরিজ শহরে প্রথম মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে ইরান। চলতি বছরের আগস্টে পঞ্চম ব্যাংকের উদ্বোধন করা হয়েছে সিরাজ শহরে। ২০১২ সালে তুরস্কের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেশটিতে এ ধরনের ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নেয়। তবে এখনও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
বাংলাদেশে প্রথম
সম্প্রতি বাংলাদেশে প্রথমবারের মত মাতৃদুগ্ধ ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয়েছে। ঢাকার মাতুআইলে অবস্থিত শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে বেসরকরাভিবে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এই ব্যাংকে ৫০০ লিটার দুধ সংরক্ষণ করা যাবে৷ তবে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন এখনও হয়নি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।


