বিনোদন ডেস্ক : বুকের দিকে নজর দেওয়া বন্ধ হলে যা করবেন শ্রীলেখা। ২০১২ সালে পরিচালক লিনা এস্কো ‘ফ্রি দ্য নিপ্ল’-এর প্রচার শুরু করেন। এই একই নামে একটি তথ্যচিত্রও বানান তিনি। নিজের শরীরের উপরে নিজের অধিকার, লিঙ্গবৈষম্যের বিরোধিতা, পোশাক পরা বা না পরার অধিকার নিয়ে কথা বলা শুরু হয় খোলাখুলি। পাশ্চাত্যে সেই চিত্র বারবার ফুটে ওঠে। সম্প্রতি ‘এমিলি ইন প্যারিস’ ওয়েব সিরিজের বর্ষীয়ান ফরাসি অভিনেত্রী ফিলিপাইন লেরয় বিউলিউ প্যারিস ফ্যাশন উইকে তেমনই বক্তব্যের প্রচার করলেন।
ব্রা না পরে স্বচ্ছ কালো পোশাকে ক্যামেরার সামনে এসে দাঁড়ান তিনি। অভিনেত্রীর শরীরের সমস্ত ভাঁজ স্পষ্ট তাঁর পোশাকের বাইরে থেকে। এর আগে মাইলি সাইরাস এবং কেন্ডল জেনারও একই ভাবে নিজেদের শরীরের প্রতি অধিকারের কথা বলেছিলেন। ভারতে সম্প্রতি টিনসেল টাউনে মালাইকা অরোরা পোষ্যকে নিয়ে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন ব্রা না পরে। গোলাপি হুডির বাইরে দিয়ে তাঁর ‘নিপ্ল’ (স্তনবৃন্ত) স্পষ্ট হওয়ায় কটাক্ষের শিকার হতে হয়েছে তাঁকে। টলিউডে সেই প্রভাব পড়বে? কী ভাবছেন কেতাদুরস্ত টলি অভিনেত্রীরা?
অভিনেত্রী অনিন্দিতা বসুর সঙ্গে যোগাযোগ করল আনন্দবাজার অনলাইন। অনিন্দিতা আলাদা করে ব্রা না পরা নিয়ে কোনও আন্দোলন শুরু করতে চান না। তার কারণ, তিনি নিজে ব্রা ছাড়া পোশাক পরায় স্বাচ্ছন্দ্য নন। কিন্তু যাঁরা প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে চাইছেন, তাঁদের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা জানালেন অনিন্দিতা। তাঁর কথায়, ‘‘তবে আমি মনে করি, আমি যে নারীবাদী, তা প্রমাণ করার দরকার নেই কারও কাছে। ব্রা পরা বা না পরা নিয়ে আসলে কথা বলাটাই উচিত নয়। কারণ বিষয়টাকে মানুষের চোখে স্বাভাবিক করে তুলতে হবে। ব্রা না পরে কেউ রাস্তায় গেলে সেটা যে বিশেষ কোনও ব্যাপার, এই ধারণা থেকে মুক্ত হতে হবে মানুষকে।’’ কিন্তু ভারতে এই মনোভাবকে বিদায় দেওয়া খুব সহজ নয় বলে মত তাঁর।
অনিন্দিতা জানালেন, বেশ কিছু অনুষ্ঠানে তিনি ব্রা ছাড়া পোশাক পরে গিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও প্রকার বক্তব্য তৈরি করার জন্য নয়। যে পোশাকের সঙ্গে ব্রা পরা যায় না, সেই সেই ক্ষেত্রে তিনি ব্রা-কে নিজের শরীর থেকে বাদ রেখেছেন। কিন্তু এমন ভাবেই সেই পোশাককে সামলেছেন, যাতে বাইরের মানুষের নজরে না পড়ে। পোশাকের প্রয়োজনে আবারও একই ভাবে সাজতে পারেন অনিন্দিতা।
শ্রীলেখার মতে, কেবল স্তন আড়াল করার জন্য ব্রা পরা হয় না। শারীরিক গঠনকে ঠিক রাখতেও ব্রা পরে মহিলারা। যদিও তিনি নিজে ব্রা না পরে রাস্তায় বেরোতে চান না। কিন্তু বাড়িতে ব্রা ছাড়া থাকতেই অভ্যস্ত তিনি।। শ্রীলেখা বললেন, ‘‘যদি আমাদের দেশে মহিলাদের বুকের দিকে তাকানো বন্ধ হয়, তা হলে হয়তো আমিও ভেবে দেখব। কিন্তু হঠাৎ আন্দোলন করতে হবে বলে ব্রা না পরে রাস্তায় বেরিয়ে যাব না আমি। ব্রা না পরা তো দূরের কথা, সরু ফিতের পোশাক পরে একটা রিল করেছিলাম, তাতে এক মহিলা আমাকে উদ্দেশ্য করে লেখেন, ‘ওটাও খুলে ফেলো’। তাই আমার চারপাশটা দেখলে ও রকম কোনও পদক্ষেপ করতে ইচ্ছে করে না।’’
শ্রীলেখা জানালেন, সব সময়ে ব্রা পরে থাকাও যায় না। কষ্ট হয় শরীরে। মাঝে মাঝে খুলে রাখতে ইচ্ছে করে। কিন্তু সমাজের মানসিকতার জন্যই সেটা করা যায় না।
শ্রীলেখা বললেন, ‘‘কালীদাস থেকে শুরু করে মকবুল ফিদা হোসেন, শিল্পীদের শিল্পে বারবার নারী শরীরকে পুজো করা হয়েছে প্রকৃতি হিসেবে। কিন্তু লালসার নজরে দেখাটাই সমস্য়াজনক। কেউ তো কারও শরীরের প্রশংসাও করতে পারে। কোনও নারীর বক্ষযুগল সুন্দর বললে তো কোনও দোষ নেই। কিন্তু লালসার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসাটাই আসল। সেখানেই পাশ্চাত্যের সঙ্গে তুলনা করলে চলবে না আমাদের। ওরা যত সহজে ব্রা ছাড়া বেরোতে পারে, আমরা পারি না। ওই একটি কারণে।সেখানে পৌঁছতে অনেক সময় লাগবে। মনোভাবের সার্বিক পরিবর্তন প্রয়োজন। এ দেশে যে দিন সেটা সম্ভব, তত দিন হয়তো আমরা কেউ বেঁচে থাকব না।’’
দুই নায়িকার আশা, কোনও না কোনও দিন এই দেশেও মেয়েরা ব্রা না পরে হাঁটবে এবং কয়েক জোড়া চোখ তাঁদের বুকের দিকে তাকিয়ে থাকবে না। কিন্তু কবে? উত্তর অজানা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।