জুমবাংলা ডেস্ক: দুই শিশুকে হত্যা করা হয় মিষ্টি খাইয়ে। কিন্তু তার আগে ওই মিষ্টিতে মেশানো হয় বিষ। আর এই নৃশংস ও মর্মান্তিক ঘটনার নেপথ্যে ছিল পরকীয়া। শুধু পরকীয়া সম্পর্কের কারণে মা দুই শিশুকে হত্যা করেন।
এ যেন মিথলজির গল্পকেও হার মানায়। দুই শিশুকে মেরে দোষ দেওয়া হয় নাপা সিরাপের।
সমস্যার শুরু হয় এখানেই নাপা সিরাপ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। বহুল ব্যবহৃত এই প্যারাসিটামল সিরাপ নিয়ে এমন খবর যেন কিছুতেই মানতে পারছিল না প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো।
দুই শিশুর মৃত্যুর অভিযোগের ঘটনায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের পক্ষ থেকে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
গত ১৩ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে ‘নাপা সিরাপ’ খেয়ে দুই শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠার ঘটনায় সারা দেশ থেকে নির্ধারিত ব্যাচের (ব্যাচ নং-৩২১১৩১২১) নাপা সিরাপের নমুনা সংগ্রহের নির্দেশ দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। একইসঙ্গে কারও কাছে এ ওষুধ থাকলে দ্রুত নিকটস্থ কেমিস্ট অফিসকে অবহিত করতে এবং তা বিক্রি থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
বলা যায় রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়, ফেলে দেয় দেশব্যাপী হইচই। কিন্তু নাপা সিরাপে বিষক্রিয়া নয়, এর পেছনে পরকীয়া সম্পর্ক জড়িত ছিল। দুই শিশুকে তাদের মা মিষ্টির সঙ্গে বিষ খাইয়ে হত্যা করেছে। পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে যোগসাজসে সে এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এরপর নাপা সিরাপে বিষক্রিয়ার অপপ্রচার চালান।
আজ বৃহস্পতিবার ভোরে মা লিমা বেগমকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ এই তথ্য জানিয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় তাকে আদালতে নেওয়া হচ্ছে। আশুগঞ্জ থানার ওসি আজাদ রহমান জানান, নিহত দুই শিশুর বাবা ইসমাইল হোসেন বাদী হয়ে লিমা বেগম ও তার পরকীয়া প্রেমিক সফিউল্লার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
পুলিশের আরেকটি সূত্র জানায়, লিমা আশুগঞ্জের একটি চালকলে কাজ করেন। আর তার স্বামী কাজ করেন ইটভাটায়। চালকলে কাজ করার সুবাদে আরেক শ্রমিক সফিউল্লার সঙ্গে লিমার পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। তারা বিয়ে করারও সিদ্ধান্ত নেয়।
সূত্রটি জানায়, পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে মিষ্টির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে দুই শিশু ইয়াছিন ও মোরসালিনকে খাইয়ে হত্যা করে মা লিমা বেগম। মৃত্যুর ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য নাপা সিরাপের রিঅ্যাকশন হয়েছে বলে প্রচার করে।
১০ মার্চ আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের ইসমাঈল হোসেনের দুই ছেলে ইয়াছিন ও মোরসালিন নাপা সিরাপ খেয়ে মারা যায় বলে অভিযোগ তোলেন স্বজনরা। এ নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় হয়।
এর আগে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সব বিভাগীয় এবং জেলা কার্যালয়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের স্ব-স্ব নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় অবস্থিত পাইকারি ও খুচরা ফার্মেসি পরিদর্শন করে নমুনা পরীক্ষা ও বিশ্লেষণ করে ন্যাশনাল কন্ট্রোল ল্যাবরেটরিতে প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১১ মার্চ দেশের বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে জানা যায়, মেসার্স বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস কর্তৃক উৎপাদিত নাপা সিরাপ (প্যারাসিটামল ১২০মিগ্রা./৫ মি.লি. ব্যাচ নং- ৩২১১৩১২১, উৎপাদন তারিখ: ১২/২০২১, মেয়াদ উত্তীর্ণ তারিখ: ১১/২০২৩) নামীয় ওষুধটি সেবন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে একই পরিবারের ২ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
কিন্তু ঐ দুই শিশুর মাকে গ্রেপ্তারের পর জানা গেল ঘটনা অন্য।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।