জুমবাংলা ডেস্ক: নদীবেষ্টিত জেলা বরিশালে ভাসমান বেডে বিষমুক্ত সবজি চাষ এনে দিয়েছে সমৃদ্ধি। এতো দিন জলাবদ্ধ যে জমি ছিলো প্রান্তিক কৃষকের গলার কাঁটা, তা বর্তমানে নতুন করে দেখাচ্ছে স্বপ্ন। মাটি ছাড়া ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি ও মসলার ব্যাপক উৎপাদনের খবর ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিদিন আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে ভীড় করছেন আগ্রহী প্রান্তিক কৃষকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিভাগের তিন জেলা বরিশাল, পিরোজপুর ও ঝালকাঠির অন্তত ৩ লাখ হেক্টর নিচু জমি বছরের অর্ধেকটা সময় বর্ষার পানিতে তলিয়ে থাকে। স্থানীয়রা জলাবদ্ধ এসব জমিতে কচুরীপানার বেড তৈরি করে বিভিন্ন জাতের সবজীর চারা উৎপাদন করেন। এইসব ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ করতে সম্প্রতিক বর্তমান সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্প হাতে নেয়।
বরিশাল আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তত্বাবধানে এই অঞ্চলের বিভিন্ন জলাশয়ে ভাসমান বেড তৈরি করে পরীক্ষামূলকভাবে বিষমুক্ত লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শসা, টমোটেসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করছেন কৃষকরা। এসব ভাসমান বেডে বিষমুক্ত সবজি ও মসলা চাষ সাফল্যও পেয়েছেন একাধিক প্রান্তিক কৃষক। মাঠ পর্যায়ে এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ এই অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই প্রকল্পের আওতায় তিন জেলার একাধিক উপজেলায় ভাসমান বেডে বিভিন্ন জাতের সবজি ও মসলা চাষ করা হয়েছে।
জেলার উজিরপুর উপজেলার সাতলার নয়াকান্দি, শিবপুর, রাজাপুর, উত্তর সাতলা, পটিবাড়ী গ্রামের প্রান্তিক কৃষকেরা ভাসমান সবজি চাষে ইতিমধ্যে সমৃদ্ধি এনেছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় প্রান্তিক কৃষক আবুল হোসেন, সোহাগ ব্যপারী ও মনির কাজী বলেন, এখানে আমরা চলতি বছর পানির মধ্যে ভাসমান বেড তৈরী করে লাউ, কুমড়া, করলা, জালি কুমার, শশা, টমেটোসহ বিভিন্ন সবজি উৎপাদন করছি। এতে আমারা পারিবারিকভাবে অনেক স্বাবলম্বী হয়েছি। বর্তমানে আমরা অথনৈতিকভাবেও অনেক লাভবান হয়েছি।
নগরীর স্টিমার ঘাট (সিটি মার্কেট)-এর পাইকারী সবজি বিক্রেতা সোহরাফ আলী বলেন, বরিশাল সদর, গৌরনদী, উজিরপুর,বানরীপাড়া, আগৈলঝাড়া, বাকেরগঞ্জ ও আশপাশের পাইকারি ব্যবসায়ীরা আগে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সবজি আনতেন। বর্তমানে শীত মৌসুমে উজিরপুরের গুঠিয়া, জল্লা, বামরাইল, হারতায় উৎপাদিত সবজি দিয়ে চাহিদা পূরণ করা হয়। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে একমাত্র সাতলার ভাসমান সবজিই ভরসা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মোসাম্মৎ মরিয়ম জানান, ২৫-৩০ বছর আগে থেকে এসব এলাকায় সামান্য পরিমাণে ভাসমান বেডে বিষমুক্ত সবজি চাষ হতো। মুলত ২০১০ সালের পরে এই সবজি চাষের ব্যাপকতা লাভ করে। পরে ‘ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ ও পরিবেশ বান্ধব কৌশলের মাধ্যমেও আমরা সবজি উৎপাদনে প্রান্তিক কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। এছাড়াও জৈব বালাইনাশক বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করা হচ্ছে। বর্তমানে চাষির সংখ্যা অনেক বেড়েছে।
বরিশাল আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে’র মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. বিমল চন্দ্র কুন্ডু জানান, পরীক্ষামূলকভাবে ভাসমান বেডে সবজি ও মসল্লা চাষ (সেইফ ফুড) করে কৃষকরা অনেক স্বাবলম্বী। আমার প্রান্তিক কৃষকের মধ্যে যেই প্রশিক্ষণগুলো দিচ্ছি তা কৃষকরা প্রয়োগ করলে এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে বেশ ভাল প্রভাব পড়বে বলে আশা করা যায়।
–বাসস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।