বছরখানেকের মধ্যে শিশুদের যে দাঁত ওঠে, তাকে বলি ‘দুধদাঁত’। কয়েক বছরের মধ্যে সেই দাঁত পড়ে যায়, নতুন দাঁত ওঠে। এই দাঁতই প্রায় বুড়ো বয়স পর্যন্ত থাকে। অবশ্য এর আগে ক্যাভিটি (চলতি ভাষায় দাঁতে পোকা ধরা) বা অন্য কোনো রোগে দাঁত পড়ে যেতে পারে। সাধারণত, এরপর আর নতুন দাঁত ওঠে না।
তখন আমরা দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাই। কৃত্রিম দাঁত লাগাই। কিন্তু বুড়ো বয়সে স্বাভাবিকভাবে দাঁত পড়ে যাওয়ার পর অনেকে হয়তো আর কৃত্রিম দাঁত নেন না। অবশ্য বেশি বয়স বাঁচলে দু-একজনের দু-একটা নতুন দাঁত উঠতেও পারে। কিন্তু সেটা ব্যতিক্রম। সাধারণত, দ্বিতীয়বারের পর আর নতুন দাঁত ওঠে না। এ অবস্থায় অনেকে দুই পাটি কৃত্রিম দাঁত নিয়ে থাকেন। প্রশ্ন হলো বুড়ো বয়সে কেন দাঁত পড়ে? এর সহজ উত্তর হলো বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শুধু দাঁতই পড়ে না, দৃষ্টিশক্তিও কমে। কানে কম শোনেন অনেকে। চুল সাদা হয় বা মাথায় টাক পড়ে। গায়ের চামড়ায় ভাঁজ পড়ে। এগুলো সবই হলো আমাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কোষ ও স্নায়ুতন্তুর ক্ষয়ের কারণে।
বুড়ো বয়সে দাঁত পড়ার একটি কারণ হলো মাড়ির অস্থি ও স্নায়ুর ক্ষয়। স্নায়ুতন্তু সংকুচিত হয়ে আসে। এ কারণে দাঁত নড়বড়ে হয়ে যায়। দাঁতের গোড়া শিথিল হয়। সেই ফাঁকফোকরে খাদ্যকণা আটকে থাকে। দাঁতে ক্যাভিটি হয়। তখন দাঁত পড়ে। দাঁতের চিকিৎসায় অবশ্য পোকা ধরা দাঁত কিছুদিন পর্যন্ত কৃত্রিম উপায়ে টিকিয়ে রাখা যায়। শেষ পর্যন্ত প্রায় ক্ষেত্রেই দাঁত ভেঙে যায়।
কিন্তু প্রথম থেকেই দাঁতের যত্ন নিলে হয়তো বহু বছর পর্যন্ত দাঁত টিকিয়ে রাখা সম্ভব। দুটি সহজ উপায় আছে। প্রথমত, প্রতিদিন রাতে খাবার খাওয়ার পর দাঁত ফ্লসিং করে ব্রাশ করা। ফ্লসিং হলো প্রতিটি দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে পরিষ্কার সুতা দিয়ে ওপর-নিচ ঘষে খাদ্যকণাগুলো বের করে ফেলা। অবশ্য মনে রাখতে হবে, সুতা যেন পরিষ্কার হয়, কোনো ব্যাকটেরিয়া বা ময়লা না থাকে। এটা খুব সহজ ব্যাপার। প্রয়োজনে ওষুধের দোকান থেকে ‘ডেন্টাল ফ্লস’ কিনে সেই সুতা ব্যবহার করা চলে। এরপর দাঁত ব্রাশ করলে দাঁতে ক্যাভিটির ভয় কমে যায়।
দ্বিতীয়ত, প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে, নাশতার আগেই আরেকবার দাঁত ব্রাশ করা। এর ফলে মুখে রাতে যদি অল্পস্বল্প ব্যাকটেরিয়া থেকেও যায়, তাহলে তা সমূলে বিনষ্ট হবে। ব্যাকটেরিয়াগুলো সারা রাত অপেক্ষা করে কখন সকাল হবে আর ওরা কিছু খাবার খাব। তাহলেই তাদের পোয়াবারো। খাদ্যকণা খেয়ে ওরা ক্রমাগত বংশ বিস্তার করে। আর প্রচুর অ্যাসিড বেরোয়। এই অ্যাসিড দাঁতের এনামেল ক্ষয় করে। এর কারণে দাঁত পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। এ জন্যই আমরা ছোটবেলা থেকে শিখেছি, ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই দাঁত ব্রাশ করাতে হয়।
সারা দিন জেগে থাকার সময় আমরা কথা বলি, মুখে প্রচুর লালা বের হয়। এই লালা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। কিন্তু রাতে মুখ বন্ধ থাকে। লালা বেশি বেরোয় না। তাই রাতে ঘুমের আগে যদি দাঁত ব্রাশ না করি, তাহলে মুখে খাদ্যকণায় প্রচুর ব্যাকটেরিয়া জমবে এবং সারা রাতে প্রচুর অ্যাসিড বের হয়ে দাঁত ক্ষয় করবে। এ জন্যই রাত ও সকালে দাঁত ব্রাশ করলে দাঁত ভালো থাকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।